বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচন বিএনপির ফিরে আসা অসম্ভব নয়

বিরোধীরা ভয় পেয়ে মাঠ ছাড়লে খেলায় ওয়াকওভার পাওয়ার মতো ভোটেও ঝামেলা থাকে না

 |   Long-form |   22-12-2018
  • Total Shares

বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। কী হবে এই নির্বাচনের ফলাফল? ছবিটা এখনও খুব স্পষ্ট নয়, ভোটের ফল কী হবে তা নিয়ে ভোট-পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণীও প্রায় মেলে না কোনও কালেই। তবে যা পরিস্থিতি, তাতে মনে হচ্ছে দুই জোটের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

লড়াইয়ের আগে বাংলাদেশ যতটা উত্তপ্ত, অশান্ত নির্বাচনে এবং তার পরবর্তী সময়ে রক্তপাত, প্রানহানি বাড়বে। ইতোমধ্যে সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

bangla_elections-reu_122218035135.jpgবাংলাদেশে নির্বাচন আসন্ন (ফাইল চিত্র: রয়টার্স)

কী ঘটছে বাংলাদেশে

ভোটের প্রচার শুরু হওয়ামাত্র সে দেশের সর্বত্রই ঘটে চলেছে হিংসা আর হানাহানি।  দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রচারের প্রথম দিনই দু’জনের প্রাণহানি হয়েছে। ওই দু’জন  ক্ষমতাসীন দলের সদস্য হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আক্রমণের লক্ষ্য বিরোধী দল। হামলার পাশাপাশি বাড়ছে হুমকি ও উসকানির ঘটনা। সব মিলিয়ে একটা ভীতির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সে দেশে।

বিরোধীদের উপর হামলা চলতে থাকলে তারা যদি আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরোধ করে, তাহলে যে রক্তপাত বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। হামলার উদ্দেশ্য সে কারণেই; যাতে উসকানিতে পা দেওয়া বিরোধী প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করা যায় এবং সহজে ধরপাকড় করা যায়। এছাড়া বিরোধীরা যদি ভয় পেয়ে মাঠ ছাড়ে তাহলে খেলায় ওয়াকওভার পাওয়ার মতো ভোটেও লড়াইয়ের ঝামেলা চুকে যায়। বাংলাদেশে এ সবই পুরোনো কৌশল।

সরকার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন এ সব খুব ভালই জানে। নির্বাচন কমিশন  প্রাণহানির ঘটনায় বিব্রত হয়ে সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী আর তাঁদের সমর্থকদের আচরণবিধি মানার আগে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ আইনসম্মত হওয়া দরকার। ‘বড় নির্বাচনে ছোট হিংসা হতেই পারে’ – খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যই তো হিংসা-হামলাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজের এলাকাতেই বাম জোটের প্রার্থী হামলার শিকার হয়েছেন।

জনমনে চাপ বাড়ছে

বিরোধী প্রার্থীরা নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরাপত্তা চাইছেন। নিজেদের এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা না পাওয়ায় তাঁদের ঢাকার আগারগাঁওয়ে কমিশনের কার্যালয়ে ধরনা দিতে হচ্ছে। শাসকদলের সমর্থকরা বিরোধী শিবিরকে ভীত সন্ত্রস্ত করার পাশাপাশি আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছে গোটা বাংলাদেশে। সমাজের নানা অংশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু) থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে সন্ত্রাস। কারণ সরকারি দলের অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা।

একটা লম্বা সময় কোণঠাসা হয়ে থাকা বিএনপি অপ্রত্যাশিতভাবে বৃহত্তর জোট গঠনের মাধ্যমে ফিরে আসায় ক্ষমতাসীন দল কিছুটা অপ্রস্তুত। জনাদেশ দেওয়ার প্রাকমুহূর্তে সেই জনমনকে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পারলে নিঃসন্দেহে লাভবান হবে ক্ষমতাসীন দল। কেননা তাতে ভোটাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোটের প্রচার শুরুর পর শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৪৫টি জেলায়। বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেটা পুলিশের উপস্থিতিতেই। প্রায় সব প্রচারেই মাইক ভাঙচুর, হামলার মতো ঘটনা ঘটছে, চলছে গণগ্রেফতার। বাংলাদেশের প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এই পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা দুরূহ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন।

khaleda-zia-reuters_122218035309.jpgএখনও জেলে রয়েছেন বেগম খালিদা জিয়া (ফাইল চিত্র: রয়টার্স)

বিএনপি-র ফেরা সম্ভব

বিএনপিতে নেতৃত্বের সঙ্কট ছিল। আপাতত ড. কামাল, এএসএম আব্দুর রব, কাদের সিদ্দিকি ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে জোট গঠন হওয়ার পর এখন অনেক চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন জেলে, তারেক জিয়াও অনেকটা নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন লন্ডনে। তাঁদের দু’জনের অনুপস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরের নেতৃত্বে দল এগিয়ে চলেছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে তার প্রভাব পড়ত নির্বাচনের ফলাফলে।

হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছে

আওয়ামী লিগ টানা দশ বছর ক্ষমতায়। সুতরাং তাদের যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে তেমনি প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার মতো বিষয়ও রয়েছে। টানা ক্ষমতা থাকার কারণে তারা স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সম্মুখীন হবে। আওয়ামী লিগের বহু নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-ঋণখেলাপির অভিযোগ রয়েছে।

কিন্তু গত দুই সংসদের সাংসদরাই আওয়ামি লিগের প্রার্থী। তারা গত দশ বছর ধরে  এলাকার সব ব্যাপারের সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবেও পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছেন। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত প্রার্থী তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করার কথা নয়।

হাসিনার জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন নেই ঠিকই তবে বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে তাঁর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জমেছে বেশ কিছুকাল ধরে। বাংলাদেশের ছোট বড় সব ধরণের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন তোলেন সচেতন মানুষ। সাধারণ একটি রাস্তা কিংবা বাঁধ নির্মাণএ এত টাকা ব্যয় তো উন্নত দেশেও হয় না!

বাংলাদেশের নির্বাচন-চিত্র

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দু’টি ছিল একতরফা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের আমলে এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামি লিগ সরকারের আমলের নির্বাচন। এ ছাড়া ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লিগ, বিএনপি এবং আরও কয়েকটি দল যোগ দেয়নি।

উল্লেখ করতে হয়, বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের আমলে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, বিচারপতি মহম্মদ হাবিবুর রহমান সরকারের ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচন, বিচারপতি লতিফুর রহমান সরকারের ২০০১ সালের নির্বাচন এবং ফখরুদ্দিন আহমদ সরকারের ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের কথা। এই সময়কাল বাংলাদেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের আমল বলে পরিচিত।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে খন্দকার মোশতাক অধ্যাদেশ জারি করে বহুদলীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তবে চতুর্থ সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার কারণে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির হাতেই ছিল একক ক্ষমতা। ১৯৯১ সালে ষষ্ঠ সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে পুনরায় সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যবস্থা এখনও চলছে।

বিগত ফলাফল এক নজরে

৩৫০ আসনের বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। সরাসরি নির্বাচন হয় ৩০০ টি আসনে, তারপরে নির্বাচিত সাংসদদের ভোটে নির্বাচিত হন ৫০ জন মহিলা সাংসদ।

বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চারটি নির্বাচনেই আওয়ামী লিগ এই ২৭টি আসনে প্রতিবারই জয়ী হয়েছিল। আসনগুলি হল: দিনাজপুর-৫, সিরাজগঞ্জ-১, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-৩, পটুয়াখালী-৪, টাঙ্গাইল-১, জামালপুর-৩, ময়মনসিংহ-১০, কিশোরগঞ্জ-৫, গাজীপুর-১, ফরিদপুর-১, গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, মাদারীপুর-৩, শরিয়তপুর-২, শরিয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভিবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৪ ও পার্বত্য বান্দরবান। লক্ষ্যণীয় আসনগুলির এক-তৃতীয়াংশই বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায়। আর ১৫টি ফরিদপুর-সহ দক্ষিণবঙ্গে। এই আসনগুলিতে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও আওয়ামি লিগ জিতেছিল।

অন্যদিকে ওই চারটি নির্বাচনে প্রতিবারই বিএনপি জয়ী হয়েছিল এই ১৮টি আসনে: জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, বরিশাল-৫, কুমিল্লা-২, চাঁদপুর-৪, ফেনী-১, ফেনী-৩, নোয়াখালি-১, নোয়াখালি-২, নোয়াখালি-৩, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি আসনে জয়ী হয়েছিল, যেটা ছিল তাদের সবথেকে কম আসনের জয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ঢাকা ও সিলেট বিভাগের ৯৪ ও ১৯টির মধ্যে ১টি আসনও পায়নি। তবে ওই ভরাডুবি সত্ত্বেও বিএনপির আওয়ামি লিগের থেকে মাত্র আটটি কম আসনে একটানা জিতেছিল।

লক্ষ্যণীয়, নির্বাচনে বিএনপির এই জয়গুলি এসেছিল মূলত বৃহত্তর বগুড়া, বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালি থেকে। একই সময়ে জাতীয় পার্টি সাতটি আসনে একটানা জিতেছিল। সেই আসনগুলি হল: লালমনিরহাট-২, রংপুর-১, রংপুর-২, রংপুর-৩, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-২ ও গাইবান্ধা-৩। লক্ষণীয় যে জাতীয় পার্টির একটানা জেতা আসনের সব কটিই বৃহত্তর রংপুরের।

বাংলাদেশের নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামি লিগের তুলনামূলক জয়-পরাজয় বিশ্লেষণের জন্য ভোটের ফলাফলগুলিকে আরও একটু নেড়েচেড়ে দেখা দরকার।

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪টি নির্বাচনে একটানা চারবারই ২৭টি আসনে জেতার ছাড়াও আওয়ামি লিগ ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার নড়াইল-১, ফরিদপুর-৫ ও চট্টগ্রাম-৪ এই তিনটি আসনেও জয়ী হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের সময় ফরিদপুর-৫ আসনটি বিলুপ্ত হয়।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপি যে ৫৪টি আসনে একটানা তিনবার জয়ী হয়েছিল সে আসনগুলি হল: পঞ্চগড়-১, বগুড়া-১, বগুড়া-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, নওগাঁ-৩, নওগাঁ-৬, রাজশাহী-১, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৫, নাটোর-১, সিরাজগঞ্জ-৩, কুষ্টিয়া-১, কুষ্টিয়া-২, কুষ্টিয়া-৩, চুয়াডাঙ্গা-১, ঝিনাইদহ-২, ঝিনাইদহ-৩, ঝিনাইদহ-৪, বরিশাল-৩, টাঙ্গাইল-৩, টাঙ্গাইল-৬, ময়মনসিংহ-৫, কিশোরগঞ্জ-৬, মানিকগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সিগঞ্জ-১, মুন্সিগঞ্জ-২, মুন্সিগঞ্জ-৩, মুন্সিগঞ্জ-৪, ঢাকা-১, ঢাকা-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৭, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, নরসিংদী-১, নরসিংদী-২, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৩, ফরিদপুর-৩, ব্রাহ্মণবেড়িয়া-৩, কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-৪, কুমিল্লা-৮, চাঁদপুর-৩, চাঁদপুর-৬, নোয়াখালী-৪, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-৮, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১১ ও চট্টগ্রাম-১৩। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সময় মুন্সিগঞ্জ-৪ ও চাঁদপুর-৬ আসন দুটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একটানা তিনবার ছ’টি  আসনে জয়ী হয়েছিল। সেই আসনগুলি হল: রংপুর-৪, রংপুর-৫, রংপুর-৬, কুড়িগ্রাম-৪, গাইবান্ধা-৫ ও ফিরোজপুর-২। একটানা তিনবার জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রেও জাতীয় পার্টির প্রাধান্য বৃহত্তর রংপুরে ছ’টি আসনের মধ্যে মাত্র একটি, পিরোজপুর-২, বৃহত্তর রংপুরের বাইরে।

hasina-reuters_122218035354.jpgপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও জেলে রয়েছেন বেগম খালিদা জিয়া (ফাইল চিত্র: রয়টার্স)

উল্লেখ্য, ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আসনে তিনবার একটানা জিতেছিল, আসনটি ছিল সাতক্ষীরা-২। জামায়াত ১৯৯১ সালে ১৮টিতে, ১৯৯৬ সালে ৩টিতে, ২০০১ সালে ১৭টিতে এবং ২০০৮ সালে মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়েছিল। ২০০১ ও ২০০৮ সালে জামায়াত চারদলীয় জোটের অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে যৌথ ভাবে নির্বাচন করেছিল।

নির্বাচনের ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে আওয়ামি লিগ ৩০টি আসনে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ২০০৮ সালে আওয়ামি লিগ এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান অর্জন করেছিল জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের অন্য সহযোগীদের সমর্থনে। আওয়ামি লিগের এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান বহুলাংশেই গোপালগঞ্জ-সহ দক্ষিণবঙ্গে। অন্যদিকে বিএনপিও প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী ৭২টি আসনে। তবে ২০০১ ও ২০০৮ সালে তাদের শক্তি জুগিয়েছিল জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে জোট। তাদের জনসমর্থন অবশ্য জেলায় বেশি।

পাল্লা ঝুঁকে নেই

অতীতের এই ফলাফল থেকে যদিও দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনগুলিতে আওয়ামি লিগ বিএনপির তুলনায় একটানা চারবার বেশি আসনে জিতেছে। জাতীয় পার্টির আসন যোগ করলে আওয়ামি লিগ-জাতীয় পার্টির একটানা চারবার জেতা আসনের সংখ্যা দাঁড়ায় বিএনপির প্রায় দ্বিগুণ—৩৪ বনাম ১৮। এর সঙ্গে একটানা তিনবার জেতা আসনের সংখ্যা যোগ করলে বিএনপি ও তার জোট দলের থেকে আওয়ামি লিগ ও তার জোট দলকে অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হয়—তাদের তুলনামূলক আসনসংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ৭৪ ও ৪৩।

অতীতের ফলাফলে দিয়ে আগামী নির্বাচনে কি হবে তা বলা খুবই মুশকিল কারণ, গত ১০ বছরে পদ্মা-মেঘনা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। ব্যাপক জনসমর্থন সত্ত্বেও বিএনপিকে ব্যাপক চাপে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ। হাসিনা ফিরে আসতে মরিয়া, প্রয়োজনে তার আক্রমন আরও তীব্র হবে। চরম নেতৃত্ব-সঙ্কট থেকে বিএনপি সামান্য হলেও মাথা তুলেছে। গত ১০ বছরের মামলা ও গ্রেফতারের কারণে তারা ক্ষমতাসীনদের তুলনায় দুর্বল তো বটেই।

কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের হাসিনার সরকারের উপর ক্ষোভ রয়েছে। সেই চাপা ক্ষোভকে যদি তারা কাজে লাগাতে পারে তবে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন তারা আদায় করতে পারবে। অবশ্যি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন যদি হয়। সেটা হওয়ার সম্ভবনা খুব কম। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে  ব্যাপক জনসমর্থন আদায় করাটা কঠিন কাজ। বিএনপি লড়াইয়ের ময়দানেই রয়েছে, মারও খাচ্ছে, এই অবস্থাকে বিএনপি কতখানি তাদের পক্ষে টেনে আনতে পারবে, তা এখনই বলা কঠিন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

TAPAN MALLICK CHOWDHURY TAPAN MALLICK CHOWDHURY

The writer is a journalist.

Comment