ভারত ও নেপাল কেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করতে মরিয়া
প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির ভারত সফর থেকেই পরিষ্কার যে দু'দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল হচ্ছে
- Total Shares
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ফের মজবুত করতে নেপাল ও ভারত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি শর্মা প্রথম বিদেশ সফর হিসাবে নয়া দিল্লিতেই বেছে নেন। ভারতও লাল কার্পেট বিছিয়ে দিয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবার জন্য তৈরিই ছিল। ওলির সফর শেষে একটা কথা পরিষ্কার, দু'দেশের সম্পর্ক আবার স্থিতিশীল হতে চলেছে।
নতুন প্রস্তাব
রক্সৌল ও কাঠমান্ডুর মধ্যে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর প্রস্তাবে সই খুবই উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতে এই লাইনটির সঙ্গে লাসা পর্যন্ত নির্মিত চিনের রেললাইনের সঙ্গে সংযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে।
তবে এর চেয়েও গুরত্বপূর্ণ বেশ কিছ ছোট ছোট রেল সংযোগ - জয়নগর ও জনকপুর অবধি ২৮ কিলোমিটার রেললাইন এবং যোগবনি থেকে বিরামপুর অবধি বিস্তৃত ১৮ কিলোমিটার রেললাইন। এই দুটি প্রকল্পই এ বছরের শেষে সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। জয়নগর জনকপুর লাইনটিকে বর্দিবাস অবধি বিস্তৃত করবার প্রস্তাব রয়েছে যেখান থেকে সরাসরি ভারতে আসার ট্রেন পাওয়া যাবে। ভারতের তরফেও এ ধরনের বেশ কয়েকটি ছোট ছোট রেললাইন চালু করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন জিতে তিনি যে নয়া দিল্লিকে কী পরিমাণ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন সে সম্পর্কে ওলি নিজেও হয়ত খুব একটা ওয়াকিবহাল নন। তবে ২০১৫ সালর অভিজ্ঞতা তিনিও কোনওদিনও ভুলতে পারবেন না। সে দেশে ক্ষমতায় থাকতে হলে ভারতেরও প্রয়োজন রয়েছে তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।
এই নেপালি নেতা এখন বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। সে দেশের দুই জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এক হওয়ায় বাঁধায় নতুন দলের জন্ম হয়েছে। আর সেই নতুন দল বিরোধীদের উড়িয়ে দিয়ে ২০১৭ সালে নেপালে ক্ষমতা দখল করেছে।
রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে ১৪ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন ওলি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ভাগ্য খারাপ। কারণ শুরুতেই তিনি ভারতের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। নেপালের সংবিধানে মধেসিদের অধিকার নিয়ে যে সংশোধন আনা হয়েছে তার তীব্র বিরোধিতা করে নেপালের বিরোধী দলগুলো। ভারতও সেই বিরোধিতায় শরিক হয়। ২০১৫ তে এই সংবিধানকে হাতিয়ার করেই ওলি প্রধানমন্ত্রী হন এবং সঙ্গে সঙ্গে এই বিরোধী আন্দোলনও দানা বাঁধতে শুরু করে।
নয়া দিল্লির বোঝা উচিৎ নেপাল আমাদের জন্য কতটা গুরত্বপূর্ণ
চিনের সঙ্গে সম্পর্ক
হাজার বিরোধিতা সত্ত্বেও ওলি তাঁর অবস্থান থেকে সরতে চাননি ওলি। উল্টে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে তিনি চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ও পণ্য পরিবহণ চুক্তি সই করেন। এর ঠিক ন'মাসের মাথায় ভারতের চাপে যখন প্রচণ্ডর মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ওলির সরকারের উপর থেকে তাদের সমর্থন তুলে নিলে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়।
তবে খুব শীঘ্রই ওলি আবার প্রচণ্ডর সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে ২০১৭ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সংসদের ২৭৫টি আসনের মধ্যে ১৭৪টি আসনে জয়লাভ করে প্রচণ্ড-ওলির দল। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ওলি। ভারতের মতোই চিনও নেপালের প্রতিবেশী। তাই ভারতের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য নেপালের চিনের শরণাপন্ন হওয়াই তো স্বাভাবিক।
নয়া দিল্লিরও বোঝা উচিৎ যে ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলো এই নিয়মেই চলে। ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল চুক্তিতে বলা হয়েছে যে ভারতে নেপালিদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সমান অধিকার থাকবে, যেমন বেসরকারি চাকরি কিংবা সম্পত্তি ক্রয় করবার ক্ষেত্রে। ৬০ লক্ষ নেপালি কর্মসূত্রে ভারতে আছেন। ভারত তো নেপালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাণিজ্যিক কেন্দ্র। নেপালের বিদেশি বিনিয়োগের সিংহভাগটাই তো ভারত থেকে যায়।
তবে নেপালের অনেকেই ভারতের উপর এই নির্ভরশীলতা ভালো চোখে দেখেন না। উল্টোদিকে ভারত মনে করে যে ভারত নেপালকে যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে নেপাল তার যোগ্য প্রতিদান দেয়নি। দু'দেশের সম্পর্ক ভাঙনের এটি কিন্তু অন্যতম কারণ।
দু'দেশের ইতিহাস
ভারত ও নেপালের মধ্যে ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক ও ইতিহাসের যে সম্পর্ক আছে বিশ্বের আর কোনও দুটি দেশের মধ্যে এই সম্পর্ক এতটা নিবিড় নয়। ভৌগোলিক ভাবে নেপালের সীমান্তের বড় অংশই ভারত ঘিরে রয়েছে। তাই নয়া দিল্লিরও বোঝা উচিৎ দেশটা আমাদের জন্য কতটা গুরত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য নয়, সার্বিক ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
নেপাল থেকে উৎপন্ন হওয়া বেশ কয়েকটি নদী গঙ্গায় এসে মিশেছে। ভারতের জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করবার জন্য এই নদীগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই তো ওলির সফরের পরে দুটি দেশেরই উচিৎ যতটা দ্রুত সম্ভব দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করা।
আপনি চান বা না চান, নেপালে চিনের প্রভাব কিন্তু উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে লাভ নেই। নেপাল হোক বা শ্রীলঙ্কা, আমাদের বোঝা উচিৎ যে ভারত ছাড়াও আর পাঁচটা দেশের সঙ্গেও তাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং, এটাই স্বাভাবিক। কোনও দেশই এমন কোনও পদক্ষেপ করবে না যাতে তাদের জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হবে।
সুতরাং, আমরা শুধু পরমার্শ দেব, কিন্তু আমাদের পরামর্শের ভালোমন্দের বিচার কলম্বো কিংবা কাঠমান্ডুর উপর ছেড়ে দেব।
(সৌজন্য: মেল টুডে)