নয়া পাকিস্তান শুধুই একটি মিথ্যে কল্পনা

আগের মতোই, পাকিস্তান এখনও জঙ্গিসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে শুধু লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়

 |  5-minute read |   13-03-2019
  • Total Shares

বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক করে পাকিস্তানকে একটি কড়া বার্তা পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু, পাকিস্তান সেই বার্তা শুনতে পেয়েছে কিনা তা এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার নয়।

পাকিস্তান মনে করছে, রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে তারা খুব দ্রুত এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে - যা, ভারতকে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা থেকে নিবৃত্ত করেছে। পাকিস্তান মনে করছে যে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো ভারতের প্রত্যাঘাতে সায় দেয়নি। তারা এখন রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক জঙ্গিতালিকায় মাসুদ আজহারের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করছে। কারণ, পাকিস্তানের ধারণা, এইভাবে তারা ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক জয় হাসিল করতে পারবে।

নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা যদি নিতে হয়, তাহলে কাশ্মীর সমস্য সমাধানের জন্যও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত।

বালাকোটের রাস্তা

এর সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার কারণটি কিন্তু পরিষ্কার নয়। ধরে নেওয়া গেল, ইমরান খানের শান্তি বার্তা প্রোপাগান্ডার দিক থেকে পাকিস্তানকে সুবিধা করে দিয়েছে এবং পাকিস্তানের হয়ে কথা বলা ভারতীয়দের মন জয় করতে সফল হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান এখন তাদের শান্তিপূর্ন প্রস্তাবের সঙ্গে ভারতের এই 'যুদ্ধ চাই' মেজাজের, তাদের জঙ্গিগোষ্ঠী দমনের প্রচেষ্টার সঙ্গে ভারতের হিন্দুত্ববাদী ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলার তুলনা শুরু করে দিয়েছে।

এই ধরণের প্রতারণা করে পাকিস্তান মনে করছে, নির্বাচনের পরেই ভারত তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসবে, তাও আবার পাকিস্তানের মদতপুষ্ঠ সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ দিয়ে। পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো যে ভারতে সন্ত্রাস ছড়াতে চায় তা পুলওয়ামা জঙ্গিহামলা আবার প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। ভারত যেভাবে বায়ুসেনার সাহায্যে পাকিস্তানে প্রবেশ করে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালিয়ে এল তা কিন্তু বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো সমর্থন করেছে।

চিনের অবস্থাও কিন্তু প্রণয়ন করা গিয়েছে। এমনিতে, এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই পাকিস্তানের। তা সত্ত্বেও, জামাত-উদ-দাওয়া ও জৈশ-ই-মহম্মদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু শুধুমাত্র জঙ্গিসংগঠনগুলোর কিছু নেতাকে আটক করে বা তাদের দ্বারা চালিত মাদ্রাসা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না।

body_031319065615.jpgজঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই পাকিস্তানের [ছবি: রয়টার্স]

পাকিস্তান বারংবার ভারতের কাছ থেকে জিহাদি অভিযান সম্পর্কে তথ্য চেয়ে এসেছে এবং যতবারই তাদের তথ্য দেওয়া হয়েছে ততবারই তারা সেই তথ্যকে অপর্যাপ্ত বলে আখ্যা দিয়েছে। পুলওয়ামা হামলা সম্পর্কিত যে দলিলগুচ্ছ পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল তাও পাকিস্তান মানতে রাজি হয়নি। এর থেকে পরিষ্কার, পাকিস্তান লস্কর ও জৈশদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে না।

সত্যিটা এই যে, আইএসআই ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে সমস্তরকম প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। হাজার হোক, তারাই তো সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে থাকে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইচ্ছে করলেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তারা যে জৈশ বা লস্কর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তা বিশ্বাস করাই কঠিন।

একই পদক্ষেপ

জঙ্গিসংগঠনগুলোর উপর কিছুদিনের জন্য লোক দেখানো পদক্ষেপ নিয়ে আবার পুরোনো পন্থায় ফিরে আসা - পাকিস্তানের এই স্বভাব বহুদিনের।

বর্তমানে পাকিস্তান তীব্র অর্থ সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তান মনে করছে যে তাদের হাতে এখনও কিছু তাস বাকি রয়েছে। যেমন তালিবান সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করা, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবকে সঙ্গে করে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করা, চিনের ভূরাজনৈতিক সুবিধাগুলোকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করা এবং ভারত পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে রাশিয়ার চুপ থাকা। এর সঙ্গে তাদের নিজস্ব পরমাণু শক্তি তো রয়েছেই।

body1_031319065721.jpgপাকিস্তানের বহুদিনের স্ট্রাটেজি: জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শুধু প্রতীকী ব্যবস্থা নেওয়া [ছবি: পিটিআই]

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশ যখন পাকিস্তানকে জঙ্গিসমস্যার সুরাহা করতে বলছে, তারা কিন্তু ভারত পাকিস্তান সম্পর্কে অবনতি নিয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছে। কারণ, এই পরিস্থিতিতে, কূটনৈতিক স্তরে ভারতকেও চাপে পড়তে হতে পারে।

দিনের শেষে, ভারতকে নিজের মতো করেই পাকিস্তান মদতপুষ্ঠ সন্ত্রাসবাদী সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। হয়ত, নিজেদের দেশে ইমরান খানের 'নয়া পাকিস্তানের' ডাকের কিছুটা সারা পড়েছে। আমাদের জন্য কিন্তু গল্পটা বেশ পুরোনো - পাকিস্তান এখনও সেই সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি - যে দেশে নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার সে দেশ কী ভাবে সন্ত্রাসবাদ রপ্তানি করবে। তাদের দাবি, কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ ভারতেই জন্ম হয়েছে এবং তার জন্য ভারত নাকি অহেতুক পাকিস্তানকে দুষছে।

এর মধ্যে একটাই নতুন গল্প রয়েছে - বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক। যার জন্য পাকিস্তান মোদীকে গালমন্দ করে চলেছে।

একটি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র

সঠিক সমালোচনা, সরকারের বিরোধিতা ও দেশদ্রোহী অবস্থান নেওয়ার মাঝের দাগটাই যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে যার জন্য আমাদের গণতন্ত্রকে কেমন জানি কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তথ্যপ্রমাণ দাবি করা হয়েছে। তার মানে বলা হচ্ছে যে দেশের বায়ুসেনা জনগণকে ভুল বোঝাচ্ছে। প্রায় ৬০০র মতো শিক্ষাবিদ, লেখক ও শিল্পী ভারতকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে দাবি করছে এবং যুদ্ধ না করার পরামর্শ দিচ্ছে।

body2_031319065854.jpgবালাকোট এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তুলল দেশবাসীরাই [ছবি: রয়টার্স]

তার মানে কি মোদী-বিরোধীতা ক্রমেই ভারত বিরোধিতা হয়ে উঠছে?

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KANWAL SIBAL

Former Foreign Secretary

Comment