নওয়াজ ও মরিয়মের মুক্তি কি ইমরান খানের সরকারকে বিপদ সঙ্কেত দিল
পিএমএল মনে করছে নওয়াজের মুক্তিতে তাদের নৈতিক জয় হয়েছে
- Total Shares
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট যখন দুর্নীতির অভিযোগে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করেছিল তখন পাকিস্তানে এক নয়া ইতিহাস রচনা হয়েছিল।
আদালতের এক রায়ে গদিচ্যুত হয়েছিলেন দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তাঁকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ শরিফকে আট বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল ও জামাই অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সফদরকে এক বছরের জন্যে জেলে পাঠানো হয়েছিল।
নওয়াজ শরিফকে পাকিস্তান রাজনীতির বাঘ বলা হয়ে থাকে [ছবি: রয়টার্স]
এই রায়ের ফলে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছিল শরিফ পরিবারের তথা নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের - নাওয়াজের (পিএমএল-এন)। প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচন জিতে পাকিস্তানে ক্ষমতা দখল করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান।
পিএমএল-এনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অনেকটাই নির্ভর করছে শরিক পাকিস্তান পিপসল পার্টির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কী রকম থাকে তার উপরে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে শরিফ পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
নাওয়াজের স্ত্রী বেগম কুলসুম নাওয়াজ ঈদের সময় লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। সেই সময় কন্যা সহ নওয়াজ বন্দি ছিলেন আদিয়ালা জেলে। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে লাহোরের জাতি উমরায় স্ত্রীর শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়েছিলেন নাওয়াজ। সেদিন তাঁর চোখেমুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
মুক্তি পেলেন নওয়াজ ও তাঁর মরিয়ম [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
পাশার ঘুঁটি কি উল্টে যাচ্ছে?
বুধবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট নওয়াজ কন্যা মরিয়ম ও জামাই সফদরকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে ন্যাব আদালতের দেওয়া শাস্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন শরিফ পরিবার নিযুক্ত আইনজীবী। আদালত ন্যাব কোর্টের আগের নির্দেশকে খারিজ করে দিয়েছে। পিএমএল-এন দলের নেতা আহসান ইকবাল এই রায় ঘোষণার পর জানিয়েছেন, "এই ঐতিহাসিক রায়ের পরে আমাদের নৈতিক জয় হল। সত্য কী, তা সামনে এল।"
দলের আর এক বর্ষীয়ান নেতা মুশাহিদ উল্লাহ খান জানিয়েছেন, "নওয়াজের কঠিন রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফলে এই জয় পাওয়া গেল। এই জয়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের নির্বাচন জয়ও সম্পন্ন হল। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে কারণ নাওয়াজকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল বলে। আদালতের রায় থেকে পরিষ্কার যে বৃহত্তর স্বার্থসিদ্ধির জন্যেই শরিফ পরিবারকে ফাঁসানো হয়েছিল।"
এই রায়ের ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার সরকারের চাপ যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
মুক্তির পরেই নাওয়াজ শরিফের পরিবারকে নূর খান বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বিশেষ চার্টার্ড বিমানে তাঁদের লাহোরের জাতি উমরাতে নিয়ে যাওয়া হবে।
লড়াই কঠিন হচ্ছে ইমরানের [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
তাঁকে বহিষ্কারের পরে বিভিন্ন জনসভায় নওয়াজ শরিফ একটা প্রশ্নই তুলতেন, "আমাকে সরানো হল কেন?"
এই প্রশ্ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া ও পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে। বিরোধী দল ইমরান খানের পিটিআই মজা করে প্রশ্ন শুরু করেছিল, "শরিফ নিজেও জানেন না যে তাঁকে কেন জেলে কেন যেতে হয়েছে - এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছুই হতেই পারে না।"
এই প্রশ্ন আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু এবার প্রশ্নকর্তা আরও বেশি দৃঢ় ও আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। হাজার হোক, মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।
আশা করা যায়, এবার ইমরান খানের পিটিআই এই প্রশ্নটিকে আরও বেশি করে গুরুত্ব দেবে।
চির প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আবার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে