লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: বিরোধীরা ত্রিশঙ্কু সংসদ চায়, তাদের দুর্বলতাই আবার মোদীকে ফেরাতে পারে

বিরোধীদের ছন্নছাড়া ও বিষম দেখাচ্ছে, তারা জোটবদ্ধ হতে প্রবল চেষ্টা করছে

 |  4-minute read |   23-03-2019
  • Total Shares

প্রথম দফা নির্বাচনের আগে আর বড়জোর সপ্তাহতিনেক বাকি আছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে যে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) বিরোধীদের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে। তারা তাদের জোট গড়ে ফেলেছে, তাদের কে নেতা তা স্থির হয়ে গেছে এবং প্রচারেও তারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে পেরেছে।

বিরোধীদের দেখে মনে হচ্ছে তারা এখনও পর্যন্ত ছন্নছাড়া ও অসম অবস্থার মধ্যে রয়েছে, তারা এখন জোট বাঁধার জন্য চেষ্টা করে চলেছে। বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে মোদীর বিরোধীরা বেশিরভাগ শক্তিই খুইয়ে ফেলছেন বিজেপির একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁদের একজন প্রার্থী দিয়ে জোটশক্তি দেখাতে গিয়ে।

bjp-690_032219105904_032319062710.jpgআরও একবার কি পদ্মফুল ফুটবে? এনডিএ ইতিমধ্যেই জোট গড়ে ফেলেছে – প্রচারেও তারাই এগিয়ে। (উৎস: রয়টার্স)

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেক বেশি স্বচ্ছতা দেখিয়েছেন – তাদের প্রথম লক্ষ্যটিহারে হল নরেন্দ্র মোদী যাতে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন তা নিশ্চিত করা, তার জন্য তাঁরা সহযোগীদের অনেক দাবিই মেনে নিয়েছেন। বিহারের উদাহরণই দেওয়া যেতে পারে, ২০১৪ সালের তুলনায় ৪টি কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। আগের কয়েক মাসে যত সংঘাতই হয়ে থাকুক না কেন, উত্তরপ্রদেশে অনুপ্রিয়া পটেল ও ওমপ্রকাশ রাজবরকে হাতে রাখার জন্য তারা তাদের আত্মগরিমা অবদমিত করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও বিজেপি ও শিবসেনার মধ্যে পরস্পরের প্রতি যুদ্ধং দেহি মনোভাব ছিল – কিন্তু তাদের মূল উদ্দেশ্যের কথা মাথায় রেখে দূরত্ব কমিয়ে আসন সমঝোতায় তারা শিবসেনাকে রাজি করিয়েছে।

বিরোধীদের মধ্যে এই মনোভাব কখনোই দেখা যায়নি।

জাতীয় স্তরে মহাজোট বা মহাগটবন্ধন থেকে অনেক দূরে থমকে গিয়ে রাজ্যে রাজ্যেই আসন সমঝোতা করে উঠতে পারেনি বিরোধীরা। এ কথা সত্যি যে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে জোট করেছে কংগ্রেস কিন্তু উত্তরপ্রদেশ (৮০টি আসন), বিহার (৪০টি আসন) ও দিল্লি (৭টি আসন) মিলিয়ে মোট ১৬৭টি লোকসভা আসনে বিরোধীরা এখনও এক হতে পারেনি।

বিহারে মাস ছয়েক আগে কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) তাদের জোট গড়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেছিল – কিন্তু পরে তারা মন বদল করে। মনে করা হচ্ছে যে কংগ্রেসই জোট গড়তে চেয়েছিল এবং কোনও একটা সময় জোটপ্রক্রিয়া ভেস্তে যায়।

শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকে তার পাওনা তিনটে আসন জোটসঙ্গীদের ছেড়ে দিতে হয়।

mahagathbandhan-690__032319072936.jpg মতভেদ নিয়েই তারা এগোবে? বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএর বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিশালী জোট হিসাবে প্রমাণ করতে পারেনি বিরোধীরা। (সূত্র: পিটিআই)

পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অবস্থাটা আরও শোচনীয়। তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করেছে যে তারা প্রাকনির্বাচনী কোনও জোটেই যাবে না এবং রাজ্যের সবক’টি আসনেই প্রার্থী দেবে।

যেটা আরও খারাপ তা হল, বামপন্থীরা ও কংগ্রেসও আসন সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়েছে. তাই এই রাজ্যে চতুর্মুখী লড়াই হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি-বহুজন সমাজ পার্টি-আরজেডির মধ্যে কৌশলী জোট হলেও কংগ্রেসের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে বহুজন সমাজ পার্টি, তাই এখানে লড়াই হচ্ছে ত্রিমুখী।

অক্ষমতার জন্যই হোক বা কাউকে পাত্তা না দেওয়ার জন্যই হোক, তাদের শুধুমাত্র যুক্তিজাল বুনে নয়, সাধারণ জ্ঞানও প্রয়োগ করে তাদের একটি সমঝোতায় পৌঁছানো দরকার ছিল।

যাঁরা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাসী, তাঁরা মনে করেন যে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসনসংখ্যা ৭১ থেকে ৩৩-এ নামিয়ে আনার জন্য এসপি-বিএসপি-আরজেডি জোট হওয়া দরকার ছিল। যদি তাই হয়, তা হলে এই জোটে কংগ্রেসকে সামিল করলে বিজেপির আসনসংখ্যা ১৯-এ নেমে আসতে পারত।

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস তাদের সঙ্গে জোট না করায় আপাত ভাবে হতাশ হয়ে কংগ্রেসের সব জোটের রাস্তা বন্ধ করতে চেয়েছে বিএসপি, এমনকি উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে কৌশলগত কারণেও তারা করতে চায়নি।

শোনা যাচ্ছে শেষ মুহূর্তে সনিয়া গান্ধী নিজে পথ খোঁজার চেষ্টা করলেও, তাঁকেও পাত্তা দেওয়া হয়নি।

দিল্লির অবস্থা যে এর চেয়ে ভালো, তা নয়।

আম আদমি পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধবে কি বাঁধবে না সে ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেনি। এ নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কথা তুলেছিলেন – কিন্তু শীলা দীক্ষিতকে দিয়ে উল্টে তাঁকেই চ্যালেঞ্জ করতে যায় কংগ্রেস। অবশ্য ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) প্রাণপুরুষ শরদ পওয়ারের উদ্যোগে কংগ্রেস তার অবস্থান বদল করে কোথায কী ভাবে জোট বাঁধা যায তার উপায় খুঁজতে শুরু করে।

এই অবস্থায় আম আদমি পার্টিও দরাদরি শুরু করেছে, দেশের রাজধানী আসন ছেড়ে দেওয়ার বদলে এখন তারা পঞ্চাব ও হরিয়ানায় আসন চাইছে।

modi-690_03221910593_032319062840.jpgসাগ্রহে দেখছি: বিরোধী শিবিরের ছন্নছাড়া হওয়ার জন্যই দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। (উৎস: রয়টার্স)

এখন একটু ভালো অবস্থায় রয়েছে এনডিএ। উল্টোদিকে বিরোধীরা এখন বহুধাবিভক্ত। এমন কোনও নেতা তাঁদের নেই যিনি বৃহত্তর স্বার্থে নিজের স্বার্থ ও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে প্রস্তুত। এখন যা অবস্থা তা যদি চলতে থাকে তা হলে নরেন্দ্র মোদীর সরকারই হবে প্রথম অকংগ্রেসি সরকার যেটি মেয়াদ পূর্ণ করে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এল, আর এ জন্য অন্য কাউকে নয়, নিজেদেরই দুষতে হবে বিরোধীদের।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Javed M Ansari Javed M Ansari @javedmansari

The writer is a senior journalist and political analyst.

Comment