পুলওয়ামা হামলা: সময় অপচয় না করে অনতিবিলম্বে 'জবাব' দিতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে
যখন লোকসভা নির্বাচন আসন্ন তখন মোদীকে প্রমাণ করতেই হবে যে নেতা হিসাবে তিনি শক্তিশালী
- Total Shares
দিল্লি ও মুম্বাইয়ে আড্ডাবাজরা খবরের উপর ভিত্তি করে নিজেদের মতামত দিয়ে থাকেন। গত সপ্তাহে তাঁদের ধারণা ছিল আসন্ন নির্বাচনে হারতে চলেছে বিজেপি।
কিন্তু পুলওয়ামা হামলার পরে তাঁদের ধারণা বদল হয়েছে। যাঁরা এতদিন ধরে নরেন্দ্র মোদীর প্রস্থান নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন তাঁরাই এখন নির্বাচনে বিজেপির জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, দেশাত্মবোধ যখন সকলকে মোদীর পাশে দাঁড়াতে উজ্জীবিত করে তুলবে।
দুটি ধারণাতেই অবশ্য মৌলিক ভুল রয়েছে।
সাধারণ নির্বাচন এখন সকলের জন্যই খোলা রয়েছে। আর এই জঙ্গি হামলা যে মানুষকে বিজেপির হয়ে ভোট দিতে অনুপ্রাণিত করবে তাও কিন্তু নয়। তিন মাস বাদে মানুষের মনে নতুন উদ্বেগের সঞ্চার হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর এহেন আক্রমণ সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেও দেখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে, মানুষ বিজেপির পাশে দাঁড়াবে এমন সম্ভাবনাও কিন্তু ক্ষীণ।
মোদী যদি সমর্থকদের নিশ্চিত করতে চান যে তাঁর প্রশাসন যথেষ্ট শক্ত তা হলে জঙ্গি আক্রমণের পর তাঁকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাঁকে কাজ করে দেখাতে হতে হবে।
ভারতের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ [ছবি: রয়টার্স]
এখন প্রশ্ন হচ্ছে: প্রত্যাঘাতটা ঠিক কেমন হবে?
বাজপেয়ী জমানায় সংসদ ভবনে আক্রমণ হওয়ার পর ভারত প্রায় পাঁচ লক্ষ জওয়ানকে সীমান্তে পাঠিয়ে দিয়েছিল এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। পরাক্রম নামের সেই অভিযানে লাভের লাভ কিছুই হয়নি কিন্তু প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়ে গিয়েছিল। একটি পরমাণু যুদ্ধ রোধ করতে বাকি দেশগুলো উঠে পড়ে লেগেছিল। এর থেকে অবশ্য লাভবান হয়েছিল পাকিস্তান কারণ ঘটনা পরম্পরা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে বিশ্ব কিছুতেই ভারতকে সামরিক অভিযানে নামতে দেবে না।
পাকিস্তানী জঙ্গিরা যখন ২০০৮ সালে মুম্বই আক্রমণ করল তখম মনমোহন সিং সরকারও সামরিক অভিযানের কথা ভেবেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাক্রম অভিযানের উদাহরণ দেখিয়ে এই পরিকল্পনা আর বাস্তবে রূপায়িত করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বুঝিয়েছিল যে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং পাকিস্তান এই হামলার চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু এই চক্রান্তকারীরা যে আজও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা আমরা সকলেই জানি।
এই দুটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একমত ছিল যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু তার পরিবর্তে গোপন অভিযান চালিয়ে কিছুটা ফল পাওয়া গিয়েছিল।
কী রূপ প্রত্যাঘাত করবেন মোদী [ছবি: পিটিআই]
সমস্যাটা হচ্ছে, পাকিস্তানের মাটিতে গুপ্ত অভিযান চালানোর ব্যাপার ভারতের দক্ষতা বেশ কম। উল্টে, পাকিস্তান স্বচ্ছন্দে ভারতের মাটিতে গুপ্ত অভিযান চালাতে পারে। পরাক্রম অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পরে অনেকেই গুপ্ত অভিযানের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে সায় দিয়েছিল। কিন্তু সকলে একমত হওয়ার পরেও মুম্বই হামলার পর আমরা এখনও সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।
বিজেপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন মনে হয়েছিল যে এই দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে অজিত ডোভালকে নিয়োগ করে এর প্রথম পদক্ষেপ করা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এখনও অবধি অর্থনৈতিক অপরাধী ছাড়া তাঁর আর অন্য কাজগুলো চোখে পড়ছে না। দীপক তলোয়ারকে তিনি ভারতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। কিন্তু দাউদ ইব্রাহিমের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
যাই হোক, জঙ্গি হামলার সময়ে সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও গোপন অভিযানের পরিকল্পনা করে রাখেনি তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এই ধরণের প্রস্তুতি তো স্বাভাবিক নিয়মেই পড়ে।
দাউদ ইব্রাহিমের টিকিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]
মোদীর নির্বাচনী স্ট্রাটেজির জন্যেও তো এই 'জবাব'টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি পাকিস্তানকে কঠিন শিক্ষা দিতে পারেন তাহলে তিনি নিজেকে একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে মেলে ধরতে পারবেন।
কিন্তু সেই জবাবটা কেমন হবে?
অনেক ধরণের সম্ভাবনা রয়েছে। জৈশ-ই-মহম্মদের সদরদপ্তর আক্রমণ করা যেতে পারে। মাসুদ আজহারের উপর ড্রোন আক্রমণ করতে পারলেও মোদী ফের ক্ষমতা দখল করতে পারেন। যে ধরণের আক্রমণই হোক না কেন সময়টা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটা অভিযান পরিচালনা করতে হবে যে অভিযানের খবর বিশ্বের কাছে পৌঁছানোর আগেই অভিযান শেষ হয়ে যাবে।
এই ধরণের অভিযান একেবারেই সহজ নয়, ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার দায় সরকারের উপরই পড়বে। এই অভিযানের পাল্টা দেবে পাকিস্তান - এমন আশঙ্কা রয়েই যাবে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এই ধরণের অভিযানের বিরোধিতা আসবে। কিন্তু ডোভাল তো প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় পেয়েছেন। মনমোহন সিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন মোদী। তাই এই ধরণের গোপন অভিযান তো আশা করাই যায়।
ভারতের জনগণের মত এই অভিযান সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই হোক।
মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে বদলা নেবে কি ভারত [ছবি: রয়টার্স]
কিন্তু তা কি ঘটবে?
আমার মনে হয় কিছু না কিছু পরিকল্পনা করাই আছে।
এই পরিস্থিতিতে, যেখানে নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি, মোদী ভালোই জানেন যে শুধুমাত্র কূটনৈতিক চাপ যথেষ্ট নয়।
সমর্থকরা আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা করে তাঁর কাছ থেকে। আর মোদীকে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতেই হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে