উদ্বাস্তু সমস্যার কথা সংসদে বলেছিলেন মমতা, এখন তিনি উল্টো কথা বলছেন

সংসদে কী বলেছিলেন সে কথা আজ হয়তো ভুলে গেছেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী

 |  3-minute read |   31-07-2018
  • Total Shares

ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অফ সিটিজেন্স বা এনআরসি-র খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আজকের অবস্থান তা স্ববিরোধিতায় পূর্ণ। তিনি বলতে চাইছেন যে অসম থেকে বাঙালিদের তাড়িয়ে দিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি, এটি সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। বাংলার মানুষের মধ্যে তিনি বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।

এই রাজ্যে ক্রমাগত যে ভাবে বিজেপির প্রতি রাজ্যের মানুষের সমর্থন ও আস্থা বেড়েছে তাতে তিনি কুণ্ঠিত, শঙ্কিত এবং ভীত। সেই কারণে তিনি বাংলার মানুষকে বিজেপির ভয় দেখাচ্ছেন, বাস্তব সত্য তিনি এড়িয়ে গেছেন। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় সরকার সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট বিল এনেছে, তাতে সেখানে পরিষ্কার ভাবে বলা রয়েছে যে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, পারসি, শিখ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের যাঁরা আসবেন তাঁদের ভারত সরকার এ দেশের নাগরিকত্ব দেবে, সে তিনি ১৯৭১ সালের মধ্যেই এ দেশে এসে থাকুন বা তার অনেক পরে।

অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী সরকার এ কথা স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে যে, যাঁরা ওপার বাংলা বা প্রতিবেশী দেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন, তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই, বিজেপি তাঁদের পাশে আছে। ভারতে যে একমাত্র রাজনৈতিক দলটি উদ্বাস্তুদের জন্য লড়াই করছে, সেই দলের নাম ভারতীয় জনতা পার্টি।

আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার প্রথম কথা, এনআরসি গঠন নরেন্দ্র মোদী সরকার করেনি, এটি গঠিত হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে। দ্বিতীয় কথা হল, কংগ্রেস যে ভাবে লোকসভার ওয়েলে নেমে এই বিলের বিরুদ্ধাচারণ করেছে তা করার কোনও নৈতিক অধিকার কংগ্রেসের নেই। ১৯৮৫ সালের অগস্ট মাসে আসাম অ্যাকর্ডে সই করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। আর সে দিন এই বিলকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।

bakbody_073118040505_073118060700.jpg এনআরসি গঠন নরেন্দ্র মোদী সরকার করেনি, এটি গঠিত হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে

আসাম অ্যাকর্ডের প্রতিটি পংক্তি যদি ধরে ধরে পড়া যায়, তা হলে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে আজকের কংগ্রেস যে কথা বলছে তা কুম্ভীরাশ্রু ছাড়া কিছু নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সেই কংগ্রেস ঘরানারই রাজনীতিক। তাই সেই পুরোনো কংগ্রেসের পথেই হেঁটে তিনিও একই কাজ করছেন। আসল কথা হল, তাঁর কাছে বলার মতো কিছু নেই।

আমরা খুব সুস্পষ্ট ভাবেই বলছি, ওপার বাংলা থেকে এই রাজ্যে এসেছেন, যাঁরা নিজেদের ধর্ম পালন করতে পারেননি, নিজেদের মান-সম্মান বাঁচাতে পারেননি বলে যাঁরা এসেছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের চার্টারের হিসাবে তাঁরাই উদ্বাস্তু। যাঁরা ওপারবাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ, এপারে এসেছেন পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী। শুধু অসম থেকে কেন, বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে তাদেরও যে বাংলা থেকেও তাড়ানো হবে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

তবে তৃণমূল কংগ্রেস বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এই কথা বলে যে, বিজেপি বাঙালিদের তাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ভাষাও বাংলা, পশ্চিমবঙ্গের ভাষাও বাংলা। তার মানে ওপার বাংলা থেকে যারা এ দেশে চলে আসা অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাও বাংলা। তাদের বাঙালি হিসাবে মান্যতা দেওয়া যায় না। এ ভাবে চললে কিছুদিন পরে তো বলবেন যে রোহিঙ্গারা এ দেশে বসবাসকারী! তারা এসেছে তাই এ দেশে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে... এটা দেশ, কোনও ধর্মশালা নয়। সুতরাং, ওপার বাংলা থেকে যে সব হিন্দুরা এসেছেন, তাঁরা ১৯৭১ সালে এসে থাকুন বা ২০১৮ সালে এসে থাকুন, তাঁদের চিন্তা বা ভয়ের কোনও কারণ নেই। ভরত সরকার তাদের পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।

আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথা বলছেন, সে কথা কেন বলছেন? তিনি নিজে ভুলে গেছেন যে তিনি লোকসভায় দাঁড়িয়ে কী করেছিলেন। তখন তিনি তাঁর দলের একমাত্র সাংসদ ছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে গিয়ে ভোটার তালিকা তুলে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন ওপার বাংলার লোকজন বাংলার ভোটার হয়ে যাচ্ছে। যে কাগজটা তুলে দিয়েছিলেন, সেই কাগজে কাদের নাম ছিল?  মানুষকে এখন উনি বোকা বানাচ্ছেন। বাংলার মানুষ অত বোকা নন। এ রাজ্যের মানুষ যথেষ্ট রাজনীতি-সচেতন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই উস্কানিমূলক কথা বলুন না কেন, তাতে বাংলার মানুষের কিছু যাবে-আসবে না।

মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির উপরে আস্থা প্রকাশ করেছে আর বিজেপিও তাদের সর্বস্ব দিয়ে তাঁদের রক্ষা করবে। তাঁদের কোনও রকম কোনও ভয়ের কারণ নেই।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RITESH TIWARI RITESH TIWARI @iamritesht

The writer is the state secretary of BJP, West Bengal.

Comment