নগরপাল ও সংবিধান বাঁচাতে নয়, নিজেকে বাঁচাতেই ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী
পুলিশ কমিশনার! তা হলে তাঁর বাড়িতে সিবিআই যেতে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্নায় বসলেন?
- Total Shares
বেআইনি অর্থলগ্নি সংক্রান্ত মামলার গোড়া থেকেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতি নাটকীয়তা দেখিয়েছেন, তিনি অতি সক্রিয়তা দেখিয়েছেন।
বেআইনি অর্থলগ্নি সংক্রান্ত মামলার মূল উপজীব্য হল দুর্নীতি, প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়া এবং যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের গ্রেফাতার করা। মূল জায়গা থেকে সরে গিয়ে এবং নজর ঘোরাতেই এই রাজনৈতিক সংকট তৈরি করা হয়েছে।
এই ঘটনার সময়কাল যদি দেখা যায় এবং একই সঙ্গে এই নাটকীয়তার মাত্রা পরিমাপ করা যায় তা হলে দেখা যাবে সময়কাল হল ভোটের মুখে ব্রিগেডে লালঝান্ডার মিছিল শেষ হওয়ার পরে ঠিক সন্ধ্যায়। কাল (৩ ফেব্রুয়ারি) যে ব্রিগেডে লালঝান্ডার জমায়েত হয়েছিল, যেখানে চৌকিদারের ভেকধারী চোরদের ধরতে বলা হয়েছে। শুধু দিল্লির চৌকিদার নয়, এখানের চৌকিদারও চোর। তার পরেই এই ঘটনা। তবে এই তদন্ত যে সিবিআইয়ের দ্বারা হবে না তা পাঁচ বছর ধরে প্রমাণ করেছে সিবিআই।
পুলিশ-সিবিআই ধস্তাধস্তি। (ছবি: সুবীর হালদার)
এ কথা বাংলার মানুষ বুঝেছেন, তবে এখন কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, সিবিআই প্রভৃতি দেশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি রাজ্যের মানুষকেও নতুন করে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই তৃণমূল সাংসদ কেডি সিংয়ের সম্পত্তি অ্যাটাচ করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, দলের নেতা – তাঁদের জেলে পোরা হয়েছে। তখনও তো কোনও দিন রাস্তায় ধর্নায় বসেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ইনি তো পুলিশ কমিশনার! তা হলে তাঁর বাড়িতে সিবিআই যেতে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্নায় বসলেন?
- আসলে তিনি জানেন যে কান টানলেই মাথা আসবে।
বিশেষ তদন্তকারী সংস্থার প্রধান হিসাবে রাজীব কুমারের কাছে সব তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, সেই জন্যই তিনি পুলিশ কমিশনার। যাঁরা ওঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা করেছে তাঁদের সঙ্গে ওঁর মিথোজীবী সম্পর্ক, অর্থাৎ একজন আরেকজনের উপরে নির্ভরশীল।
কে নেতা কে পুলিশ বোঝা দায়। (ছবি: সুবীর হালদার)
আজ কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে রক্ষা করার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লড়াই করছেন না, সংবিধান রক্ষা করার জন্যও লড়াই করছেন না। উনি নিজের দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার সিবিআইকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। এখন রাখালের পালে বাঘ পড়া-র গল্পের মতো অবস্থা হয়েছে – সিবিআই এখন যাই করুক না কেন, লোকে সেখানে রাজনীতির রংই দেখবে। তা ছাড়া সিবিআই যদি ঠিক পথে তদন্ত এগিয়ে থাকে তা হলে এই প্রশ্ন করতেই হবে, ভোটের আগে তারা কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে গেল কেন?
- এখন যে ধর্না শুরু হয়েছে, সেখানে কে পুলিশ আধিকারিক এবং কে তৃণমূল নেতা তাতে কোনও পার্থক্য করা যাচ্ছে না।
যদি সত্যিই প্রশ্ন করতেই হত, তা হলে বিকেল বেলা কেন? সাধারণ লোকের বাড়িতে যখন সিবিআই তল্লাশি করতে যায় তখন গভীর রাতে বা ভোর-রাতে যায় – রাত একটা, দেড়টা, দুটো বা আরও পরে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এমন একটা সময় বেছে নেওয়া হয়েছে যাতে উভয় পক্ষকেই দীর্ঘক্ষণ টিভির পর্দায় দেখা যায়।
মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ছবি: সুবীর হালদার)
টেলিভিশনের ভাষায় একে বলা যায় প্রাইমটাইমে ফুটেজের জন্য হাই ড্রামা।