মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে মোদী-বিরোধী মঞ্চের প্রধান মুখ হয়ে উঠছেন?

ব্রিগেড সমাবেশে বিরোধী শিবিরের সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে তিনি চাইছেন

 |  4-minute read |   16-11-2018
  • Total Shares

দাদাদের থেকেও দিদির গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি, অন্তত এই বাংলায়।

নোটবন্দির দ্বিতীয় বার্ষিকীতে কংগ্রেসের দুই বর্ষীয়ান নেতা মনমোহন সিং ও পি চিদম্বরম যতই নোটবন্দির খারাপ প্রভাবগুলোকে নিয়ে ব্যাখ্যা করুন না কেন, দিদির ভাইরা খুব দ্রুত দেশবাসীকে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন - নরেন্দ্র মোদীর নোটবন্দির সিদ্ধান্তের প্রথম প্রতিবাদ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা কংগ্রেসের কোনও নেতা প্রতিবাদ জানানোর আগেই।

নোটবন্দির দ্বিতীয় বার্ষিকীতে দিদিই প্রথম 'ডার্কডে' নামের একটি হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করেন। তাবড় অর্থনীতিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ এমনকি বিশেষজ্ঞরাও মেনে নিয়েছেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমে বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বেঁধেছিলেন তাকে কোনও ভাবেই হেলাফেলা করা যায় না। এর পিছনে তাঁর গভীর চিন্তাভাবনা কাজ করছিল।

এখন মোদী-বিরোধী মঞ্চ তৈরির তোড়জোড় চলছে যে মঞ্চে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন দলের নেতানেত্রীরা সেই মঞ্চে থাকার চেষ্টা করছেন, তার কারণ যাই হোক না কেন। আর এই অবস্থায় নিজের ঢাক নিজে পেটানো আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। নিজের বায়োডেটায় দেখাতে হবে যে মোদীর বিশাল বিশাল প্রতিশ্রুতির ফাঁকা আওয়াজ তিনি কতটা ভোঁতা করতে পেরেছেন। যে নেতা যত বেশি পেরেছেন তাঁর গুরুত্ব তত বেশি। মমতা অন্তত এই কথাটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছেন এবং আশার আলোও দেখতে পাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি তিনি কেন প্রবল 'মোদী-বিরোধী' হয়ে উঠতে মরিয়া তা একেবারে জলের মতো পরিষ্কার।

আরও একটি জিনিস তাঁর মনে খেলা করছে: তিনি কোনও ভাবেই চান না যে কংগ্রেস এই মোদী-বিরোধী মঞ্চের বড়দা হয়ে উঠে মঞ্চটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে। ইতিমধ্যেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) নেতা চন্দ্রবাবু নাইডুকে ফেডারেল ফ্রন্টের সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছেন।

হাজার হোক, এনডিএ-র নৌকো থেকে নেমে চন্দ্রবাবু নাইডু তো সর্বপ্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে তাঁকে এনডিএ-বিরোধী মঞ্চ তৈরি করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন! এই অঙ্কের উপর নির্ভর করেই মমতা মনে করছেন যে সমস্ত বিরোধীদের একত্রিত করার যোগ্যতম ব্যক্তি হচ্ছেন চন্দ্রবাবু নাইডু।

body_111618012033.jpgমোদী বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি মমতা? [ছবি: পিটিআই]

সম্প্রতি, কংগ্রেসের সঙ্গে পুরোনো শত্রুতা ভুলে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। এর ফলে নিজের রাজ্যে তাঁর দল টিডিপির পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে তা নিয়ে মাথাও ঘামাননি তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব ও বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতীর সঙ্গে দেখা করে তাঁদেরও বিরোধী মঞ্চে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন।

সেই ২০১৭ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রক্রিয়া চালু করে দিয়েছিলেন যখন বিরোধী দলগুলোর নেতারা তাঁকে এই মঞ্চ গড়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। যদিও এই মঞ্চ নিয়ে মমতার উৎসাহ-উদ্দীপনার অন্ত নেই, বিরোধী শিবিরের তাঁর অনেক বন্ধুই এই মঞ্চের ব্যাপারে এখনও উদাসীন। মঞ্চের নেতৃত্ব নিয়ে অনেকেরই মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

অনেকেই আবার বিরোধী শিবির ত্যাগ করে মোদীর শরণাপন্ন হয়েছেন কারণ রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের বড়দাদা-সুলভ আচরণ তাঁরা মানতে পারছিলেন না। মায়াবতীও বেশ ক্ষিপ্ত। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে যদি সম্মানজনক আসন তাঁর দলের জন্য বরাদ্দ না করা হয় তা হলে তিনি কোনও জোট অঙ্কের মধ্যে থাকবেন না।

এর ফলে, বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। তবে, এই পরিস্থিতিতে তিনি চুপ থাকতে পছন্দ করছেন। এমনকি ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশে বিরোধী মাথা গোনার যে প্রক্রিয়া তিনি শুরু করেছিলেন তাও আপাতত বন্ধ রেখেছেন। ওই সমাবেশের আগে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়ে যাবে। আর এই ফলই বিরোধী শিবিরের শক্তি ও দুর্বলতাগুলোকে প্রকট করে দেবে।

এর মাঝে অবশ্য মমতা চাইছেন চন্দ্রবাবু নাইডু যেন বিভিন্ন নেতার সঙ্গে দেখা করে সমাবেশ নিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে আসেন। এর মূল কারণ নাইডু বর্ষীয়ান নেতা এবং তাঁর একটি অমায়িক ভাবমূর্তি রয়েছে। দুই, যেহেতু প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে চন্দ্রবাবু নাইডুর নাম নেই সুতরাং উনি অনুঘটকের কাজ করলে কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত করবে না। তিন, যে ভাবে রাহুল গান্ধীর দিকে তিনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে অন্য কোনও নেতা ইগো দেখতে গেলে দু'বার চিন্তা করবেন।

ফ্রন্টের সমন্বয়কারী হিসেবে নাইডু ২১ ও ২২ নভেম্বর দেশের রাজধানীতে একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। নাইডু মমতাকে সেই সমাবেশে ব্যক্তিগত ভাবে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছেন। এর আগে বহু ক্ষেত্রে সোনিয়া গান্ধী কিংবা শরদ পাওয়ারের ডাকা সমাবেশে আমন্ত্রণ পেয়েও অনুপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছিল মমতাকে। কিন্তু এবার তৃণমূল নেত্রীকে সমাবেশে পেতে মরিয়া নাইডু যাতে বিরোধী জোট নিয়ে একটি রূপরেখাও তৈরি করে ফেলা যায়।

খুব সম্ভবত এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মমতা। কারণ তিনি ব্রিগেড সমাবেশে দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতাদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করে আছেন। বিরোধী শিবিরের বড় নামগুলো যদি একত্রিত করা যায় তা হলে শুধুমাত্র মোদী বিরোধী শিবির শক্তিশালী হবে না, সে ক্ষত্রে বিরোধী শিবিরের সর্বময় কর্তা আসলে কে, তাও পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ব্রিগেড সমাবেশ যাতে শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে সে জন্য অক্টোবর মাস থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। হাজার হোক, দিদি যে শুধু বাংলায় নয়, ভূ-ভারত জুড়েই দাদাদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ তা প্রমাণ করার সেরা মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে এই ব্রিগেড সমাবেশ।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ROMITA DATTA ROMITA DATTA

The writer is Associate Editor, India Today.

Comment