তৃণমূলকে এক ঘরে করে পশ্চিমবঙ্গে একজোট হয়েছে বিরোধীরা
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে হিংস্র সংঘর্ষ
- Total Shares
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ত কেন্দ্রে বিরোধীদের নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে সফল হবেন, কিন্তু তাঁর নিজের রাজ্যে তৃণমূল নেত্রী রাজনৈতিক ভাবে এক ঘরে হয়ে পড়েছেন। প্রশাসন ও নির্বাচনী মেশিনারিকে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েত ভোট জিততে চাইছে বাংলার শাসক দল - এই অভিযোগে তৃণমূল কিন্তু ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরোধীদের কাছে ভিলেন হয়ে উঠেছে।
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়াবার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা, যার ফলে শাসকদলের বর্তমান ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ম্লান হয়ে পড়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দলের নেতারা গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলোরও ধার ধারছেন না। বিরোধীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার অধিকারও খর্ব করা হচ্ছে।
তৃণমূলের এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এতটাই ক্ষিপ্ত যে রাজ্যে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস ও অন্য দলগুলো একজোট হয়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তারা এখন একযোগে তৃণমূলকে প্রতি-আক্রমণ করবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ইতিমধ্যেই আহ্বান জানিয়েছেন, যে কোনও দলের প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক কর্মীরা যেন একত্রিত হয়ে থাকেন। সব দলের সমর্থকরা যদি একসঙ্গে এক মিছিলে যোগ দেন তা হলেই তৃণমূলের সন্ত্রাস ঠেকান সম্ভব। তাঁর মতে, প্রতিটি দলের সেরা শক্তিকে একত্রিত করে শাসক দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে, যাতে তৃণমূলের বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত জয়ের কৌশলের মোকাবিলা করা যায়।
২ এপ্রিল থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে অভূতপূর্ব হিংসার সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। অনেকেই আহত হয়েছেন, বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও সামনে এসেছে।
বিজেপির অভিযোগ, সুপারি কিলার ও দুষ্কৃতী ভাড়া করে বিরোধী প্রার্থীদের ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, "রীতিমতো সুপারি কিলার ও দুষ্কৃতীদের ভাড়া করে বিরোধী দলের প্রার্থীদের ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল, ভোট প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে এবং ভোটগ্রহণ অবাধ করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার তাঁরা আবার নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার ব্যাপারেও তারা উদাসীন। আসলে, গণতন্ত্রকে কণ্ঠ রোধ করে হত্যা করতে চাইছে তৃণমূল। আমরা দলীয় কর্মীদের লড়াই জারি রাখবার নির্দেশ দিয়েছি।"
ইতিমধ্যেই, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ও ময়ূরেশ্বরে তলে তলে জোট গড়েছে বিরোধীরা। এই এলাকাগুলোতে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। রামপুরহাটে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস একত্রে জোট বেঁধে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়েছিল। মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরেও বিরোধীরা একজোট হয়ে তৃণমূল সন্ত্রাসের বিরোধিতা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন যে নির্বাচনে তৃণমূলের বিরোধিতা করতে ও এক ঘরে করে দেওয়ার জন্য বিরোধীদের এই পন্থা খুব কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। এই পন্থা রাজ্যে গণতন্ত্র স্থাপন করতেও সাহায্য করবে।
রাজ্য সম্পাদকের আহ্বানের পরেও সিপিএম এখনও বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই আবার এক বক্তৃতায় জানিয়েছেন যে তৃণমূল ও বিজেপি মুদ্রার দু'পিঠ। দুটি দলই একনায়কতন্ত্রে ও নির্মমতায় বিশ্বাস করে। তাই বলে জেলায় জেলায় পরিস্থিতিটা কিন্তু ভিন্ন। দলের নেতৃত্বের নির্দেশ ভুলে বিরোধী কর্মীরা এক হয়ে উঠেছেন।
বিজেপি নেতা মুকুল রয় অবশ্য তৃণমূল স্তরের এই আঁতাতে অন্যায়ের কিছুই দেখছেন না।
যুদ্ধ এবার শুরু হল বলে, আর যুদ্ধে তো সবই ন্যায়সঙ্গত।