বিজেপির অনেক নেতার চেয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বাজপেয়ীর বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন

বাজপেয়ী আমলের প্রশ্রয় ভালোবাসা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আর কোনও আমলেই পাননি

 |  3-minute read |   23-08-2018
  • Total Shares

রাজনীতির ময়দানে এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান বিরোধী বিজেপি। তিনি যে অটল বিহারী বাজপেয়ীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন তা সেই বিজেপিও অস্বীকার করতে পারে না। একজন বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা, কবি ও সর্বোপরি একজন ভালো মানুষের প্রয়ানে এই মুহূর্তে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও একজন অভিভাবক স্থানীয় ব্যক্তিত্বের প্রয়ণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। হাজার হোক, সেই ব্যক্তিত্বই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খারাপ সময়ে বারংবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৯৯ শাল থেকে বাজপেয়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল এনডিএ। সেই সময় মমতা শুধুমাত্র এনডিএ সরকারে ছিলেনই না, মন্ত্রী হিসেবে তাঁর পছন্দের দপ্তরগুলোও পেয়ে ছিলেন তিনি।

এই ধরণের প্রশ্রয়, ভালোবাসা তাও আবার কোনওরকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই, জীবনে খুব বেশি কিন্তু আসে না। ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মমতাকে এতটা স্বাধীনতা দেননি। বাজপেয়ীর প্রয়াণে মমতার শোক তাই যুক্তিসঙ্গত।

বাজপেয়ীর শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূল সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বাজপেয়ী ও মমতার ছবি পোস্ট করতে শুরু করে দিয়েছিল। বাজপেয়ী যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সাদামাটা বাড়িতে এসে ছিলেন সেই সময় ছবিগুলো তোলা হয়েছিল। বাজপেয়ীর মৃত্যুর খবর ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মমতা টুইট করে জানিয়েছেন যে তিনি গভীর ভাবে শোকাহত। তিনি লিখেছেন, "অটল বিহারী বাজপেয়ীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ আমি আমার সমস্ত কাজ বাতিল করলাম।"

body_082318062130.jpgবাজপেয়ীর আমলে পছন্দের মন্ত্রক পেয়েছিলেন মমতা [ছবি: পিটিআই]

চিত্রনাট্য যেন তৈরিই ছিল: বাজপেয়ী বিরিয়ানি ভালো বাসতেন, গলৌটি কবাব ভালো বাসতেন, কচুরি আর জিলিপিও তাঁর বিশেষ পছন্দের ছিল। তিনি হিন্দিতে দক্ষ আবার উর্দু সায়রী তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। সব মিলিয়ে বিশ্ববরেণ্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির প্রতীক। তা সে যতই বিরোধী গেরুয়া শিবিরের হোক না কেন এমন মানুষকে উপেক্ষা করা দায়।

স্বয়ং মমতা তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে লিখেছেন, "আমি সারা জীবন ধরেই সুখস্মৃতিগুলো উপভোগ করব।" স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মমতা জানিয়েছেন যে বাজপেয়ীর যখন তখন খাওয়ার ঘরে ঢুকে পড়ার অনুমতি তাঁর ছিল এবং অনেক সময়তেই দু'জনে একসঙ্গে বসে আহার করেছেন। মাঝে মাঝেই হঠাই মমতাকে ডেকে পাঠাতেন বাজপেয়ী এবং বাজপেয়ীর ডাকে তিনি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারতেন না। কখনও কখনও বাজপেয়ীর সঙ্গে গুরত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হত। আবার কখনও কখনও স্রেফ অভিভাবক হিসেবে তাঁকে পিতৃসুলভ পরামর্শ দিতেন বাজপেয়ী।

মমতা জানিয়েছেন, বাজপেয়ী একবার তাঁর কাছে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কাকে করা যেতেপারে সেই বিষয়ে পরামর্শ চান। তখন তিনিই সর্বপ্রথম এপিজে আব্দুল কালামের নাম প্রস্তাব করেন। ২০০৪ সালে মমতা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে চাননি। কিন্তু বাজপেয়ী শেষ পর্যন্ত তাঁকে কয়লা ও খনি মন্ত্রকের দায়িত্ব নিতে রাজি করিয়ে ছিলেন। সকলেই জানেন যে বাজপেয়ী একবার মমতার কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে ছিলেন এবং মায়ের হাতের মালপোয়া উপভোগ করে ছিলেন। তাঁর লেখায় মমতা অনেক ব্যক্তিগত ঘটনার কথাও উল্লেখ করেছেন। একটা কথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে বিজেপির অনেক নেতার থেকেই বাজপেয়ী মমতার সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মমতার এই স্মৃতিচারণের যাই কারণ থাকুক না কেন, তা কিন্তু বিজেপিকে এখন বেশ বিড়ম্বনায় ফেলেছে।

মমতা বুদ্ধিমতী। তাই তিনি বিজেপির মধ্যে অটল-আডবাণী ও মোদী-শাহ যুগলবন্দী নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "ওঁর (বাজপেয়ী) কাজকর্মের ধারাটাই অন্যরকম ছিল। বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সেই পন্থা কোনও দিনও মিলবে না।"

প্রথমে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ভেবে ছিল যে বাজপেয়ীর স্মরণ সভায় মমতাকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁরা ভেবেছে যে তা করলে নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতা প্রকাশ পাবে। তাই তাঁরা শেষ পর্যন্ত মমতাকেও আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছেন। সীতারাম ইয়েচুরি ও ডি রাজার মতো বাম নেতারা ইতিমধ্যেই বিজেপির দিল্লি সদরদপ্তরে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন। এখন দেখার বিষয় মমতা তাঁর প্রধান বিরোধী শিবিরের চৌকাঠ মাড়ান কি না। হাজার হোক, এতো নিজের জন্য নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্যে।

(সৌজন্যে: মেল টুডে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ROMITA DATTA ROMITA DATTA

The writer is Associate Editor, India Today.

Comment