প্রথম বাঙালি প্রধামন্ত্রীর স্লোগান মমতাকে দেশের মসনদে অধিষ্ঠিত করতে পারে
২০১৯ নির্বাচনের ফল না প্রকাশ হওয়া অবধি প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য ঝাঁপাবেন না মমতা
- Total Shares
বিরোধী শিবিরে পছন্দের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সংখ্যা ক্রমশই কমছে। আওয়াজ উঠছে, এবার ইন্দিরা গান্ধীর মতো কোনও 'লৌহ মানবীর' হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেবার।
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তথা লালু প্রসাদের পুত্র তেজস্বী যাদব জানিয়েছেন যে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা মায়াবতীকে দেখতে পছন্দ করবেন।
এই দুই রাজনীতিকই রাজনৈতিক জগতে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে ফেলছেন, তাও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। এরই মধ্যে জনতা দল (সেকুলার)-এর শীর্ষনেতা এইচ ডি দেবেগৌড়া পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে মমতা ও মায়াবতীর মধ্যে একজনকেই তিনি দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।
মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দেবেগৌড়া জানিয়েছেন, "প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে আমি মমতাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ১৭ বছর ধরে দেশ শাসন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। শুধুমাত্র আমরা (পুরুষরা) কেন দেশ শাসন করব? কেন মমতা বা মায়াবতীর সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন?"
দেবগৌড়ার প্রস্তাব নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিরোধী শিবির থেকে কোনও রকম বিরোধিতা আসেনি।
ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা শারদ পাওয়ারকেও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন যে তিনি নিজে, দেবেগৌড়া ও সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে লালায়িত নন। বরঞ্চ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করবার জন্যে তাঁরা বিরোধী শিবিরকে শক্তিশালী করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম দাবিদার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের এই মন্তব্য মমতা ও তাঁর সমর্থকদের কাছে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। তাঁরা বুঝতে পারছেন যে দিদির দিল্লি দখলের লড়াই এখন অনেকটাই সহজ, এক যদি না কংগ্রেসের ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন না হয়।
তৃণমূল যদি পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা আসনই জিততে পারে তা হলে মমতার প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।
ফেসবুকের মাধ্যমেও তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার কথা প্রচার করা হচ্ছে।
এক বাঙালির প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার বিষয়টি যে রাজ্যবাসীর মধ্যে প্রভাব ফেলবে তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে যখন এই রাজ্যে থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বৈমাত্রসুলভ আচরণ তোলা হয়েছে।
মোদীর 'আচ্ছে দিন' স্লোগানের বিরোধিতা করতে গিয়ে সেখানে মমতার বিশ্বাসভাজনরা তাঁর সাফল্যের কথা তুলে ধরে জানিয়েছেন যে দেশকে ভালো সময় উপহার দিতে একমাত্র তিনিই পারেন। এর সঙ্গে তাঁরা অবশ্য এও যোগ করতে ভোলেননি যে মমতা নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য লালায়িত নন।
কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে মমতা কতটা ভালোবাসেন তা সকলেই জানেন। কিন্তু তিনি এখনই তাঁর অবগুণ্ঠন মোচন করতে চান না। প্রধানমন্ত্রীর আসন দখল করতে গিয়ে মমতা লখনউয়ের সেই বহু পুরোনো শব্দবন্ধ হাতিয়ার করতে চেয়েছেন, "পহলে আপ"।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়েছেন যে তিনি কাঠবিড়ালীর মতো চুপচাপ কাজ করতে চান কোনও ফলের কথা না ভেবেই। খুব সম্ভবত তিনি নির্বাচনের ফলাফলের জন্যে অপেক্ষা না করে প্রধানমন্ত্রীর আসনের জন্য ঝাঁপাবেন না।
ইতিমধ্যেই রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন যে তাঁর কোনও দলের কাউকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি নেই একমাত্র যদি না সেই ব্যক্তি আরএসএস বা বিজেপির সদস্য হন। উল্টোদিকে, মমতা অবশ্য জোট নেতৃত্বের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, "আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে।"
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে একাধিক রাজা এই একটিমাত্র রাজত্ব কী ভাবে চালাবেন।
মমতা আরও একটি কথা বারংবার বলে আসছেন, "বাংলা গোটা দেশকে শাসক করবেন।" তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে সবচেয়ে কাছাকাছি বক্তব্য এই একটিই তিনি করেছেন।
একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর আসন দখল করতে চলেছেন এই নিয়েও পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগ ১৯৯৬ সালেও এসেছিল কিন্তু সেই সময় সিপিএমের পলিটব্যুরার তরফ থেকে তাকে মুখ্যমন্ত্রী হতে দেওয়া হয়নি।
জ্যোতি বসুও পরবর্তীকালে এই ঘটনাটিকে 'ঐতিহাসিক ভুল' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিছুক তৃণমূলের কংগ্রেসের এক সাংসদ জানিয়েছেন, "পশ্চিমবঙ্গ আবার সেই ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না। দেশ যেন একজন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী পায় তা এবার নিশ্চিত করতে হবে।"
একজন বাঙালি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন এই আবেগকে হাতিয়ার করে রাজ্যে ভোটের হার বাড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কোনও রাজনৈতিক জনসভা বা কোনও রাজনৈতিক মিছিল বা কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে একটা বিষয়কেই তুলে ধরা হচ্ছে - "এবার আপামর ভারতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন নেতা পাবেন।"
সম্প্রতি মেদিনীপুরে নরেন্দ্র মোদী একটি রাজনৈতিক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তার পাল্টা সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সভায় সকল তৃণমূল নেতারাই বোঝাবার চেষ্টা করেন কেন মোদীকে সরিয়ে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনা উচিত।
অসমের এনআরসির খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে মমতা অভিযোগ তুলেছিলেন যে ইচ্ছে করে বাঙালিদের অসম থেকে তাড়ানোর চক্রান্ত চলছে। সেই মন্তব্য থেকে তৃণমূল ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা তুলতে শুরু করে দিয়েছে।
এ সবের মধ্যেই মমতার 'দেশের প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী'-র স্লোগানই মমতার নির্বাচনী মাস্টারস্ট্রোক হয়ে উঠতে পারে।