রাহুলের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোটে যেতে আগ্রহী নয় বলেও, মমতা কেন কংগ্রেসের সঙ্গে গেলেন
রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের কাছে তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া মানে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে ওঠা
- Total Shares
পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোটের সম্ভাবনাকে ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন যে তিঁনি কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থী অভিষেক মনু সিংভিকে এই রাজ্য থেকে পঞ্চম রাজ্যসভা আসনে জিতিয়ে আনবেন।
প্রদেশ কংগ্রেসে এই ঘোষণা বিনা মেঘে বজ্রপাতের সামিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিণত করবার কথা বলেছিলেন, এটাই কি তার ইঙ্গিত? বাম কংগ্রেসের জোট ২০১৬ বিধানসভার ভোটের পর ভোটবাক্সে মুখ থুবড়ে পড়লেও, তলে তলে বিধানসভার অন্দরে তাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে উঠেছিল। তারা এক সঙ্গে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনে পাশাপাশি থেকেছে। এমনকি প্রকাশ কারাটের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও জোট যৌথ ভাবে তৃণমূল ও বিজেপিকে নানা বিষয় আক্রমণ করেছে এবং বিপাকে ফেলেছে।
রাজ্যসভাতেও পঞ্চম আসনে বাম-কংগ্রেস জোট যৌথ ভাবে নির্দল প্রার্থী দেওয়া ও জোট প্রার্থীকে সমর্থন করবে বলে ভেবে এসেছিল। এই পঞ্চম আসনটিতে সিপিএম-এর তপন সেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এপ্রিল মাসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি তৃণমূল নেত্রীর ঘোষণা রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলেছে বাম ও কংগ্রেস শিবিরকে।
নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেস একা কোনও সিদ্ধান্ত মমতার উপর চাপিয়ে দিয়ে পারবে না
প্রথমত, তৃণমূলের হাত ধরা প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষে বেশ অস্বস্তিকর। কংগ্রেসের বেশির ভাগ নেতানেত্রীই তৃণমূলের দাদাগিরি ও তাদের বশ্যতা স্বীকার করতে অনিচ্ছুক। কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ইচ্ছায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক মনু সিংভিকে সমর্থন করতে রাজি হয়েছেন। এর মানে, ভবিষ্যতে কংগ্রেস তৃণমূলের জোট হলে মমতা আসন সমঝোতা নিয়ে সরাসরি কংগ্রেস সুপ্রিমোর সঙ্গে কথা বলবেন। সেখানে রাজ্য কংগ্রেসের মতামত বিবেচ্য হবে না প্রাধান্যও পাবে না।
বর্তমানে দেশ জুড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর গুরুত্ব বাড়ছে। এই পরিস্থিতে সোনিয়া গান্ধীরা স্বাভাবিক ভাবে তৃণমূলকে মান্যতা দিতে চাইবেন। আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে তাই সব সময়ই তৃণমূল নেত্রীর মতামত বেশি গুরত্ব পাবে। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেসের উপস্থিতি সাইনবোর্ড ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে?
এতদিন ধরে কংগ্রেস নেতারা তৃণমূল বিরোধিতা ও মমতার নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন। এখন তাঁদের পক্ষে একেবারে বিপরীত মেরুতে গিয়ে বিপরীত কথা বলে ভোট সংগ্রহ করা এবং ভোটে জেতা দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও তৃণমূল এক জোট হলে প্ৰতিষ্ঠান বিরোধী ভোট কিন্তু বিজেপির পাল্লা ভারী করবে, কারণ মানুষ ক্রমশ বামেদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে এবং বামেরা এখন পশ্চিমবঙ্গে লড়াই করার মতো জায়গায় নেই। এতে রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠে আসবে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ভীষণই ক্ষুব্ধ। আব্দুল মান্নান (যিনি বরাবরই জোটের পক্ষে সওয়াল করে গেছেন) বিধানসভায় বিধায়কদের সঙ্গে সিংভির পরিচয় পর্বে উপস্থিত থাকলেও নৈশভোজে অনুপস্থিত ছিলেন।
কংগ্রেস নেতাদের কাছে তৃণমূলের সঙ্গে প্রাথমিক গাঁটছড়া বাঁধা মানে শাসকদের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে ওঠা। প্রশ্ন উঠছে মমতা কেন কংগ্রেসের সঙ্গে গেলেন যেখানে তিঁনি স্পষ্টতই রাহুলের নেতৃত্বে জাতীয় স্তরে বৃহত্তর জোটে যেতে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছিলেন?
সিংভির ব্যাপারে মমতার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার জায়গা আছে কারণ সিংভি এর আগে অনেক বিষয় রাজ্যের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়েছিলেন। এছাড়া কংগ্রেসের সঙ্গে 'আপৎকালীন' হাত ধরে মমতা এই বার্তাই দিলেন যে বিজেপিকে আটকাতে তিনি এক জোট হয়ে সবার সঙ্গেই আছেন। তবে ভবিষ্যতে এই বন্ধুত্বের দাম তিনি সুদে-আসলে তুলে নেবেন এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেস একা কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে পারবে না।