কংগ্রেস ইউপিএ-র নেতৃত্ব দেবে, বিরোধী জোটেরও নেতৃত্ব দেবে, তা বার বার নাও হতে পারে
জরুরি অবস্থার শেষ প্রান্তে তিহার জেলের অভ্যন্তরে নাকি প্রথম মহাজোট গড়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়
- Total Shares
বিরোধী ঐক্য বা বিরোধী সম্পৃতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে আলোচনা সম্প্রতি হচ্ছে, তার থেকে পিছন দিকে যদি আমরা তাকাই, তা হলে আমরা দেখত পাব যে, জরুরি অবস্থার শেষ প্রান্তে তিহার জেলের অভ্যন্তরে নাকি প্রথম মহাজোট গড়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়। সেই সময় ওই জেলেই বহু রাজনৈতিক নেতা বন্দি ছিলেন। এর পরে লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ায় দেখা যায়, বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল মিলে তৈরি হল জনতা দল। এই নতুন দলের সঙ্গে মিশে যায় জনসঙ্ঘ, স্বতন্ত্র দল, ভারতীয় লোকদল প্রভৃতি পার্টি। যে দলের সঙ্গে জোট বাঁধে
কমিউনিস্ট ও সমাজবাদী দলগুলিও। জরুরি অবস্থার নানা অত্যাচার, নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি ফলাও প্রচার করে সংবাদপত্রগুলি। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধর বিরুদ্ধেও তীব্র প্রতিবাদ সংঘটিত হয়।ভোটের প্রচারে একই মঞ্চে দেখা যায়, জনসঙ্ঘ-সিপিএম, এমনকী আরএসএস-জামাত-ই-ইসলামি সংগঠনের নেতাদেরও। নির্বাচনে ধরাশায়ী হয় শাসক কংগ্রেস। স্বাধীনতার ৩০ বছরে এই প্রথম কংগ্রেস কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে অপসারিত হল। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে নবনির্বাচিত জনতা সরকারের পতন ঘটে। উল্কা-বেগে ক্ষমতায় ফিরে আসেন ইন্দিরা গান্ধী।
এর পর ১৯৮৩ সালের ২৮ মে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এনটি রামা রাওয়ের জন্মদিনে বিজয়ওয়াড়াতে ১৪টি বিরোধীদলের কনক্লেভ সংগঠিত হয়। লক্ষ্য, কেন্দ্রে আবার জোট সরকার গঠন করা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কেন্দ্রে ও রাজ্যে নানা ধরনের জোট সরকারের অভ্যুদয় ঘটেছে।
বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে নতুন জোট গড়ার পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়ে্ছে, যদিও এখনও তা সাধারণ আলোচনাস্তরেই রয়েছে। এর প্রথম লক্ষণ দেখা যায় ২০১৬ সালের শেষ প্রান্তে, যখন নোটবন্দি ঘোষণা করে মোদী সরকার। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে প্রথম নোটবন্দির বিরুদ্ধে মুখ খোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ করে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলগুলিকে বিজেপি সরকারের এই জনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ার ডাক দেন। বিরোধী নেতাদের উদ্দেশে তিনি প্রকাশ্যেই বলেন, যে কেউ নেতৃত্ব দিন, আমি লাইনে সবার শেষে দাঁড়াব, কিন্তু দয়া করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।
অভিযোগ উঠেছে, মমতা কেসিআর এক হলে নাকি বিজেপি লাভবান হবে
সে দিন অনেকেই হয়ত তাঁর কথার গুরুত্ব বোঝেননি, কিন্তু এখন সব বিরোধী দল, এমনকী এনডিএ-র কোনও কোনও শরিক দলও চাইছে যে, জোট বেঁধে লড়াই হোক। নিঃসন্দেহে তাঁদের লক্ষ্য ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সব বিরোধী দল মিলে একটা ফ্রন্ট হবে নাকি সেখানেও দলাদলি হবে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ছেন, এবং তা ঘটলে, আখেরে বিজেপির লাভ হবে। এটি হাস্যকর অভিযোগ। কারণ, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট দেশ শাসন করবে, আবার বিরোধী জোটেরও নেতৃত্ব দেবে এমন সরল পাটিগণিত রাজনীতিতে বার বার নাও হতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো চান যে সব বিরোধী দল একজোট হোক। কিন্তু রাজ্যে রাজ্যে বর্তমানে রাজনীতির চেহারাটা কী?
বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সিপিএম জোট। সূর্যকান্তকে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছিল। কেরলে সিপিএমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস। ত্রিপুরায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস জোট করল না। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে জোট বাঁধার চেষ্টা করছেন শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে অবশ্য দুই যুযুধান বিরোধীদল এসপি-বিএসপি জোট বাঁধে, অপ্রত্যাশিত সাফল্যও পায়। এই উপনির্বাচনের ফলাফল থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির শিক্ষা নেওয়া উচিত। যদি ভারতের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হয়, সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্বিসহ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হয়, এবং ধর্মের নামে বজ্জাতি রুখতে হয়, তা হলে উত্তরপ্রদেশের ফুলপুর-গোরক্ষপুরের ফর্মুলাকে গ্রহণ করা ছাড়া বিরোধীদের অন্য কোনও উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, আমাদের লক্ষ্য লালকেল্লা। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে সব বিরোধীদলকেই একসুরে ডাক দিতে হবে, চলো দিল্লি।