লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: আঞ্চলিক দলগুলো কেন কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে
অখিলেশ-মায়াবতী থেকে মমতা ও কেজরিওয়াল, কেন কংগ্রেসের প্রতি এত কুণ্ঠা
- Total Shares
২০১৯ সালে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক লড়াই যত এগিয়ে আসছে বিরোধী দলগুলো ততই সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীকে পরাজিত করতে নিজেদের মধ্যে জোট তৈরি করছে।
সকলে মিলে একজোট হওয়ার যে কথা হচ্ছিল সেটাই পরে মহাজোট হয়ে যায় এবং তার নাম দেওয়া হয় মহাগটবন্ধন – এই জোটে কংগ্রেস নেই কারণ আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখছে।
অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতীই প্রথম উত্তরপ্রদেশে তাদের জোট থেকে কংগ্রেসকে বাদ দেয়। এ বার দিল্লির আম আদমি পার্টিও ঘোষণা করে দিয়েছে যে দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনেই তারা প্রার্থী দেবে, কোনও আসনই তারা কংগ্রেসকে ছাড়বে না।
বিদায়বার্তা: উত্তরপ্রদেশে মহাগটবন্ধন থেকে কংগ্রেসকে বিদায় জানিয়েছেন অখিলেশ যাদব ও মায়াবতী। (ছবি: পিটিআই)
এই দূরত্ব তৈরি হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
তাঁর দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার জন্য দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের দুষছে আম আদমি পার্টি (আপ)। রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে দিল্লি বিধানসভায় আপের বিধায়করা যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেটাই দিল্লির কংগ্রেসকে নাড়া দিয়েছিল। দুই দলের মধ্যে যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে সে কথা ভুললে চললে না।
কংগ্রেসকে দিয়ে ভোট নষ্ট না করে ২০১৯ সালের ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে তাদেরই ভোট দেওয়ার কথা প্রচার করছেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০১৫ সালেও দিল্লিতে একই ধরনের প্রচার করেছিল আম আদমি পার্টি এবং বিধানসভা থেকে কংগ্রেসকে বহু দূরে রাখতে পেরেছিল।
যাই হোক, আমাদের ধারনা ২০১৯ সালের নির্বাচনে যদি কংগ্রেস ভোট বাড়াতে পারে তা হলে আপেরই সম্ভাব্য ভোট কাটবে কংগ্রেস এবং তাতে লাভ হবে বিজেপিরই। একই ভাবে পঞ্চাবে কোনও জোটসঙ্গী না থাকায় তাতে সমস্যায় পড়তে পারে কংগ্রেস – সে ক্ষেত্রে খুব সম্ভবত লাভ হবে অকালি দল ও বিজেপির।
ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনের সময় অজিত যোগীর ছেলে অমিত যোগী ইন্ডিয়া টুডেকে বলেছিলেন যে কংগ্রেসে এমন কোনও উপায় নেই যাতে তারা অন্য কোনও দলের ভোটে ভাগ বসাতে পারে – তবে উল্টোদিকে, তাদের যারা নির্দিষ্ট ভোটার সেই ভোটও অন্য কোনও দলকে তারা দেওয়াতে পারবে না।
২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে প্রায় কোনও সুবিধাই করতে পারেননি সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, যদিও ফুলপুর ও গোরক্ষপুরে লোকসভা উপনির্বাচনে বহুজন সমাজপার্টি (বিএসপি) এবং সমাজবাদী পার্টির (এসপি) জোটের জয় হয়েছে।
- এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজপার্টির কেউই আসন হারাতে চায়নি কারণ তাদের দু’জনেরই নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে চলে যাচ্ছিল।
- একই ভাবে, পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার কোনও ইচ্ছাই নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণ দিদি মনে করেন য়ে তিনি বিজেপিকে হারানোর ব্যাপারে একাই যথেষ্ট।
বিজেপিকে হারানোর ব্যাপারে তিনি নিজেই যথেষ্ট, তাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার ব্যাপারে আগ্রহ নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। (ছবি: পিটিআই)
সাম্প্রতিক তিনটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজপার্টির সঙ্গে জোট গড়েনি কংগ্রেস, শোনা যাচ্ছে তাতেই আহত হয়েছে উত্তরপ্রদেশের সবচেয়ে বড় দু’টি রাজনৈতিক দলের এবং যখন সেই দু’টি রাজনৈতিক দল সাধারণ নির্বাচনের জন্য জোট গড়ল তখন তারাও কংগ্রেসকে সেই মহাগটবন্ধনে সামিল করেনি।
মনে করা হচ্ছে যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাতীয় দু’টি দল কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতে আঞ্চলিক দলগুলির ক্ষমতা বেশি এবং আসন্ন নির্বাচনে তারাই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।
নিজেদের রাজ্যগুলিতে বিজেপিকে হারানোর জন্য আঞ্চলিক দলগুলি নিজেদের মতো করে পরিকল্পনা করছে এবং মহাগটবন্ধনের মুখ কে হবেন, ২০১৯-এর নির্বাচন শেষ হলে সে ব্যাপারে দলগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে।
কংগ্রেস ও বিজেপিকে দূরে রাখতে বিশাল একটি জোট গড়ার ব্যাপারে সম্প্রতি সওয়াল করেছেন তেলঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতির প্রধান কেসিআরের কন্যা কবিতা।
আঞ্চলিক দলগুলো মনে করছে যে তারাই বিপুল সংখ্যক আসনে জয়ী হবে এবং সে জন্যই তারা তাদের একত্রিত ভাবে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে ২০১৯-এর নির্বাচনে, এই অবস্থায় আঞ্চলিক দলগুলো যাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্থির করবে, তাঁকে সমর্থন করা ছাড়া কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র অন্য কোনও বিকল্প থাকবে না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে