সংবিধানকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিলেন, কখনও সত্য থেকে বিচ্যুত হননি
কোনও ব্যাপারে অন্তবির্রোধ থাকলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের স্বার্থে লড়েছেন
- Total Shares
আমার ছাত্রজীবন থেকেই সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে পিতৃপ্রতিম ছিলেন। তাঁর কাছেই আমার সংসদীয় রাজনীতির হাতেখড়ি। শুধু তাই নয়, আমার শিক্ষা-দীক্ষা-বীক্ষা—সবই তাঁর কাছেই শেখা।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এমন একজন ব্যক্তি যিনি রাজনীতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, জাতি, প্রাদেশিকতা প্রভৃতি থেকে অনেক উপরে উঠেছিলেন। মানুষ হিসাবেও উনি ছিলেন অনেক উচ্চ মানের।
আমি দেখেছি চিরকাল তিনি সংসদীয় রাজনীতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তা সে লোকসভার সাংসদ হিসাবে হোন, অধ্যক্ষ হিসাবে হোন বা কোনও পদের বাইরে থেকে হোন। সংবিধানের মূল ভাবকে তিনি শুধু গ্রহণ করেননি, আত্মস্থও করেছিলেন। এই ভাবের উপরেই চিরকাল অবিচল ছিলেন।
CPIM Puducherry expresses its profound grief at the death of a former CPIM Member and a veteran of the a great Parliamentarian Mr. Somnath Chatterjee He was 89 years old. 10 term MP and former Speaker of the Lok Sabha #SomnathChatterjee pic.twitter.com/M5ij5tLU25
— CPI(M) Puducherry (@cpimpuducherry) August 13, 2018
মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, একতা তো বটেই একই সঙ্গে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া-অবহেলিত মানুষের যে অধিকার, সেই অধিকার সম্বন্ধেও অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
নিজের বাড়িতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (ছবি:সুবীর হালদার)
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যে যোগ্যতা ছিল, তাতে তিনি একজন ভালো বিচারপতি হতে পারতেন, চাইলে তিনি একজন ভালো প্রশাসক হতে পারতেন, তিনি একজন ভালো লেখক হতে পারতেন, চাইলে তিনি একজন ভালো অধ্যাপকও হতে পারতেন। তিনি ছিলেন একজন পণ্ডিত, তাঁর প্রতিভা ছিল বহুমুখী। কিন্তু তিনি তাঁর সম্পূর্ণ জীবন সঁপে দিয়েছিলেন সেই সব মানুষের জন্য যাঁরা নিজেদের কথা, নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারেন না। নির্বাক সেই সব মানুষের কথা শোনা গেছে তাঁর কণ্ঠে... কখনও সংসদের ভিতরে, কখনও আবার আদালতের কক্ষে।
I am not a @BJP4India goody-goody. Thus I will speak out: #SomnathChatterjee built a museum of History in Lok Sabha Annexe that paints Indian History Marxist way: Akbar, Ashoka & Nehru are heroes - all rest, specially Hindus, r thrown down the drain. Must have cost 100 crores
— Francois Gautier (@fgautier26) August 13, 2018
তিনি যখন লোকসভার অধ্যক্ষ হলেন তখন সংসদীয় পরম্পরার মান তিনি অনেক উচ্চ মার্গে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আজকাল নানা ধরনের বিতর্ক শোনা যায়, যেমন নারদ নিয়ে কোনও এথিক্স কমিটি বসছে না – অথচ তাঁর আমলে আমরা এমনটা হতে দেখিনি। তখন আমি নিজে তিনটি কমিটির সদস্য ছিলাম, দশজন সাংসদের সাংসদ-পদ খারিজ করে দিয়েছিলাম আমরা।
ওঁর কথাই ছিল নো ননসেন্স। অনেকে মুখ দেখে বিচার করে থাকেন। উনি সেই ধাতের মানুষ ছিলেন না। তিনি যেটিকে সত্য বলে গ্রহণ করতেন, যে কোনও পরিস্থিতিতেই সেই সত্য থেকে তিনি কোনও ভাবে বিচ্যুত হতেন না।
India loses another tall leader in the demise of Sri. #SomnathChatterjee ji who was the epitome of erudition and parliamentary propriety. My deepest condolences to the bereaved family, friends and admirers. pic.twitter.com/sY4frF9mOR
— Oommen Chandy (@Oommen_Chandy) August 13, 2018
সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা হিসাবেও ওঁকে পেয়েছি। ওঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। সেখানে আবার ওঁকে অন্য ভাবে দেখেছি। দেশের স্বার্থ কী ভাবে রক্ষা করতে হয় তা ওঁর কাছে শিখেছি। কোনও সময় হয়তো কোনও ব্যাপারে ওঁর অন্তবির্রোধ রয়েছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের স্বার্থে ওঁকে লড়াই করতে দেখেছি। দেশকে তিনি সকলের উপরে তুলে ধরতেন। অভ্যন্তরীণ কোনও দ্বন্দ্ব কখনও তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে যেতন না।
CPIM PolitBuro expresses its grief & sorrow at the death of former Speaker &10 time Lok Sabha MP, #SomnathChatterjee.He played an important role in defending the foundations of the Indian Constitution particularly its secular democratic foundations and federalism.
— CPI (M) (@cpimspeak) August 13, 2018
ওঁর আত্মজীবনা কিপিং দ্য ফেথ – মেমোয়ার্স অফ আ পার্লামেন্টারিয়ান-এ আমার সম্বন্ধে উনি অনেক প্রসংসাসূচক কথা লিখেছেন। ওঁর মতো ব্যক্তিত্ব যখন আমার সম্বন্ধে এ সব লেখেন, তখন তা আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে। এই স্নেহের বিড়ম্বনা আমাকে সহ্য করতেই হবে।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর মলাট
আমাদের রাজ্যের প্রতিনিধি হিসাবে যাঁরা সংসদে গিয়েছিলেন সেই হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভূপেশ গুপ্ত, ইন্দ্রজিৎ গুপ্তরা যে ভাবে বাংলার একটা আলাদা মর্যাদা তৈরি করতে পেরেছিলেন সংসদের মধ্যে তার অধঃপতন, সংসদীয় গণতন্ত্রের অধঃপতন, সংসদে বিতর্কের মানের অবনমন তাঁকে খুব পীড়িত করত। উনি সব সময়ই বলতেন, “দেখ বাবা, দেশটাকে যদি বাঁচাতে পার, রাজ্যটাকে যদি বাঁচাতে পার।”
তিনি দেশের কথাই ভেবে গিয়েছেন চিরকাল। তিনি তাঁর চক্ষু ও দেহ দান করে গেছেন। এসএসকেএম হাসপাতালে তাঁর দেহ দান করা হবে।
তাঁর মৃত্যু আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি।