দ্বিতীয় পর্ব: রাজনৈতিক দলদগুলোর ডোনেশনের উৎস কোথায়?
সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাই কোর্টের উচিত আইন করে সংশোধনগুলোকে পরিবর্তন করা
- Total Shares
ইলেক্টোরাল বন্ড অর্থের সূত্র জানার উপায় বন্ধ করে দিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশনের দুচিন্তা বৃদ্ধি করেছে। তার উপর আবার এফসিআরএর সংশোধন করার পরে এক নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে - বিদেশী কোম্পানিগুলো আমাদের দেশের রাজনৈতিকদলগুলোকে প্রভাবিত করে চলেছে।
এফসিআরএ-তে করা সংশোধনগুলো বিদেশ থেকে ডোনেশন পাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও সুবিধাজনক করে তুলেছে।
১৯৭৬ সালে এফসিআরএ লাগু করা হয়েছিল যাতে রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশী সংস্থাগুলোর প্রভাব না পড়ে। যা পরবর্তীকালে এফসিআরএ ২০১০-এ বদল করা হয়েছিল। ১৯৭৬ এফসিআরএ-এর চার নম্বর ধারা ও ২০১০এফসিআরএ-র তিন নম্বর ধারা অনুযায়ী, "কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা কোনও রাজনৈতিক দলের আধিকারিক বিদেশ থেকে অনুদান নিতে পারবে না।"
এই আইনভঙ্গ করলে পাঁচবছরের জেল এবং/কিংবা জরিমানা হতে পারে। রিপ্রেসেন্টেশন অফ পিপল অ্যাক্ট ১৯৫১-এর ২৯-বি ধারা অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো কোনও বিদেশী সংস্থা ও কোনও সরকারি সংস্থা থেকে অনুদান নিতে পারবে না।
এফসিআরএ ১৯৭৬ ও এফসিআরএ ২০১০এর মতে, বিদেশী সংস্থা বা 'বিদেশী সূত্র' বলতে এমন সংস্থাকে বোঝানো হচ্ছে যার ৫০ শতাংশের বেশ শেয়ার বিদেশে রয়েছে।
রাজনৈতিক অনুদানের সূত্র কোথায়? [ছবি: রয়টার্স]
কিন্তু বিজেপি ও কংগ্রেস এই আইনভঙ্গ করেছে বলে ইতিমধ্যেই দিল্লি হাইকোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২০১৪ সালে হাইকোর্ট জানিয়েছিল যে দুটি দলই আইনভঙ্গ করেছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দুটি দলের বিরুদ্ধে ছ'মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার উল্টে ২০১৬ সালের ফিন্যান্স বিলের মাধ্যমে এফসিআরএ ২০১০এর কিছু ধারা সংশোধন করে দিয়েছিল। যার ফলে এই আইনে বিদেশী সংস্থার সংজ্ঞাটাই বদলে গেল। বর্তমানে ভারতে বিনিয়োগ রয়েছে এমন যে কোনও সংস্থার কাছ থেকেই অনুদান নিতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলো, যতই সেই সংস্থার বিদেশে ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকুক না কেন।
অর্থাৎ, বিদেশী সংস্থাগুলো এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান দিতে পারবে। যদিও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে সরকার কিন্তু আইন করে বিদেশী অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে।
নভেম্বর ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণের কিছু সপ্তাহ আগে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওপি রাওয়াত বলেছিলেন, "নির্বাচন কমিশনের মতে নির্বাচনে বিদেশী অনুদানের অনুমতি না দেওয়াই উচিত। কিন্তু তা নিশ্চিত করতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছিল তা কেউই জানে না।"
এই সংশোধন প্রয়োগ করা বন্ধ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অন্তত দুটি মামলা করা হয়েছে।
এডিআরের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০৩-০৪ থেকে ২০১১-১২ পর্যন্ত ৩৪টি ক্ষেত্রে বিদেশী অনুদান নেওয়া হয়েছে - এর মধ্যে ১৯বার বিজেপি নিয়েছে আর ১৫ বার কংগ্রেস নিয়েছে। বিদেশী কোম্পানিগুলোর অধীনস্থ ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ১ লক্ষ থেকে ১৪.৫ কোটি টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি ১৯.৪ কোটি টাকা নিয়েছিল আর কংগ্রেস ৯.৮৩ কোটি টাকা নিয়েছিল।
রাজনৈতিক অনুদানের উপর নজরদারি করা এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
রাজনৈতিক দলগুলো দেশের গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা। তারা নির্বাচনে লড়াই করে, সরকার গঠন করে এবং আইন প্রণয়ন করে।
জাতীয় আইন কমিশনের ২০১৫ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে তিনটি কারণের জন্য রাজনৈতিক অনুদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার প্রয়োজন।
এক, অর্থ ক্ষমতা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে না। ধনী রাজনৈতিকদল কিংবা প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
দুই প্রচারের সময়ে কালো টাকা লেনদেনের কিংবা ঘুষের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তিন, এই টাকা দিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলো আইন আরও শিথিল করার চেষ্টা করে। একই সঙ্গে টাকা দিয়ে নিজেদের সাহায্যে লাগবে এমন নীতি প্রণয়নের জন্য প্রভাবিত করে।
কী করণীয়
মাথায় রাখতে হবে সংশোধনগুলো পরিবর্তন করা এতটা সহজ হবে না। ২০০২ সালে এনডিএ সরকার কী ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের হাত থেকে বাঁচার উপর বের করেছিল তা সকলেই জানে। লতুন আইন প্রণয়ন করে তারা এই কাজ করেছিল।
সুতারং ব্যাবস্থার নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কোনও লাভ নেই। সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের উচিত সংশোধনগুলো পরিবর্তন করার নিরেশদ দেওয়ার।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে