বাগ্মী মোদী ভোটপ্রচার করছেন প্রত্যাঘাত-অভিনন্দনকে নিয়ে, এবার বুঝে পা ফেলতে হবে বিরোধীদের
এখন যা পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে বিজেপির সবচেয়ে বড় সহযোগী ইমরান খানের দলই
- Total Shares
তখনও পুলওয়ামার প্রত্যাঘাত করেনি ভারত। কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার আগে দলীয় বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ভোটযন্ত্রে কারচুপি করেই রাজ্য থেকে ২২-২৩টি আসন পাওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। তখন পুলওয়ামা নিয়ে ফুঁসছিল সারা দেশ। কিন্তু প্রত্যাঘাতের পরে দেশের রাজনীতি অনেকটাই বদলে গেছে। এখন বিজেপি প্রচার করছে, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানকে যে ভাষায় জবাব দেওয়ার কথা বলেছিলেন, এখন তিনি ঠিক সেই ভাষাতেই জবাব দিচ্ছেন।
সমস্যা হচ্ছে বিরোধীদের। রাফাল নিয়ে তারা চুপ, প্রত্যাঘাত নিয়ে বিরোধিতাও করতে পারছে না। বিজেপির দিকে হাওয়া ঘুরছে দেখে চেনা ছকেই পাকিস্তানে কতজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে সেই হিসাব চাইতে শুরু করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন যে সত্যিটা জানতে চায় দেশ।
পাকিস্তানে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে ভারত কোনও দাবি করার আগেই পাকিস্তান সম্ভাব্য দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছিল, মানে ঠাকুর ঘরে কে জিজ্ঞাসা করার আগেই পাকিস্তান বলে দিয়েছে আমি তো কলা খাইনি। ভোর সওয়া পাঁচটারও আগে টুইট!
Indian Air Force violated Line of Control. Pakistan Air Force immediately scrambled. Indian aircrafts gone back. Details to follow.
— Maj Gen Asif Ghafoor (@OfficialDGISPR) 25 February 2019
Indian aircrafts intruded from Muzafarabad sector. Facing timely and effective response from Pakistan Air Force released payload in haste while escaping which fell near Balakot. No casualties or damage.
— Maj Gen Asif Ghafoor (@OfficialDGISPR) 26 February 2019
সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ক্ষেত্রেও প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করেছিল পাকিস্তান, আর সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত তারা পরমাণু হামলার হুমকি পর্যন্ত দেয়। এক বছর পরে প্রমাণ দেওয়ার পাশাপাশি সেই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা কমান্ডার সুরীকে কীর্তি চক্র দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও প্রমাণ হয়তো ভারত দেবে, কিন্তু সে জন্য সময় লাগবে।
দেশবাসীকে এখন বীরগাথা শোনাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। (ছবি: টুইটার)
মুম্বই হামলার পরে একের পর এক প্রমাণ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। পাকিস্তান কিছুই করেনি। এখন পাকিস্তান কোনও প্রমাণ চাইছে না, প্রমাণ চাইছেন ভারতেরই নেত্রী। কারণ, ভোটে এখন দেশপ্রেম ভাব। দশকের পর দশক ভারক সবকিছু হজম করার পরে যখন উত্তর দিয়েছে তখন কোণঠাসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার নায়কের আসনে। প্রত্যাঘাতের কয়েক ঘণ্টা পরে প্রথম জনসভাতেই তিনি ভোটের প্রথম প্রচারটি সেরে ফেলেন।
सौगंध मुझे इस मिट्टी की, मैं देश नहीं झुकने दूंगा... pic.twitter.com/XJkxa1HLQR
— Narendra Modi (@narendramodi) 26 February 2019
উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান যখন পাকিস্তানের হাতে বন্দি তখন তিনি প্রচার করে গেছেন। তিনি মুক্ত হওয়ার পরে ভোটের প্রচারে তা ভাঙাতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি প্রধানমন্ত্রী। দেশের লোককে কৃষিনীতি বোঝানো কঠিন, তাঁরা দেখেন ছাড় পেলেন কতটা, জিএসটি দেশের লোকের কাছে দুর্বোধ্য, নোটবন্দির ফল নিয়ে নানা মুনির নানা মত, তার উপরে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে আসার পরে প্রত্যাশার বিপুল চাপ ও ৩৭০ ধারা তুলতে না পারা ও রামমন্দির না গড়তে পারা নিয়ে কট্টরপন্থীদের মধ্যে ক্ষোভ। এই অবস্থায় পুলওয়ামায় হামলা ও কিছু করে দেখানোর আর্তি।
২৬/১১ মুম্বই হামলার পরেও বাতি জ্বলেছিল, ১৭৮ জনের প্রাণ ও অসংখ্য মানুষের অঙ্গহানির বদলে ভারত ফাঁসি দিয়েছিল আজমল কাসবকে – ব্যাপারটা ছিল সুকুমার রায়ের ভাষায় – ‘হাতে রইল পেন্সিল’। লোকে সেটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন পাকিস্তানের ভিতরে প্রথমবার প্রবেশ করেছে ভারত, শুধু নিয়ন্ত্রণরেখা পার করা নয়, পাকিস্তানের সীমানা প্রথমবার অতিক্রম করছে ভারত। সেটাই মেনে নিতে পারছে না পাকিস্তান।
Just to be clear: #Balakot is not in Azad Kashmir. If Indian Air Force planes dropped payload in Balakot, they crossed across the LOC, and then across the entirety of Azad Kashmir, and then into Khyber Pakhtukhwa. India didn't "cross the LOC". It has attacked Pakistan.
— Mosharraf Zaidi (@mosharrafzaidi) 26 February 2019
এই সুযোগ যে কোনও রাজনৈতিক দলই কাজে লাগাবে। বিজেপি সেটি করছেও। দেশের লোক, যাঁরা ভোট দেবেন, তাঁদের মধ্যে এখন যুদ্ধং দেহি ভাব, পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে পাকিস্তানের উপরে হামলা করে দেশের সেনারা নিরাপদে ফিরে আসায় সব রাজনৈতিক দল যতই ভারতীয় বায়ুসেনার তারিফ করুক, দেশের লোক বুঝছেন যে বায়ুসেনা আগেও ছিল, কিন্তু এই আক্রমণ তাঁরা করতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের জন্যই। এখন মোদীর পালে হাওয়া। বাগ্মী রাজনীতিক মোদী এখন চাইছেন সেই হাওয়ায় ভোট উতরে যেতে।
তিনি কি ভোটের জন্য এতবড় ঝুঁকি নিলেন! প্রশ্নটা উঠেছে সেই পাকিস্তান থেকেও, প্রশ্নটা করেছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই।
We realise it’s election year, and a desperation across the border. Fact of the matter is, Indian jets were forced to retreat in haste by Pakistan army patrols and dumped fuel, which in their scramble they thought was a bomb.#Pakistan
— PTI (@PTIofficial) 26 February 2019
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন মনে করছেন যে এটা ভারতের ভোটের বছর, তা হলে তাঁর কাছে পাল্টা প্রশ্ন করা যেতেই পারে, যদি তাই-ই হয়, নরেন্দ্র মোদীকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তাঁরা কেন এমন করলেন!
নরেন্দ্র মোদী সরকার বলেছে অতিরিক্ত জল দেওয়া বন্ধ করে দেবে পাকিস্তানকে, শুল্কও বাড়িয়েছে পাকিস্তানের জিনিসের উপর এবং একই সঙ্গে পাকিস্তানকে দেওয়া মোস্ট ফেভার্ড নেশনের তকমাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পাকিস্তানে টম্যাটো যাওয়া বন্ধ হতে তী অবস্থা হয়েছে দেখুন!
সেনারা যখন সীমান্তরক্ষায় অতন্দ্র পাহারা দিচ্ছেন তখন দেশর প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে ভোটের সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত, বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যখন একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করেছে। বাস্তব হল, যুদ্ধ পরিস্থিতি হোক বা না হোক, সর্বক্ষণ অতন্দ্র ভাবেই সীমান্ত পাহারা দেন জওয়ানরা, ভোট থাকুক বা না থাকুক। এখন যুদ্ধের গন্ধ, কারণ কথায় কাজ হচ্ছে না দেখে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে ভারত।
ঘটনা হল, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এখন কী নিয়ে প্রচার করবে? রাফাল? লোকে শোনার জন্য প্রস্তুত নয়। নোটবন্দি? জিএসটি? পেট্রল-ডিজেল-গ্যাস? লোকে শুনতে চাইছে না। লোকে কী শুনতে চাইছে? এককথায় বীরগাথা। আর সেটা তাঁদের উপহার দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। এটা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে কিনা সেটা পরের প্রশ্ন।
বিদেশনীতিতে ভারতের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল ইসলামিক দেশগুলোর সম্মেলনে ভারতের বক্তৃতা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েও সেখানে কোণঠাসা হয়েছে পাকিস্তান।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিন্তিত? দেশপ্রেমের হাওয়া কাজে লাগাচ্ছে বিরোধী শিবির, নতুন করে ভাবতে হবে বিরোধী শিবিরকে। (ফাইল ছবি: পিটিআই)
বালাকোটে হামলার পরেও দেশের মানুষের রক্ত গরম ছিল, যেটা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে উইং কমান্ডার অভিন্দন বর্তমান অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসার পরে। এখন লোকে বিরোধীদের কথা শুনতে চাইছে না। আর কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে। দু-মাস মাস পরে পরিস্থিতি কী থাকবে বলা মুশকিল, তবে এখন প্রচারের নতুন কৌশল বার করতে হবে বিরোধীদের।
পাকিস্তানকে প্রথমবার জবাব দিয়েছে ভারত, দেশবাসী এখন সেটা উপভোগ করছে। তা নিয়ে রাজনীতি হবেই। প্রচারের অভিমুখ ঠিক করে নিয়েছে সরকার। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীকে চা-ওয়ালা বলে নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছিল তৎকালীন শাসকদল। এখন তাদের ভেবেচিন্তে এগোতে হবে। প্রতিকূল হাওয়া অনুকূল করতে নরেন্দ্র মোদীর যে জুড়ি মেলা ভার, সে কথা এতদিন নিশ্চয়ই ভালো ভাবে বুঝে গেছেন বিরোধীরা।