ইভিএমে কারচুপির ভয়, নাকি রাজ্যে বিজেপির সম্ভাবনার কথা স্বীকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
বর্তমান পরিস্থিতি ও পুলওয়ামার প্রতিশোধ সুবিধা করে দেবে এ রাজ্যের বিজেপিকেও
- Total Shares
বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) কারচুপি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, ইভিএমে কারচুপি করেই ২৩-২৪টা আসন দখলের ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি। রাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪২টিই পাবেন বলে দাবি করলেও, এই প্রথম তিনি ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিলেন যে বিজেপিও এ রাজ্য থেকে আসন পেতে পারে।
কেন এমন মনে হচ্ছে তাঁর?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তাঁর দলের বৈঠকে এ কথা বলেছিলেন, তখনও ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে আক্রমণ করেনি, কিন্তু দেশের লোকের কাছে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল: পুলওয়ামায় হামলায় পরে যে ভাবে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে রয়েছে তাতে এই হামলার বদলা নিতে পারলে ভোটের আগে বিজেপির পালেই হাওয়া লাগবে। তাই পুলওয়ামায় হামলার জন্য সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে সোমবার দায়ী করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী।
Centre had "prior information" regarding the #PulwamaAttack and yet the jawans were not protected: @MamataOfficial pic.twitter.com/nAhsxemF2I
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) 25 February 2019
এদিন তিনি বলেছেন ৪২-এ ৪২ পাবেন। সে কথা ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেডেও বলেছিলেন। ইভিএমে কারচুপিও নতুন কথা নয়, কিন্তু এ ভাবে বিজেপি এ রাজ্য থেকে আসন পাবে (তা ১টি হোক বা ২২-২৩টি) সে কথা তিনি প্রকাশ্যে বলেননি। তাই এখন একটা প্রশ্ন করা যেতেই পারে, যদি ধরে নেওয়া যায় যে আড়াই মাস পরে ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে তা হলে সেই দিনের জন্য এখন থেকেই একটা অজুহাত খাড়া করে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ভিতরে ভিতরে তিনি কি বুঝতে পারছেন যে মুখে যাই বলুন, এ রাজ্যের সবকটা লোকসভা আসন দখল করা সম্ভব হচ্ছে না?
দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (নিজস্ব চিত্র)
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সৌমিত্র খান যে দিন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিলেন সে দিন মুকুল রায় জানিয়েছিলেন আরও অনেকে পা বাড়িয়ে আছেন। সৌমিত্র খান যে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আভাস ছিল না তৃণমূলের কাছে। তিনি তৃণমূলে রইলেন কি তৃণমূল ছাড়লেন, তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না। কিন্তু তাঁর বিজেপিতে যোগদান একটি ব্যাপার নিশ্চিত করে দিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের কারা বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে সেই খবর তৃণমূলের কাছে নেই। তাই দলীয় বৈঠকে বিজেপিকে বিঁধে তিনি হতাশাই ব্যক্ত করেছেন।
কয়েক দিন আগে কংগ্রেসের সাংসদ মৌসম বেনজির নূর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য থেকে সাংসদ – ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই দল ভাঙানো শুরু করেছিল তৃণমূল। তাই এখন যখন তাঁর দলেই ভাঙন, তখন তিনি নীতিগত প্রশ্ন তুলতে পারছেন না। এটাই সম্ভবত তাঁর হতাশার কারণ।
আরও একটা আশঙ্কা তাঁর মনে ছিল, তা হল, পুলওয়ামার পরে কেন্দ্রীয় সরকার যদি পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেয় তখন বিজেপির পালে যে হাওয়া বইবে, তা তিনি রুখবেন কী ভাবে।
বেশিরভাগ আঞ্চলিক দলের একমঞ্চে ওঠা, দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে কোনও আসন সমঝোতায় কংগ্রেসকে শরিক করা না হলেও আঞ্চলিক দলগুলির জোটে যথাসম্ভব নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বিজেপি বিরোধী ভোট একদিকে করার চেষ্টায় কংগ্রেসেরও সামিল হওয়া, রাফালের মতো বিষয়কে জটিল থেকে জটিলতর করে ভোটে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা এবং কৃষক সমস্যা নিয়ে বিজেপিকে বিদ্ধ করা, তিনটি বড় রাজ্যে সরকার থেকে বিজেপিকে সরিয়ে রাখায় সাফল্য, পাঁচ বছর পরে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া – পুলওয়ামার ঘটনা রাজনৈতিক ভাবে পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে।
অযোধ্যায় রামমন্দির যদি ১ মার্চের মধ্যে গড়েও দেওয়া হয় তা হলেও যে বিজেপির পক্ষে ক্ষমতায় ফেরা সম্ভব হবে না, সে কথা বলছিলেন হিন্দুত্ববাদী বলে পরিচিতরাই। এবং পুলওয়ামার ঘটনার পরে তাঁরাই বলতে শুরু করেছিলেন যে একমাত্র পুলওয়ামাই বিজেপিকে বাঁচাতে পারে। সেই অবস্থাতেই প্রত্যাঘাত।
তাদের এলাকায় ভারতীয় বিমান প্রবেশ করেছে বলে প্রথম দাবিটি পাকিস্তানই করেছিল, যা সাধারণ ভাবে তারা করে না। দেশজুড়ে ক্ষোভ যদি প্রশমিত হয় তা হলে রাজনৈতিক ভাবে সবচেয়ে বেশি লাভ বিজেপিরই। আর সেই কথা মনে করছে পাকিস্তানের শাসকদল পর্যন্ত।
Indian Air Force violated Line of Control. Pakistan Air Force immediately scrambled. Indian aircrafts gone back. Details to follow.
— Maj Gen Asif Ghafoor (@OfficialDGISPR) 25 February 2019
We realise it’s election year, and a desperation across the border. Fact of the matter is, Indian jets were forced to retreat in haste by Pakistan army patrols and dumped fuel, which in their scramble they thought was a bomb.#Pakistan
— PTI (@PTIofficial) 26 February 2019
সম্ভবত ১ মার্চ ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে। তার ঠিক মুখেই এই হামলা। পুলওয়ামার প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে ভারতীয় সেনাকে ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন যে আক্রমণের জায়গা, সময় সবই নির্ধারণ করবে সেনা। তাই প্রত্যাঘাতের দিনক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় আবেগে কেউই আঘাত করতে চাইবেন না। এখন সকলেই সেনাবাহিনীর সাফল্যকে অভিন্দন জানাচ্ছেন।
IAF also means India's Amazing Fighters. Jai Hind
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) 26 February 2019
???????? I salute the pilots of the IAF. ????????
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) 26 February 2019
I salute the bravery of Indian Air Force pilots who have made us proud by striking terror targets in Pakistan
— Arvind Kejriwal (@ArvindKejriwal) 26 February 2019
সেনা তাদের কাজ করেছে, প্রশ্ন হল এ নিয়ে রাজনৈতিক লাভ কার হবে? প্রচারের সময় বিজেপি নিশ্চয়ই এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না।
सौगंध मुझे इस मिट्टी की, मैं देश नहीं झुकने दूंगा... pic.twitter.com/XJkxa1HLQR
— Narendra Modi (@narendramodi) 26 February 2019
পশ্চিমবঙ্গে যখন ভোটের মেরুকরণ শুরু হয়েছে তখন এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক ভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুশ্চিন্তায় রাখবে। বিশেষ করে প্রত্যাঘাত যদি চলতে থাকে।