প্রার্থীতালিকা প্রকাশে বিলম্ব, কোথায সমস্যা বিজেপির?

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর দায় ছিল না, এখন দায় দায়িত্ব দুই-ই রয়েছে

 |  4-minute read |   21-03-2019
  • Total Shares

হোলিদহন।

ভারতীয় শাস্ত্রে নাকি আছে যে হোলিদহনের আগের কয়েকটা দিন বছরের সবচেয়ে অশুভ সময়। দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির পাঁচতারা দলীয় দফতরের ভিতরে এখন এই হোলিদহনের আলোচনার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

জনসঙ্ঘ তৈরির সময় থেকে আজ পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরে প্রার্থীতালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে এমন দোলাচল আর কোনও দিন ঘটেছে বলে শোনা যায় না। মরিয়া হয়ে দলের একাংশের তরফে এই হোলিদহন আর অশুভ সময়ের যুক্তি চুপিসারে রটনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কোন দল কবে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করবে এটা অবশ্যই তার অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করতে গেরুয়া শিবিরের এই লেজেগোবরে অবস্থা একেবারেই নজিরবিহীন। দলের অন্দরমহলের বক্তব্য: চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। অত্যন্ত ইতিবাচক প্রয়াস। কিন্তু গেরুয়া শিবির সম্পর্কে আমার যতটুকু পেশাগত অভিজ্ঞতা, তাতে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরে ১৫ ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ চূড়ান্ত এক ব্যর্থতার ইঙ্গিত ছাড়া কিছু নয়। হতে পারে এই শিবিরই আগামী দিনে সরকার তৈরি করবে, কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা একেবারেই বিরল যে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরে প্রথম দফার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ফুরিয়ে যাওয়ার দু’দিন আগে পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করা সম্ভব হল না।

modi-shah_032119040827.jpgআলোচনারত বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ফাইল চিত্র: ডেইলিও)

শোনা যায়, এই শিবির নাকি সারাবছর কাজের মধ্যে থাকে। যে শিবির সারাবছর কাজের মধ্যে থাকে, তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে এই রকম টানাপোড়েন – অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সামান্যতম পার্থক্যটাও তো আর বাকি রইল না!

সংবাদমাধ্যম থেকে শোনা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে সরকারের সাফল্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ২৩ ও ২৪ মার্চ সারা ভারতে নাকি প্রচারের ঝড় তুলবে গেরুয়া শিবির। এটা ঠিক স্পষ্ট নয় যে তা হলে কি গত পাঁচ বছর ধরে দলের প্রায় শ’তিনেক সাংসদ, কয়েক হজার বিধায়ক এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও দলীয় কর্মীরা সরকারের সাফল্য নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন?

অভিজ্ঞতা বলে, গেরুয়া শিবিরে প্রার্থী বাছাইয়ের একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি ছিল। যার ফলে আকবর রোডে কংগ্রেসের সদর দফতরে যে রকম ভাবে আগে বিভিন্ন রাজ্য থেকে টিকিট প্রত্যাশীরা দলবল নিয়ে ঘাঁটি গাড়তেন, তেমনটা ঠিক ১১ অশোক রোডে দেখা যেত না। এখন নিরাপত্তার কারণে এই প্রক্রিয়াটি প্রায় উঠেই গেছে, কিন্তু তবুও একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া পার করে অল্প অল্প করে হলেও কংগ্রেস বেশ কিছুটা তালিকা প্রকাশ কতে সক্ষম হয়েছে।

গেরুয়া শিবিরের অসুবিধাটি ঠিক কোথায়? তাদের এই দীর্ঘসূত্রতা নিশ্চিত ভাবে তাদের ভীত ও মরিয়া মানসিকতাকে প্রকট করছে। মরিয়া মানসিকতা এই জায়গায়:  যে ভাবেই হোক সরকারে ফিরতে হবে এবং ভীত মানসিতকা এই জায়গায়: প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হলে ভোটে তার কী প্রভাব পড়বে অথবা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে।

rahul_032119041032.jpg কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও তাঁর মা সনিয়া গান্ধী: প্রার্থী বাছাইয়ের ধরন বদলেছে কংগ্রেসের। (ফাইল ছবি: রয়টার্স)

একটি ছোট্ট উদাহরণ: অসম ইদানীংকালে বিজেপির সাফল্যের একটি বড় উদাহরণ। এবং সাফল্যের কারিগর হিসাবে মনে করা হয় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে। এ বারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন হেমন্ত। যেহেতু তালিকা প্রকাশ হয়নি সেহেতু বলা যাবে না যে তিনি প্রার্থী হবেন কি হবেন না। কিন্তু অসমের তৃণমূল স্তরের রাজনীতি বলছে, দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং রাজ্য সভাপতি – দু’জনে মিলে হেমন্তের দিল্লিযাত্রা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন।

গত প্রায় দশ দিন ধরে অসম ও উত্তরপূর্ব ভারতের রাজনীতিতে হেমন্ত একেবারেই নিশ্চুপ এবং কোনও এক অজ্ঞাত কারণে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হঠাৎই বিজেপি ছাড়ার হিড়িক বেড়ে গেছে। -- অনুমানের উপরে ভিত্তি করে এটা একটা উদাহরণ মাত্র। কিন্তু একই ঘটনা অনুমান করা যায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে অথবা উত্তরপ্রদেশ এবং এই রকম আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে।

গেরুয়া শিবিরে প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একটি বড় ভূমিকা থাকে। সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক কিন্তু অলিখিত এবং অলক্ষ্যে। কিন্তু এই ভূমিকাটাই যদি কখনও অধিকারের পর্যায়ে পর্যবসিত হয় অথবা নেপথ্যে থেকে দড়ি টানাটানির কারণ হিসাবে কাজ করে, তা হলে জটিলতা স্বাভাবিক।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী অনুমানভিত্তিক তার একটা বড় উদাহরণ, পশ্চিমবঙ্গের দমদম কেন্দ্র। একই রকম অনুমানভিত্তিক পরিস্থিতি আরও বহু রাজ্যের বহু কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ঘটতেই পারে। স্বাভাবিক ভাবে, অনির্দিষ্ট কালের দীর্ঘসূত্রতা প্রার্থীতালিকা প্রকাশ নিয়ে।

modi_032119041154.jpgএখন দায় ও দায়িত্ব দুই-ই নরেন্দ্র মোদীর কাঁধে। (ফাইল চিত্র)

 

২০১৪ সালের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর কোনও দায় ছিল না। দায়িত্ব ছিল বটে, তবে কোনও কিছু প্রমাণ করার দায় তখন তাঁর ছিল না। কিন্তু ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ – দু’জনকেই প্রমাণ করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ যখন প্রমাণ করবার, তখন সাবধানী হওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি আগ বাড়িয়ে খেলাটাও প্রয়োজন যাতে সমর্থকদের কাছে এই বার্তা না পৌঁছে যায় যে দল এক কদম পিছনে থেকে লড়াই শুরু করছে। আজকে সারা ভারত জুড়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অবস্থাটা সেই রকমই হয়েছে।

হোলি দহনের কুদশা কবে কাটবে আমি জানি না, তবে মধ্যরাত পর্যন্ত সাংবাদিকরা গত এক সপ্তাহ ধরে বিজেপির সদর দফতরে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত এবং বিরক্ত এবং সূত্রের ভিত্তিতে এখন তাঁরা কোনও খবর করতেও নারাজ। কারণ যাঁরা তথাকথিত সূত্র, তাঁরা নিজেরাই বিভ্রান্ত।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment