বিরোধী জোটে মমতার সঙ্গে কংগ্রেসও দরকারি, দুই কংগ্রেসকে একমঞ্চে আনতেই রাজ্যে চন্দ্রবাবু
ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হয় না, তবে ২০১৯ লোকসভায় অতীতের ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠছে
- Total Shares
প্রথম সারির ইতিহাসবিদদের মতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় না। তবে অতীতের কোনও কোনও ঘটনার সঙ্গে বর্তমানের কোনও কোনও ঘটনার সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
গত মার্চে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে এসেছিলেন তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। সেই সাক্ষাতের পরে বিজেপি-বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় স্তরে ফেডারেল ফ্রন্টের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থীর ফর্মুলাও দিয়েছিলেন তিনি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসও বিজেপি-বিরোধী জোটের পক্ষে নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন। ইতিমধ্যে এনডিএতে ভাঙনের ফলে চন্দ্রবাবুর টিডিপি ও চন্দ্রশেখর রাওয়ের টিআরএস জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তার কয়েক মাসের মধ্যেই চন্দ্রশেখর দু'নৌকোয় পা রেখে চলা শুরু করলেও বিরোধী জোট গড়তে চন্দ্রবাবু সম্প্রতি অতি তৎপর হয়েছেন।
এখানেই অতীত এসে মিলেছে বর্তমানের সঙ্গে। ১৯৯৬ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরে জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, টিডিপি, ডিএমকে ও চার বামদল সহ ১৩ পার্টির জোট নিয়ে সংযুক্ত মোর্চা তৈরি হয়। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮-এর মধ্যে সংযুক্ত মোর্চা দু'বার সরকার গঠন করে। প্রথমে এইচডি দেবগৌড়া পরে আইকে গুজরাল মোর্চার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
সেই দুই সরকারকে কংগ্রেস বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল। ১৯৯৬ সালেই নির্বাচনে বিজেপি একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও ম্যাজিক ফিগারের জন্য প্রয়োজনীয় সাংসদ জোগাড় করতে পারেনি। ফলে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী ১৩ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছিলেন। সেই সুযোগেই সংযুক্ত মোর্চা সরকার গঠন করতে পেরেছিল।
পশ্চিমবঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর আগমন কেন? [ছবি: পিটিআই]
জাতীয় রাজনীতিতে তখন এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন সংযুক্ত মোর্চার আহ্বায়ক চন্দ্রবাবু নাইডু। সেই সময়ে দিল্লির অন্ধ্ৰ ভবনে চলত মোর্চা সরকার গঠনের সলতে পাকানোর কাজ। হরকিষেন সিং সুরজিৎ, মুলায়ম সিং যাদব, দেবগৌড়ারা অন্ধ্র ভবনে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করতেন। বাইরে সাংবাদিকরা স্কুপ নিউজের আশায় অপেক্ষা করতেন। চন্দ্রবাবুর জোট রাজনীতিতে পরিপক্কতা এসেছে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হরকিষেণ সিং সুরজিতের হাত ধরে।
এছাড়াও অতীতের সঙ্গে বর্তমানের মিল রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ যোগে। সেই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুরোধ এসেছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়তো বসুর কাছে। নীতি অন্ধত্বে ভোগা সিপিএম সেই অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিতে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠার সুযোগও হারিয়েছিল বামপন্থীরা। এই হঠকারী রাজনীতির আর এক নিদর্শন ২০০৮ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া। এই দুই দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপের কারণে আজ বামপন্থীরা জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে।
আবার ফিরে আসছি পশ্চিমবঙ্গ যোগে। জোট রাজনীতিতে অভিজ্ঞ চন্দ্রবাবু জানেন জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-বিকল্প জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিতি কতটা প্রয়োজনীয়। একই সঙ্গে তিনি জানেন সেই জোটে কংগ্রেসকেও দরকার। এই দুই প্রয়োজনীয় মেরুকে এক জায়গায় আনতেই চন্দ্রবাবুর পশ্চিমবঙ্গে আগমন হয়েছিল।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের আস্থা পেতে কংগ্রেসকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে। কারণ অতীতে কংগ্রেসের সমর্থনে গড়ে ওঠা চন্দ্রশেখর, দেবগৌড়া এবং আইকে গুজরালদের সরকারের পতন হয়েছিল কংগ্রেসের সুবিধাবাদী রাজনীতির কারণে। অত তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে সেই সব সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছিল কংগ্রেস। এবারও সেই রকম পরিস্থিতি এলে কংগ্রেস যে সুবিধাবাদী রাজনীতির পথে হাঁটবে না সেই আস্থা জোট শরিকদের দিতে হবে কংগ্রেসকেই।