প্রথম পর্ব: রাজনৈতিক দলদগুলোর ডোনেশনের উৎস কোথায়?
বেশ কয়েকটি সংশোধনের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুদান পাওয়ার প্রক্রিয়া আরও অস্বচ্ছ হয়ে পড়েছে
- Total Shares
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে কেন রাজনৈতিক নেতাদের অসামঞ্জস্য রোজগারের উপর নজরদারি করার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সে ব্যাপারে ১২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে ভৎসনা করেছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালত জানতে পারে, মাত্র দুটি নির্বাচনের মাঝখানের সময়তে কিন্তু বিধায়ক ও তাদের নিকট-আত্মীয়ের সম্পত্তির পরিমাণ ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর জন্য কঠোর ব্যবস্থার দাবি করে সুপ্রিম কোর্ট।
এই ক্ষেত্রে, একটা বিষয়ে নিয়ে কেউই চিন্তাভাবনা করছে না - সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক অনুদান অনেকটাই অস্বচ্ছ ও হিসেবে বহির্ভূত হয়ে গিয়েছে। এর ফলে খুব সহজেই (হিসেবে বহির্ভূত ভাবে) রাজনৈতিক অনুদান পাওয়া যাচ্ছে যা বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের উপর প্রভাব ফেলছে। এই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টে করা হয়েছে।
দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এক, ইলেক্টোরাল বন্ড যা দ্বারা 'নামগোত্রহীন' কপোরেটরা রাজনৈতিক অনুদান প্রদান করে থাকে। দুই, এফসিআরে যা বিদেশ থেজে আইনি অনুদান পেতে সাহায্য করে।
ইলেক্টোরাল বন্ড সত্যিই অস্বচ্ছ। অনুদানের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।
২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি জানিয়েছিলেন, "এটি এমন একটা প্রকল্প যার মাধ্যমে রাজনৈতিক অনুদানে স্বচ্ছতা আসবে।"
ইলেক্টোরাল বন্ড সত্যিই অস্বচ্ছ, অনুদানের সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না [ ছবি:ইন্ডিয়া টুডে]
কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটেছে।
২০১৭ সালের ফিন্যান্স অ্যাক্টের মাধ্যমে ইলেক্টোরাল চালু শুরু করা হয়েছিল। এই বন্ড চালু করতে গিয়ে ১৯৫১ সালের পিপল অ্যাক্ট ও ২০১৩ সালের কোম্পানিস অ্যাক্টে বেশ কয়েকটি সংশোধন করা হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রকের কাছে এই সংশোধনগুলো কার্যকর না করা আবেদনও জানিয়েছিল।
একবার দেখে নেওয়া যাক সংশোধনগুলো ঠিক কী ছিল এবং নির্বাচন কমিশন ঠিক কী ভাবে সংশোধনগুলোর বিরোধিতা করেছিল।
প্রথম, রিপ্রেসেন্টেশন অফ পিপল অ্যাক্টের ২৯সি ধারা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ডোনেশন নির্বাচন কমিশনের নজরদারির বাইরে থাকবে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে এই সংশোধন পরিবর্তন করতে হবে কারণ এই আইন আরপি অ্যাক্টের ২৯বি ধারার পরিপূরক নয়, যে ধারায় সরকারি সংস্থা ও বিদেশ থেকে অনুদান গ্রহণ করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর উপরে।
দুই, আয়কর আইনের ১৩এ ধারা অনুযায়ী কোনও রাজনৈতিক দলই দুহাজার টাকার বেশি নগদ ও অন্যান্য মাধ্যমে ডোনেশন নিতে পারে না। কিন্তু আরপি অ্যাক্টের ২৯সি ধারা অনুযায়ী সেই সর্বোচ্চ নগদের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা।
তিন, ২০১৩ সালের কোম্পানি অ্যাক্টের ১৮২(১) ধারা সংশোধন করা হয়েছে। এই ধারায় বলা আছে যে একটি সংস্থা তার বার্ষিক নেট আয়ের সাড়ে সাত শতাংশের বেশি ডোনেশন হিসেবে খরচ করতে পারে না। কিন্তু সংশোধন করে এই সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন এরও বিরোধিতা করে বলেছে যে এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি জাল কোম্পানি খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে লাভের খতিয়ান ছাড়া সহজেই অনুদান দেওয়া সম্ভব। এর ফলে কিন্তু প্রক্রিয়াটি আরও অস্বচ্ছ হয়ে উঠছে।
কিছু বছর আগেও নির্বাচন কমিশন এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকারকে একাধিক চিঠি পাঠিয়েছিল এবং জনসাধারণকে এই সংক্রান্ত তথ্য পাঠানোর জন্য সবরকম সাহায্য করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতির সার্বিক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন নির্বাচন কমিশনের বিরোধিতা করা চিঠিগুলো হাতে পেতে হলে আরটিআই করতে হচ্ছে।
এটা ঠিক যে কেন্দ্রীয় সরকার কোম্পানিস অ্যাক্টে আরও একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ১৮২(৩এ) ধারায় বলা হয়েছে যে শুধুমাত্র অ্যাকাউন্ট পেয়ী চেক কিংবা ড্রাফট, নয়ত সরাসরি অ্যাকাউন্টে ফান্ড ট্রান্সফার করে এই ইলেক্টরেট বন্ড নিতে হবে।
কিন্তু এই বিষয়গুলো কখনওই ডোনারের পরিচয় সামনে আনে না।আর, অর্থের সূত্র জানা না যাওয়া মানে অস্বচ্ছতা রয়েছে।
কেওয়াইসি নীতিতে ব্যাঙ্কের (এ ক্ষেত্রে এসবিআই) কাছে অর্থের সূত্র সংক্রান্ত খবর থাকার কথা। এসবিআই তো সরকারের নিয়ন্ত্রণে, নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে নয়।
এই ইলেক্টোরাল বন্ড চালু হওয়ার সময়ে এডিআর বলে একটি সংস্থা শীর্ষ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিল।
এডিআর জানিয়েছিল, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ২২২কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিজেপি ২১০ কোটি টাকা পেয়েছিল (৯৪.৫%), কংগ্রেস পেয়েছিল পাঁচ কোটি টাকা এবং বাকিরা সাত কোটি টাকা পেয়েছিল। ইলেক্টোরাল বন্ড চালু হওয়ার পরে রাজনৈতিক দলগুলোর অজানা সূত্র থেকে আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এডিআর যাচ্ছে যে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৭-১৮ অবধি জাতীয় দলগুলো অজানা সূত্র থেকে তাদের মোট আয়ের মাত্র ৬৬% আয়ে করেছিল।
এই বিষয়ে ২৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছে। আসা করা যায় সেদিন আদালত আবার কেন্দ্রীয় সরকারকে ভৎসনা করবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে