জোট গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেস পাস করতে পারেনি, ভোটের কী হবে?
জোট গড়ার ক্ষেত্রে কোনও রকম ইগো দেখায়নি বিজেপি
- Total Shares
সম্ভব হবে কি হবে না – কংগ্রেস দলের দো’টানা এখন এরকমই। ভোটের মরসুমে যখন সমস্ত ‘ইস্যু’ই মোদীকে লক্ষ করে করা হচ্ছে, সেখানে কংগ্রেস এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে, তাদের দ্বন্দ্ব হল এখনই তারা ‘নরম হিন্দুত্বে’র জিগির তুলবে কিনা তা নিয়ে। এই অবস্থানের জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে কর্নাটক, সম্ভবত মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানেও তা কিছুটা প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের সবচেয়ে হতাশ হতে হয়েছে সিংহের গুহা – গুজরাটে।
আমরা কি আরও বেশি করে কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্ব দেখব? (ছবি: টুইটার)
ভোটের অনেক আগেই কংগ্রেস তার তুরুপের তাসটি খেলে ফেলেছে – তাদের সবচেয়ে বড় চমক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আগেভাগেই ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রয়াগরাজ থেকে তাঁর বারাণসী যাত্রার মধ্যে বেশ নতুনত্ব ছিল। তিনি যথেষ্ট ভালো সাড়াও পেয়েছেন। তবে পথের ধারে থাকা বহু মন্দিরে তাঁর দর্শন একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কংগ্রেস কি আবার নতুন করে নরম হিন্দুত্বের পথে হাঁটছে? নতুন এই নেতৃত্বের কি আরও ভালো কোনও পরিকল্পনা আছে? যখন রামমন্দির ইস্যুকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বিজেপি এবং তারা অনেক বেশি করে জোর দিচ্ছে তীব্র ও প্রখর জাতীয়তাবোধের উপরে, তখন কি কংগ্রেস অপেক্ষাকৃত অনেক লঘু ইস্যুগুলোর পিছনে ছুটছে?
তরণীযাত্রার সময় কি প্রিযাঙ্কা নরম হিন্দুত্বে সাঁতরেছেন? (ছবি: পিটিআই)
হাতের কাছে ইস্যুর যে ভীষণ রকম অভাব ছিল, তা মোটেই নয়। কৃষিসঙ্কট ও কর্মসংস্থানের অভাবের প্রসঙ্গ তুললে সে সবের উত্তর দেওয়া শাসকদলের পক্ষে বেশ অস্বস্তিকর হত – কিন্তু সে সবের উপরে জোর দেওয়ার সদিচ্ছা কোথায়? বরং তার বদলে দলটি সেই খেলাই খেলতে চাইছে যে খেলায় বিজেপি পটু। মন্দিরের উপরে জোর দিতে গিয়ে দেশের মানুষের সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারে ব্যর্থতা ও নিজেদের মানবদরদী হিসাবে ধরার বিপুল সুযোগ হাতছাড়া করছে।
এ কথা ঠিক যে সমাজবাদী পার্টি-বহুজন সমাজ পার্টির জোট তাদের নিতে অস্বীকার করায় উত্তরপ্রদেশের দৌড়ে সামিল হওয়া ছাড়া তাদের সামনে অন্য কোনও রাস্তা ছিল না। কিন্তু প্রতিটি সমস্যাই একটি করে সুযোগও খুলে দেয়। ছোট ছোট দলগুলির সঙ্গে তারা যদি জোট বাঁধতে পারত তা হলে যে সব অঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে তাদের অস্তিত্ব নেই সেই সব অঞ্চলে তারা ফিরতে পারত এবং জাতীয়স্তরে বিকল্প হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারত।
কিন্তু কংগ্রেস সারা দেশ জুড়ে ওই ছবিটিই আঁকছে।
আরএসএলপি যখন বিরক্ত হয়ে এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলল এবং বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে উদ্যোগী হল, তখন ব্যক্তিগত ইগো ঝেড়ে ফেলে দলের স্বার্থে তারা আবার মহারাষ্ট্রে এই দলটির সঙ্গে জোট গড়ল, আপনা দলের মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোণঠাসা জোটসঙ্গীদেরও উচ্চাশা পূরণ করল। ভিতরে ভিতরে যারা বিজেপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছিল এবং লড়াইয়ের জন্য যারা প্রস্তুত হয়েই গিয়েছিল সেই অহম গণ পরিষদও (অগপ) শেষ পর্যন্ত আবার এনডিএ-তেই ফিরেছে। দলকে নিজেদের উর্ধ্বে রেখে বিজেপির নেতারাই এগিয়েছেন কথা বলার জন্য।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে মায়াবতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলিকে সটান খারিজ করে দেওয়ার জন্য দেশের সবচেয়ে পুরনো দল কংগ্রেসকে ভালোমতো মূল্য চোকাতে হতে পারে। নিজের ইগো বিসর্জন দিয়ে এবং পুরনো বোঝা নামিয়ে দিয়ে অখিলেশ যাদব দেখিয়ে দিয়েছেন যে অবিশ্বাস্য ভাবনাকেও বাস্তবায়িত করা সম্ভব। শিবসেনাকে জমি ছেড়ে দিয়ে মহারাষ্ট্রে আরও বেশি মাত্রায় লাভ নিশ্চিত করে ফেলেছে বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেস যে সব জায়গায় জোট বাঁধতে গেছে তার কোনও জায়গাতেই কণিষ্ঠ সহযোগীর উপরে খুশি হতে দেখা যায়নি কংগ্রেসকে। যাতে সহযোগী দলগুলি খুশি হয় সে ব্যাপারে নিজের বয়স ছাপিয়ে তেজস্বী যাদব সূক্ষ্ম রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি দেখাতে পেরেছেন। যদি লড়াইটা এমন হয় যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বনাম বাকি সকলে, তাহলে সবচেয়ে সহজ সূত্রটি হল, আঞ্চলিক দলকে সংশ্লিষ্ট জায়গায় নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া।
যেখানে তারা জোট গড়তেও পেরেছে, সেখানেও কংগ্রেসকে খুশি দেখায়নি। (ছবি: পিটিআই)
সত্যি বলতে কী, নির্বাচনে সফল হতে শক্তিশালী জোটের বড় ভূমিকা রয়েছে – আমিত্ব কাউকে কোনও নির্বাচনে জয়ী করেনি।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে