সেনা ও জাতীয়তাবোধ: ২০১৯ সালে নির্বাচনের আগে বিজেপির পথে এখনও কংগ্রেসও
হুডাকে কংগ্রেস যে দায়িত্ব দিয়েছে তাতে তারা ক্ষমতায় এলে হুডা হতে পারেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
- Total Shares
কংগ্রেসের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ‘টাস্ক ফোর্স’-এর প্রধান হিসাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডিএস হুডার নিয়োগ নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয় – এটা যে একটা রাজনৈতিক কৌশল, সে কথা বলাই বাহুল্য। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সর্বকালীন সেরা আধিকারিকদের একজন হলেন হুডা, একথা প্রথমে বোঝা না গেলেও পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি যে কোনও ব্যাপারে তৎপর এবং কোনও ঘটনার অনুপুঙ্খ বিষয় বিস্তারিত ভাবে তাঁর জানা। এই নিয়োগ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আগামী নির্বাচনের পরে কংগ্রেস যদি ক্ষমতায় আসে তা হলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে হুডার নাম বিবেচনা করা হতে পারে। তবে এমন সম্ভাবনার কথা তিনি মানতে চাননি, তবে তিনি জানিয়েছেন যে, এই টাস্ক ফোর্সের কাজ হল আগামী পাঁচ বছরে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সামগ্রিক কৌশল ও বিদেশনীতি সংক্রান্ত দিশা প্রস্তুত করা – এর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা ও শক্তি সংক্রান্ত নিরাপত্তার কথাও বলা হয়েছে।
আমাদের পরবর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা? যদি ২০১৯ সালের নির্বাচনের পরে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে, তা হলে এই পদে বসতে পারেন হুডা। (ছবি: পিটিআই)
অতীতে দেখা গেছে, যে সব কমিটি বা প্রতিষ্ঠান সামগ্রিক ভাবে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করেছে তার মাথায় ছিলেন এমন কোনও ব্যক্তি যাঁর বিদেশ সংক্রান্ত বা গোয়েন্দা সংক্রান্ত কোনও মন্ত্রক বা বিভাগের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই সব কমিটির কয়েক ডজন পদের মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারিতে জায়গা হত কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিকদের।
বৈদেশিক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত তিনজন – ব্রজেশ মিশ্র, জেএন দীক্ষিত ও শিবশঙ্কর মেনন এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর দু’জন প্রাক্তন নির্দেশক – এমকে নারয়ণন, কর্মরত থাকা অবস্থাতেই অজিত ডোভাল জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন। বর্তমানে উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে রয়েছেন র-এর প্রাক্তন প্রধান ও বিদেশ মন্ত্রকের এক আধিকারিক।
মজার কথা হল, পবিত্র জাতীয়তাবাদের আধার এই বর্তমান সরকারই সেনাকেই জাতীয় নিরাপত্তার জামিনদার করেছে। আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়, তাকে জাতির প্রাণশক্তি ও কঠোর শক্তির প্রতীক হিসাবে সদর্পে তুলে ধরা হয়।
এই পটভূমিকায়, বর্তমান শাসকদলের কৌশলমতোই বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তি বা গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তির কথা না ভেবে একজন প্রাক্তন সেনা আধিকারিককে এই পদের জন্য বিবেচনা করছেন। বাস্তব কথাটা হল, যেখানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে সেই পুরো নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সর্বাধিনায়কের (কমান্ডার-ইন-চিফ) দায়িত্বে ছিলেন হুডা।
শাসকদলের কৌশলই এখন কাজে লাগাচ্ছেন রাহুল গান্ধী। (ছবি: পিটিআই)
বহুমুখী চ্যালেঞ্জ
হুডার কাজ খুব একটা সহজ নয়, বৃহৎ প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি হল ভৌগোলিক। এই কাজটির জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের খুঁটিনাটি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা আবশ্যিক। আফগানিস্তান ও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে, বেশ কয়েকটি দেশ দ্রুত উন্নতিসাধন করছে, রাশিয়ার নতুন করে উদয় ঘটছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, সৌদি, ইরান ও তুরস্ক প্রতিযোগিতায় নেমেছে – আর তাদের মাঝের অংশে এখন অশান্তি চলছে।
হুডা যে দায়িত্ব পেয়েছেন তার জন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সর্বশেষ কী অগ্রগতি ঘটেছে, সাইবার বিশ্ব ও আর্টিফিসিযাল ইন্টেলিজেন্সে কী অগ্রগতি ঘটছে সে সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান থাকা দরকার। গত বছর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রগুলি আয়োজিত একটি আলোচনাচক্রে সাইবার জগতে কী সমস্যা রয়েছে সে ব্যাপারে তাঁর বিচারবিবেচনা ব্যক্ত করেছিলেন এবং অত্যাধুনিক সমরসজ্জা নিয়ন্ত্রণে তাঁর ব্যুৎপত্তি কেমন তা দেখিয়েছিলেন হুডা। উর্দি পরে কাজ করার ফলে সেনার হাতে থাকা অস্ত্রগুলি ঠিক কতটা সাবেকি এবং এখন তাঁদের ঠিক কী দরকার সে ব্যাপাকে তাঁর সম্যক ধারনা রয়েছে।
কাশ্মীরী জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের একটা সুযোগ দেওয়া দরকার এবং কাশ্মীরী তরুণদের মন জয় করার উপরে জোর দিয়েছিলেন হুডা। (ছবি: পিটিআই)
দক্ষ আধিকারিক
কাশ্মীর উপত্যকায় যখন বিদ্রোহ চলছে যার জেরে ২০১৬ সালে যখন জঙ্গি কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যা করা হল এবং উরিতে আক্রমণের সময় উধমপুর কেন্দ্রিক নর্দার্ন কমান্ডের প্রধান ছিলেন হুডা। সেনা আধিকারিকদের জন্য তাঁর ভাবনা এবং সেনাকর্মীদের প্রতি তাঁর সহানুভূতির জন্য তিনি সৈনিক-মহলে অত্যন্ত সম্মানিত।
কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে অত্যন্ত কঠিন সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জম্মু-কাশ্মীরে তিনি পরিচিত। বিদ্রোহের সময়ে তিনি অভাবনীয় পদক্ষেপ করেছিলেন, তাঁর বাহিনীর হাতে এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি নিজে শ্রীনগরে গিয়ে জনসমক্ষে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, জঙ্গি-সংক্রান্ত কাজের ব্যাপারে তাঁর অবদান সুবিদিত।
কাশ্মীরী জঙ্গিরা যাতে আত্মসমর্পন করতে পারে সে জন্য তাদের সব রকম সুযোগ দেওয়া উচিত এবং কাশ্মীরী তরুণদের মন জয় করতে হবে বলে তিনি তাঁর কর্মজীবনে সওয়াল করে গেছেন। কমান্ডার হিসাবে সব কিছু তাঁর নখদর্পণে থাকার জন্য তিনি এই ধরনের সাহসী পদক্ষেপ করতে পেরেছেন, আর তাঁর এই ধরনের পদক্ষেপ পছন্দ করতেন তাঁর সহকর্মী ও অধস্তন কর্মীরা।
তিনি দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতাদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তাঁর নিয়োগে টুইট করে শুক্রবার অভিনন্দন জানিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রেসিডেন্ট ওমর আবদুল্লা, যদিও তার কযেক ঘণ্টা আগেই জনসমক্ষে কংগ্রেসের কঠোর নিন্দা করেন আবদুল্লা।
শুধুমাত্র সমরাঙ্গণের কৌশলের জন্য নয়, এখন ভৌগোলিক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সাইবার জগতের ক্রমাগত উন্নতির ব্যাপারে তাঁর উপলব্ধি ব্যক্ত করে আরও বেশি সম্মান অর্জন করতে হবে হুডাকে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে