এবার ভোট বাক্সেও খাবারের থালা: রাজনীতির নতুন স্বাদ দিচ্ছে কলকাতার খাদ্য উৎসব
ফুচকা থেকে লিট্টি চোখা, হিন্দিভাষীদের কাছে পৌঁছাতে সবকিছুই হাতিয়ার করেছে
- Total Shares
সুস্বাদু খাবার মানুষের হৃদয় জয় করতে পারে। কলকাতায় আবার খাবারের প্রতি মানুষের এই অদম্য প্রেমকে ভোট যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা ঠিক এই কাজটাই করে চলেছেন, শহর জুড়ে নানা খাবারদাবারের উৎসব করে।
অবাঙালি ভোটারদের খুশি রাখার চেষ্টাতেও কোনও খামতি নেই। তাঁরা যাতে 'ঘরের খাবারের' স্বাদ পেতে পারেন তার জন্য অন্য রাজ্যের খাদ্য সম্ভার নিয়েও খাদ্য উৎসব উদযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এর আগে বিহারের বিখ্যাত খাবার লিট্টি-চোখা উৎসব বা রাজস্থানের খ্যাত বাটি-চুড়মা উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল। এবার তৃণমূল কংগ্রেস ফুচকা উৎসবের ব্যবস্থা করেছে।
উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর অঞ্চলের (এই অঞ্চলে হিন্দিভাষী জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য) বাসিন্দাদের এবার বিভিন্ন ধরণের ফুচকা খাওয়াতে উদ্যত হয়েছে তৃণমূল। শহর জুড়ে পোস্টার ও হোর্ডিং টাঙানো হয়েছে। এই পোস্টারের ছবিতে একটি টেবিলের উপর রাখা একটি ফুচকার বাটি ও এক বাটি তেঁতুল জল ফুটে উঠেছে। আর এই টেবিলটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মন্ত্রী শশী পাঁজা।
ফুচকা দিয়ে কি ভোটারদের মন জয় সম্ভব? [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
ছবিতে ফুটে ওঠা মুখগুলোর একজনও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। কিন্তু, এই ছবিটি যেন প্রতীকী। ছবির মাধ্যমে তৃণমূল বার্তা পাঠাতে চাইছে যে দূর দেশ থেকে আগত এ রাজ্যের বাসিন্দাদের প্রতি তাদের সরকারের কতটা সহমর্মিতা রয়েছে।
মৎস্য উৎসব কলকাতায় প্রায়শই হয়ে থাকে, বিশেষ করে ইলিশের মরসুমে। বিভিন্ন এলাকার নেতা নেত্রীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এই ধরণের উৎসব ব্যবস্থা করেই থাকেন। মানিকতলার সাংসদ তো ইলিশ উৎসব আয়োজন করে এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, "ইলিশ মাছের দাম আকাশ ছোঁয়া। এই ধরণের উৎসব হলে চেখে দেখার সুযোগ হয়।"
কিন্তু তাই বলে ফুচকা? আর যাই হোক দামের দিক থেকে ইলিশের ধারেকাছেও যায় না ফুচকা।
বিজেপি ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধি করতে চাইছে, তৃণমূলও ভিন্ন ধরণের ভোট ব্যাঙ্কের গুরত্ব বুঝছে [ছবি: পিটিআই]
তৃণমূল মনে করছে ফুচকা উৎসবে লোক হয়ত কম আসবে, কিন্তু এই উৎসবের মাধ্যমে নিজেদের 'গুডউইল' তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতৃত্ব বোঝাতে চাইছেন যে শহরের হিন্দিভাষীরাও 'তাদেরই লোক'।
প্রতি বছরই রমজানের সময় বা বড়দিনের সময় কিছু না কিছু ব্যবস্থা থাকে। এবার তৃণমূল রাজ্যের হিন্দিভাষীদের জন্যও কয়েকটি ব্যবস্থা রাখতে উদ্যোগী হয়েছে।
আসলে এ রাজ্যে বিজেপি যতই নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধি করতে চাইছে তৃণমূল ততই রাজ্যের বিভিন্ন ধরণের ভোট ব্যাঙ্কের গুরত্ব বুঝছে। কিছুদিন আগে গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী শহরের মহারাষ্ট্র ভবনে গিয়ে ছিলেন। দলের নেতানেত্রীরা রাজ্য জুড়ে বেশ জাঁকজমক করেই গণেশ উৎসবে মেতেছিলেন। কিন্তু মহারাষ্ট্র ভবনে মমতার সশরীরে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের মারাঠীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের রাস্তায় হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার ছট পুজোর দিনে গঙ্গা পুজোরও ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই ভোটারদের খুশি করার বিভিন্ন পন্থা দুই দলের মধ্যেই লক্ষ করা যাবে। এর মধ্যে খাদ্য উৎসব উদযাপনের পন্থা কিন্তু সত্যি সত্যিই বেশ চমকপ্রদ।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে