কেরলে বন্যা: জনজীবন যখন বিপর্যস্ত তখনও ঘৃণা ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়
এখন দরকার একটু সহানুভূতি আর সাধ্যমতো সাহায্য
- Total Shares
অগস্টের ১০ কি ১১ তারিখ হবে। কেরলের বন্যার মাত্রা যখন বিপদসীমা ছুঁল তখন আমি ফেসবুকে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া শুরু করে দিলাম। তথ্যটি দিয়েছিলাম মূলত অমালয়ালি বন্ধুদের উদ্দেশে যাতে তাঁরা অনুদান দিতে পারেন, তবে আমার আশঙ্কা ছিল যে কেউই হয়তো এটা নজর করবে না। আমি তাদের কাউকে দোষ দিচ্ছি না। ঘটনা হল, জাতীয় সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে দেরিতে যে প্রচার শুরু করেছে এবং এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেননি। দেশের একটি রাজ্যকে যে এমন ভয়াবহ ভাবে বন্যা গ্রাস করছে, সে ব্যাপারে দিল্লির কাছে কোনও আভাস পর্যন্ত ছিল না।
কোচির কাছে একজন ব্যক্তি আরেকজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, ১৬ অগস্টের ছবি (সৌজন্য: রয়টার্স)
যারা ঘৃণা-বিদ্বেষে ভরা, তাঁরা অবশ্য জেগেছিলেন এর একটু আগে। যাঁরা বন্যায় জলবন্দি হয়ে পড়েছেন তাঁদের যাতে কোনও রকম সাহায্য না করা হয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যাতে কোনও সাহায্য না দেওয়া হয় সে জন্য উত্তর ভারতীয়দের উদ্দেশে টুইটারে প্রচার শুরু হয়ে যায়। তাতে বলা হয়, ‘গোমাংস ভক্ষক’ কেরলের পক্ষে এটাই ‘যথোপযুক্ত’।
নিউজরুমের সকলেই ওখানে থাকা আমার পরিবার ও পরিজনদের কথা জিজ্ঞাসা করছিল, তবে গতকালই তারা ওখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছে। দিল্লিতে থেকে এই প্রথম অনুভব করলাম যে আমি কতটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এত হইচইয়ের কিছুই অবশ্য কেন্দ্রের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি, তারা ব্যস্ত ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রয়াণ নিয়ে। কেরলের বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় বলে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে।
সারা রাজ্যে ২০০০-এর বেশি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তিন লক্ষের বেশি আর্ত। সামান্য একচিলতে জায়গা আর একফোঁটা জলের জন্য তাঁরা লড়াই করছেন। তহবিলের জন্য অর্থ জোগাড় করতে সমগ্র সুশীল সমাজ এখন একজোট হয়ে দিনরাত খেটে চলেছেন। রাজ্যের শাসক দল ও বিরোধী দল এখন একজোট হয়েছে। এই এক মাসে ১৮৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, জলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
চার দিন পরে হেলিকপ্টার এসেছে, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসেছেন পরশু রাতে। আমি ভাবছিলাম, উত্তর ভারতের কোনও রাজ্যে যদি এই একই ধরনের পরিস্থিতি হত! শশী থারুর যে কথা টুইটারে লিখেছেন, সে কথা কি ঠিক?
The flood situation here in Kerala is really bad. The national media coverage has been grossly inadequate compared to the gravity of the situation here. It is a sad reflection of the truism that the farther you are from Delhi, the less you matter in today's India. pic.twitter.com/bohOK9jpda
— Shashi Tharoor (@ShashiTharoor) August 15, 2018
প্রথমে দেওয়া ১০০ কোটি টাকা ও পরে দেওয়া আরও ৫০০ কোটি টাকাও যথেষ্ট নয়, আরও একটা ব্যাপার যথেষ্ট নয়, তা হল সহানুভুতি ও সহযোগিতা।
অনেকগুলো বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। উদ্ধারকাজের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব কী ভাবে রাজ্যটি সমস্ত সেনার হাতে সঁপে দিল এবং এ ব্যাপারে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিল। রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও অহং-বোধের জন্য বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি জলবন্দি আর্তদের উদ্ধারে জন্য উপযুক্ত সংখ্যায় হেলিকপ্টার নামাতে পারছে না, এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্টই হচ্ছে।
দোষারোপ করা চলেই। এতদিন রাজ্য বিজেপি মাথা নুইয়ে থাকলেও এই পরিস্থিতিতে তারা এখন বিশ্রী ভাবে মাথা মাথা তুলবে এবং উদ্ধার ও পুনর্বাসনের ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজবে। রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে অবশ্যই মতবিরোধ থাকবে, কিন্তু মানুষের জীবন তার মূল্য হতে পারে না।
উত্তর ভারতে বসবাসকারী ভারতীয়দের সহমর্মিতা আর তাদের সাধ্য মতো সাহায্যই এখন দরকার কেরলের। ঘৃণা-বিদ্বেষ মেশানো কথা বন্ধ করে এখন সাহায্য করুন। ময়ূরবিহারের সমাচার অ্যাপার্টমেন্ট ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে তহবিল গঠনের জন্য ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। অ্যামাজন ও পেটিএমে দান করার জন্য লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে। এই দুর্যোগ নিয়ে গলা তুলুন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত কথা লিখুন যাতে কেন্দ্র থেকে আরও বেশি করে সহায়তা আসে। যে রাজ্য এখনও কংক্রিটের জঙ্গলে ভরে না গিয়ে মনোরম রয়েছে সেই রাজ্যের কথা ভেবে চুপ করে থাকবেন না, এই পরিস্থিতিতে চুপ করে থাকাটা কাম্য নয়।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে