কাঠুয়া ও উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ড: মোদীকে কেন জবাব দিতে হবে
মোদী শুধু দেশ ধ্বংস করেননি, দেশের আত্মাটাকেই ধ্বংস করে দিচ্ছেন
- Total Shares
কালের নিয়মে বাড়িগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, হ্রদের জল শুকিয়ে যায়, প্রযুক্তিও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এমনকি শরীরও একদিন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমাজে মরচে ধরে এবং গোটা দেশ ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে ওঠে। এর পরিণাম কিন্তু ভয়ঙ্কর।
এ তো আকছার ঘটছে। এবং বর্তমানে ভারতও এই রোগে আক্রান্ত। সদ্য ঘটে যাওয়া দু'দুটি ন্যক্কারজনক ঘটনার পরে আমি এই কথা বলতে কিছুটা বাধ্য হচ্ছি।
জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় এক আট বছরের কন্যা সন্তানকে বারংবার ধর্ষণ করা হয়েছে। কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্কের পৈশাচিক অত্যাচারের শিকার হয়েছে ওই মেয়েটি। তারা শুধু ধর্ষণ করেননি মেয়েটিকে হত্যাও করেছেন। এত বড় জঘন্য ঘটনার পরেও কেন দোষীদের নাম অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে তা নিয়ে একটি রাজনৈতিক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আইনজীবী এক জোট হয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। এই ঘটনা সকলকে অবাক করেছে। কিন্তু তার চেয়েও আশ্চর্যের ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মন্ত্রিসভার দুই সদস্য জনসমক্ষে অপরাধীদের সমর্থন জানিয়েছেন।পুলিশ অফিসাররা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং এর ফলে অপরাধীরা আর তাদের সমর্থকরা যেন বাড়তি সাহস পেয়েছে। সমাজের কি দুরবস্থা। মানবিকতা বলে আর কিছুই বাকি রইল না।
জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়ায় এক আট বছরের কন্যা সন্তানকে বারংবার ধর্ষণ করা হয়েছে
যে সমাজে একটি আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে খুন করবার পর সরকারও তদন্ত-প্রক্রিয়া বন্ধ করতে উদ্যত হয় তখন সেই সমাজের পতন তো সময়ের অপেক্ষা।
উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতেও একই ভাবে ১৬ বছর একটি মেয়েকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। দোষীরা এখনও ধরা পড়েননি। মেয়েটি সাহায্য ভিক্ষে করেছিল, কেঁদেছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকারের টনক নড়েনি। তার বাবাও দুষ্কৃতী ও পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন। তিনি মারা যান। এই মুহূর্তে মেয়েটির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অপরাধীরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশ সরকারের আর এক বিজেপি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করিয়ে নিতে পেরেছে। একেই তো বিজেপির ঘরানার খেলা বলা হয়। তারা আচ্ছে দিনের স্বপ্ন ফেরি করে, কিন্তু এও ভালো করে জানে যে এই স্বপ্ন কোনওদিনও সফল হবে না।
যে কোনও সুস্থ সমাজে নারীদের উপর এরকম যৌন নিগ্রহ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলোর উপর সংবাদমাধ্যমের নজরদারি থাকবে যতদিন না এর চেয়ে আরও বড় ধরনের একটি ঘটনা ঘটছে। আমজনতাও সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের ক্ষোভ উজাড় করে দেবে।
কিন্তু সরকারের এধরণের পদক্ষেপ অভিপ্রায় নয় যেখানে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার অভিযোগ উঠেছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে সরকারের মতো শক্তিশালী সংস্থা আসলে নিজেদের তৈরি করা দুষ্কৃতীদের আখড়া রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
নরেন্দ্র মোদী 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' স্লোগান তুলেছিলেন। অথচ তাঁর আমলেই মহিলা নিগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ভাবেই জনগণকে ঠকাবার চেষ্টা চলছে।
ভারত কিন্তু এই ধরণের ভাঁওতায় বিরক্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নৈতিকতা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। রাজনৈতিক নেতারা বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু নারী সুরক্ষা নিয়ে তাঁদের এমনিতে কোনও মাথাব্যথা নেই।
মোদী অবশ্য এফডিআই, জিএসটি ও মেক ইন ইন্ডিয়া নিয়ে সময় ব্যয় করতে বেশি পছন্দ করেন। ভারতে লিঙ্গবৈষম্যের রেখচিত্র কিন্তু নিম্নগামী। এই ধরণের ঘটনা ঘটলে মোদী অদ্ভুত ভাবে চুপ করে যান।
জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলোকে কোনও ভাবেই শেয়ার বাজারের দর ওঠা নামার মতো হিসাব করা যাবে না।
পরের দিন মোদী যদি আবার কোনও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন, তা হলে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে। লোকে প্রশ্ন তুলবে মোদী ও মোদী প্রশাসনের যোগ্যতা নেই। মোদী নিজেও জানেন যে তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলো অনেকটা সাপের তেল বিক্রেতাদের মতো।
আমি আশা করছি আগামীকাল যখন তিনি টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন তখন তিনি দেশের দিনদুঃখীদের আওয়াজও শুনতে পারবেন। কিংবা এক পিতার গলার স্বর তাঁর কানে পৌঁছাবে না, যিনি তাঁর কন্যার অপরাধীদের সাজা পাওয়া দেখতে আইনের দরজায় দরজায় ঘুরছেন।
ইতিমধ্যেই মোদী দেশের অনেক কিছু ধ্বংস করে ফেলেছেন। তিনি তো দেশের আত্মাতাকেই ধ্বংস করে ফেলেছেন।