পুলওয়ামা জঙ্গিহামলা: এই ভয়াবহ ঘটনার পর কাশ্মীরের বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন
শুধুমাত্র দমন করে সন্ত্রাস বন্ধ করা যাবে না, উপত্যকার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে
- Total Shares
পুলওয়ামাতে ৪০জন সিআরপিএফ জওয়ানের শহিদ হওয়ার ঘটনাটি অভাবনীয়। এই ঘটনা গোটা দেশকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর আমাদের নজর ফেরাতে বাধ্য করেছে।
কয়েক দশক ধরেই নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ ছাড়াই কাশ্মীরে রাজনীতি হয়ে চলেছে। আমার মতে বৈষম্যের রাজনীতি চলছে গোটা কাশ্মীর জুড়ে। সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি স্বাধীনতার পরে সংবিধানের যে ৩৭০ ধারা চালু করা হয়েছিল তাও এখন শুধুমাত্র 'নাম ক্যা ওয়াস্তে' বলবৎ রয়েছে।
রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক নাকি কেন্দ্রের নির্দেশেই কাজ করে থাকেন। তিনিও কাশ্মীরে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ।
যে ভাবে রাজ্যপাল মালিককে দিয়ে রাজ্য শাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কোনও ভাবেই রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাসিন্দাদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়, তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত এই বিশ্বাসও তাদের মধ্যে স্থাপন করা সম্ভব নয়।
কাশ্মীরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে [ছবি: পিটিআই]
অনেকেই বলছেন কাশ্মীর পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনও চেষ্টাই কেন্দ্রের তরফ থেকে করা হয়নি। যতক্ষণ না পর্যন্ত ধাপে ধাপে পরিবেশ স্বাভাবিক করা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার সুরাহা হবে না।
বিজেপিকে সর্বদাই কাশ্মীরের পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য দোষারোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে - এই পরিস্থিতিতে তথাকথিত 'ধর্মনিরপেক্ষ' ও বাম দলগুলো কী করছে? তারাও তো কাশ্মীরিদের মন জয় করতে যারপরনাই ব্যর্থ।
এর পাশাপাশি, সুরক্ষার ফাঁকফোকরে উপরও নজর দিতে হবে।
আত্মঘাতী হামলা জৈশ-ই-মহম্মদের নিজস্ব ধরণ। ১৯ বছর আগে কাশ্মীরের প্রথম আত্মঘাতী হামলাও জৈশরা সংগঠিত করেছিল। সতেরো বছর আগে - ২০০০ সালে - সেনাবাহিনীর ১৫-কর্পসের শ্রীনগর সদরদফতরে একটি বিস্ফোরক ভর্তি মারুতি গাড়ি প্রবেশ করেছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী দরজার বাইরেই সেই গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়া বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছিল।
কিন্তু সেই বছরের বড়দিনেই এক ব্রিটিশ নাগরিক এমনই একটি আত্মঘাতী হামলা করেছিল। সেই ঘটনায় পাঁচজন সেনাকর্মী-সহ ১১জন নিহত হয়েছিলেন।
জৈশের সঙ্গে লস্কর-ই-তৈবার পার্থক্য এখানেই। লস্কর আত্মঘাতী হামলা সংগঠিত করে না কারণ ইসলাম ধর্মে তা নিষিদ্ধ।
২০০১ সালে জঙ্গিরা কাশ্মীর বিধানসভা ভবনে আক্রমণ করেছিল, সেই প্রথমবার জঙ্গিহানার ঘটনার নিন্দা করেছিল পাকিস্তান [ছবি: রয়টার্স]
জৈশ এর আগে তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে পাকিস্তানকেও আন্তর্জাতিক স্তরে লজ্জিত করেছিল।
২০০১ সালে ৯/১১র ঠিক এক মাসের মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভবনে হামলা চালায় জৈশ। এই প্রথম জঙ্গিহামলার জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল পাকিস্তানকে।
শেষ ১২ বছর ধরে ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীগুলো ভেবে এসেছে যে কাশ্মীরের জৈশ নেতৃত্বকে তারা খতম করে ফেলেছে।
কিন্তু এবার এক তরুণ কাশ্মীরি জৈশ নেতৃত্বের নির্দেশে যে ভাবে হামলা চালাল তা সত্যিই চিন্তার বিষয়।
আজ যে যে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে শুধুমাত্র দমন করেই কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদ ঠেকানো যায় তাঁরা ভুল করছেন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রয়োজন আছে এবং কাশ্মীরীদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, তারা কিন্তু ভারতের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
খোলাখুলি আলোচনার কোনও বিকল্প নেই। যতক্ষণ না তা হচ্ছে, কিংবা বিদ্বেষকারীদের আটকানো যায়, ততক্ষণ সন্ত্রাস চলতেই থাকবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে