জঙ্গিসংগঠনে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ: কাশ্মীরে নতুন যুগের সন্ত্রাসবাদ শুরু
অপারেশন অল আউটকে পাত্তা না দিয়ে তরুণরা বন্দুক হাতে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে পিছপা হচ্ছে না
- Total Shares
স্কুল ছুট কিশোররা তো ছিলেনই, কাশ্মীরে এখন শিক্ষিত পড়ুয়া এমনকি শিক্ষাবিদরাও হাতে বন্দুক তুলে নিচ্ছেন।
সুরক্ষা বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়ার মাত্র দু'দিন আগেই কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সহকারী অধ্যাপক মহম্মদ রফি ভাট জঙ্গিসংগঠনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় আবার প্রমাণিত হল যে ভারতের এই অশান্ত রাজ্যে কী ভাবে সন্ত্রাসবাদের আরও একটি নতুন ধারা তৈরি হয়ে গিয়েছে।
৬ মে শোপিয়ান জেলাতে সুরক্ষা বাহিনীর হাতে রফি-সহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে কুখ্যাত হিজবুল মুজাহিদিন সদস্য সাদ্দাম পাদ্দেরও ছিলেন।পাঁচজন সাধারণ মানুষও এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
বছর দুয়েক আগে তৎকালীন হিজবুল শীর্ষনেতা বুরহান মুজাফ্ফর ওয়ানির সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের ১১ জন সদস্যের ছবি ভাইরাল হয়েছিল। সেই ছবিটির একমাত্র জীবিত ব্যক্তি ছিলে পাদ্দের। একটি ফুলের বাগানে তোলা ওই ছবিটি কিন্তু আধুনিক ধারার সন্ত্রাসবাদের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
মহম্মদ রফি ভাট
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে এই জঙ্গিদলের একজনকে বাদ দিয়ে সকলেই নিহত হয়েছেন। শুধুমাত্র তারিক পণ্ডিত আত্মসমর্পণ করেছেন।
শক্ত হাতে, একেই সঙ্গে বুলেটের জোরে, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বর্তমানে কাশ্মীরে জঙ্গিদের মোকাবিলা করে চলেছেন।
সুরক্ষা বাহিনীগুলোর হাতে ২০১৭ সালে মোট ২১৮জন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এ বছর, এই সমাজবিজ্ঞানের গবেষক সহ, আরও ৬০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছেন।
সমস্যা হচ্ছে অপারেশন অল আউটকে কোনও রকম পাত্তা না দিয়েই মহম্মদ রফির মতো তরুণরা বন্দুক হাতে তুলে নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে পিছপা হচ্ছেন না।
ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে কাশ্মীরি তরুণদের জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হওয়ার হার ২০১৭ সালে ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১২৬ জন কাশ্মীরি তরুণ উগ্রবাদী সংগঠনে যোগদান করেছেন, যা ২০১৬ সালের থেকে ৩৮জন বেশি।
এ বছরের পরিস্থিতি আবার খারাপ। পিটিআইয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী এপ্রিলের মধ্যেই ৪৫ জন কাশ্মীরি তরুণ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন চিকিৎসক ও একজন ডাক্তারির ছাত্রও রয়েছেন।
মানেটা কী দাঁড়াল? স্কুলছুট ওয়ানি বা তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ঈশা ফজলিকে হত্যা করবার পরেও শিক্ষিত তরুণ মান্নান ওয়ানি এবং আলিগড় মুসলিম বিদ্যালয়ের এক গবেষক বন্দুক হাতে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। জঙ্গিদের সাপ্লাই লাইন কিন্তু রোধ করা যাচ্ছে না।
এ ক্ষেত্রে সুরক্ষা বাহিনীগুলোকে কি সফল বলা যাবে?
মৃত্যুর পর বুরহান ওয়ানির শোকস্তব্ধ পরিবার
সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন যে এই পরিস্থিতিতে সুরক্ষা বাহিনী বা জঙ্গি সংগঠনগুলো কেউই নিজেদের লক্ষে পৌঁছাতে পারবে না। তিনি বলেছিলেন, "একটা সময় আসবে যখন জঙ্গি সংগঠনগুলোও এই কথাটি বুঝতে পারবে। একমাত্র শান্তির বার্তা পাওয়া গেলেই দু'পক্ষ সফল হতে পারবে।"
রাওয়াতের এই মন্তব্যের কিছুদিনের মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজিপি কুলদীপ হুড়া জানান যে সন্ত্রাসবাদীদের যে ভাবে হত্যা করা হচ্ছে তাতে ২০১৮ সালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
ভাগ্যের দোহাই দিন বা বিষয়টিকে কাকতালীয় বলুন, পবিত্র রমজান মাস যত এগিয়ে আসছে পরিস্থিতি ততই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। তা হলে স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে অস্ত্র সংবরণ করে নেওয়া হয়েছে না কেন?
এ বছরের শেষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ ভাবে রাশিয়ার ইউরাল পর্বতে অভিযানে যাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে, কাশ্মীরি তরুণরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ব্রাত্য কেন?
এই মুহূর্তে কিন্তু কাশ্মীরি তরুণদের সঙ্গে অস্ত্র সংবরণ করে নেওয়াটাই শ্রেয়। দিল্লি ইতিমধ্যেই দেশের অনত্যম গুপ্তচর দিনেশ্বর শর্মাকে কাশ্মীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবার জন্য নিযুক্ত করেছে।
শর্মা এর আগে দেশের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর নেতৃত্বে ছিলেন এবং কাশ্মীর নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। তাই তাঁকে অন্তত আলাদা করে কাশ্মীর পরিস্থিতি বোঝাতে হবে না। তিনি শুধু উপযুক্ত সূত্র খুঁজে বের করবেন।
অস্ত্র সংবরণ কিন্তু কাশ্মীরি তরুণদের ফের সঠিক দিশা দেখতে পারে।
এই লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে