জেনে নিন, কোন পাঁচটি কারণে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচন জিততে চলেছে বিজেপি
মোদী প্রচার শুরু করতেই ভাগ্য ঘুরল বিজেপির
- Total Shares
১৫ মে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হতে চলেছে। আর, এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলই নিজেরা জিতবে বলে দাবি করে চলেছে। রাজ্যে বর্তমান শাসকদল কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দেবগৌড়ার জেডি (এস) দশ বছর বাদে ফের সরকার গঠন করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। পাঁচ বছর বাদে আবার সরকার গঠন করতে মরিয়া বিজেপি।
তবে জেডি(এস) যতই ক্ষমতা দখলের কথা বলুক, একটা বিষয় পরিষ্কার যে এই নির্বাচনে মূল লড়াইটা কিন্তু কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যেই হচ্ছে।
বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যে বিজেপি অনেক বেশি মরিয়া, একই সঙ্গে, যথোপযুক্ত প্রচার চালিয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন পাঁচটা বিষয় বিজেপিকে কর্নাটক নির্বাচনে এগিয়ে রেখেছে।
মোদীর সৌজন্যেই একের পর এক রাজ্য জয় করেছে বিজেপি
মোদী ফ্যাক্টর
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিহার ও দিল্লি বাদে সবকটি বিধানসভা নির্বাচনে (যেখানে বিজেপি জিতেছে) নরেন্দ্র মোদী বিজেপির তুরুপের তাস হয়ে উঠেছেন। মূলত মোদীর সৌজন্যেই একের পর এক রাজ্য জয় করেছে বিজেপি। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে মোদী যদি গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার না করতেন তা হলে বিজেপির আর গুজরাটে ক্ষমতা দখল করা হত না।
বিজেপি সভাপতি ঘোষণা করেছিলেন ১৮২টি আসনের মধ্যে তাঁরা ১৫০টি আসনে জয়লাভ করতে চান। কিন্ত শেষ পর্যন্ত মাত্র ৯৯টি আসন জিতে খুশি থাকতে হয় বিজেপি সদস্য সমর্থকদের। এই যে অর্ধেকের চেয়ে মাত্র আটটি বেশি আসন জিতে গুজরাটে ক্ষমতা দখল করল বিজেপি, তার জন্য পুরো কৃতিত্বটাই মোদীর প্রাপ্য।
কর্নাটকে মোদী পয়লা মে থেকে প্রচার শুরু করেছেন আর তার পর থেকেই রাজ্যে বিজেপির প্রচারে আলাদা একটি বেগ পেয়েছে। শুরুতে ঠিক করা হয়েছিল যে কর্নাটক জুড়ে ১৫টি জনসভায় উপস্থিত থাকবেন মোদী। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীর জন্য মোট ২১টি জনসভার আয়োজন করেছিল।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে
বিজেপি ও অমিত শাহ
কর্নাটকে বিজেপির ক্যাডার নির্ভর সংগঠন কংগ্রেসের চাইতে অনেক বেশি সুসংগত বলে মনে করা হয়। একেবারে বুথ পর্যায় থেকে শুরু করে রাজ্য নেতৃত্ব অবধি বিজেপির নির্বাচনী মেশিনারি সত্যি ঈর্ষা করার মতো। কর্নাটকে আরএসএস-ও যথেষ্ট সাহায্য করে বিজেপিকে। শাহের রাজনৈতিক দক্ষতা এখন প্রশ্নাতীত। এক সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো ছোট ছোট নির্বাচন বিজেপিকে উতরে দেওয়ার জন্য শাহ সিদ্ধহস্ত। একেবারে বুথ স্তরের জন্যও নির্বাচনী কৌশল ঠিক করে দেন অমিত শাহ। বিজেপির ভোট মেশিনারির অন্যতম অস্ত্র তো তিনিই।
সিদ্দারামাইয়া
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া প্ৰতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের মুখোমুখি হতে চলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কর্নাটকে বিভাজনের রাজনীতি করেছেন। কর্নাটকের মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। লিঙ্গায়তকে আলাদা একটি ধর্মের আখ্যা দিয়ে ও টিপু সুলতানের জন্ম শতবার্ষিকী বড় করে উদযাপন করে তিনি নির্দিষ্ট কয়েকটি বর্ণ ও ধর্মকে তোষণ করে চলেছেন। কিন্তু তা দিয়ে কংগ্রেসের খুব একটা লাভ হবে না, কারণ অন্য ধর্ম ও জাতের লোকেরা এই তোষণ-রাজনীতির উপর যারপরনাই ক্ষিপ্ত।
রাহুল গান্ধী
কংগ্রেস সভাপতি কিন্তু এখনও মোদীর মতো নিজেকে ম্যাচ উইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। গুজরাট নির্বাচন থেকেই রাহুল কিন্তু নেতিবাচক রাজনীতির উপর আস্থা রেখে চলেছেন। কর্নাটকের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে কংগ্রেসের কী কি পরিকল্পনা রয়েছে তা কিন্তু খোলসা করছেন না কংগ্রেস সভাপতি। তিনি শুধুই মোদী, অমিত শাহ ও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী বিএস ইয়েদ্যুরাপ্পার সমালোচনা করে চলেছেন।
মোদীর জনসভাগুলোতে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। অমিত শাহের প্রচারগুলোতেও ব্যাপক জনসমাগম হয়েছিল। উল্টোদিকে, রাহুলের জনসভাগুলো কিন্তু অপেক্ষাকৃত ফাঁকা ছিল। এই জনসভাগুলোতে রাহুল একাই কথা বলে গেলেন। কিন্তু বিজেপির জনসভাগুলোতে দর্শকরাও যাতে জনভার অংশ হয়ে উঠতে পারেন তার ব্যবস্থা চেষ্টা করা হয়েছিল।
নির্বাচনের মাত্র দিন চারেক আগে, ভোটারদের সামনে নিজের রাজনৈতিক উচ্চতা বাড়াতে, রাহুল জানিয়েছেন যে ২০১৯ নির্বাচনে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি চান যে কর্নাটকের জনতা যেন তাঁকে মোদীর সমতুল্য হিসেবে গণ্য করেন। কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য একমাত্র পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি ছাড়া আর কোনও কৃতিত্বই দাবি করতে পারবেন না রাহুল। তাই এই ধরণের প্রচারে নির্বাচনের ফলাফলে কোনও প্রভাব তো ফেলবেই না। বরং, উল্টে, কংগ্রেসেরই ক্ষতি করে দিতে পারে।
গুজরাট নির্বাচন থেকেই রাহুল গান্ধী নেতিবাচক রাজনীতির উপর ভরসা করে চলেছেন
ত্রিমুখী লড়াই
কর্নাটকে লড়াই যদি দু'টি দলের মধ্যে হত তা হলে কংগ্রেসের লাভ ছিল। কিন্তু এ রাজ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে যার থেকে লাভবান হবে বিজেপি।
বিজেপি নয়, জেডি(এস) কিন্তু মূলত কংগ্রেসের ভোটের উপর থাবা বসাবে। কংগ্রেসের কপালে প্রচুর প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটও রয়েছে যা বিজেপি ও জেডি(এসের) মধ্যে ভাগ হবে।
১৯৮৩ থেকে গত ৩৫ বছর ধরে প্রত্যেকবারই কিন্তু কর্নাটকে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে কংগ্রেস এই ধারা ভেঙে দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। জেডি(এস) কোনও ভাবেই নির্বাচন জেতার দাবিদার নয়। সে ক্ষেত্রে ১৫ মে, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিনে কিন্তু বিজেপিকে এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে।