কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার শিরে সংক্রান্তি
দেবগৌড়াকে এখন কর্ণাটক রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নামতে হচ্ছে
- Total Shares
কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের আর ২০ দিনও বাকি নেই। ইতিমধ্যেই, রাজ্যের রাজনৈতিক পারদ চড়তে শুরু করে দিয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো মহা সমারোহে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। ১২ মে এই রাজ্যে ভোটগ্রহণ হবে।
তবে এত প্রচারের পরেও, জনমত সমীক্ষা রায় দিয়েছে যে কোনও দলই এ বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। সমীক্ষার নিরিখে ৯০ থেকে ৯৫টি আসন পেয়ে কংগ্রেসের এগিয়ে থাকার কথা, কিন্তু কংগ্রেসও ২২৪ আসন বিশিষ্ট কর্নাটকের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারবে না।
প্রধান বিরোধীদল বিজেপির ৮৫ থেকে ৯০ টি আসনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার দল, জনতা দল (সেকুলার), ৩৫ থেকে ৪০টি আসন জিতে তিন নম্বরে শেষ করতে পারে। নির্বাচনের ফলাফল ১৫ই মে ঘোষণা করা হবে। সে দিন যদি এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে দেবগৌড়াই সব চেয়ে খুশি হবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর সমর্থন ছাড়া কংগ্রেস কিংবা বিজেপি কেউই সরকার গঠন করতে পারবে না এবং তিনিও নিজের ইচ্ছেমতো দর কষাকষি করে নিতে পারবেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার দল, জনতা দল (সেকুলার), ৩৫ থেকে ৪০টি আসন জিতে তিন নম্বরে শেষ করতে পারে
নির্দিষ্ট কোনও একটি দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি - কর্নাটকের ইতিহাসে এই পরিস্থিতি এর আগে বেশ কয়েকবার সৃষ্টি হয়েছে। জেডিএস-ও এর আগে কংগ্রেস ও বিজেপি দুটি দলের সঙ্গেই জোট বেঁধেছিল। সুতরাং, যে কোনও দু'টি দলের মধ্যে একটির সঙ্গে জোট বাঁধতে দেবগৌড়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।
কিন্তু জেডিএসের সমস্যাটা অন্য জায়গায়। দলে অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে। দেবগৌড়া যখন কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে পক্ষপাতী তখন তাঁর পুত্র তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর প্রথম পছন্দ বিজেপি।
২০০৪ সালে দেবগৌড়ার সমর্থনে ধরম সিংয়ের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিল কংগ্রেস। এর দু'বছর বাদে, ২০০৬ সালে, তাঁর পুত্র কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপির সমর্থনে নিজে সরকার গঠন করেন। যদিও, কুমারস্বামীর সরকরেরও এক বছরের মধ্যে পতন ঘটে।বছরের পর বছর ধরে দেবেগৌড়া নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এ বছরেও তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতাকেই হাতিয়ার করে তিনি নির্বাচন জিততে চাইছেন।
গৌড়া রাজ্যের ভোক্কালিগ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ নেতা। রাজ্য জুড়ে এই সম্প্রদায়ের ১২ শতাংশ ভোট রয়েছে। এ বার নির্বাচনের প্রাক্কালে দেবগৌড়া আবার বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে সমঝোতা করেছেন।
কর্নাটকের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত। দেবগৌড়া মনে করছেন দেশ জুড়ে এখন একটা দলিত বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে এবং জেডিএস-বিএসপির সমঝোতার জন্য দলিতরা তাঁকেই ভোট দেবেন।
এ বার নির্বাচনের প্রাক্কালে দেবগৌড়া আবার বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে সমঝোতা করেছেন
দেবগৌড়া আরও একটি আসা করছেন - জেডিএস ও বিএসপি উভয় দলই নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেন। সুতারং, এই সমঝোতা সংখ্যালঘু ভোট পেতেও সাহায্য করবে। তবে তাঁর এই স্বপ্নপূরণ খুব সহজে হবে বলে মনে হচ্ছে না।
এমআইএমের শীর্ষ নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি কিন্তু মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন যাতে দেবগৌড়া ও কুমারস্বামী মুসলমানদের সমর্থন লাভ করতে পারেন। তিনি নিজেও কর্নাটকে প্ৰচার করে চলেছেন। তবে দেবগৌড়ার জন্য এটি একমাত্র সমস্যা নয়।
বিএসপির সঙ্গে সমঝোতা করবার পর থেকেই অবশ্য আর মায়াবতীকে খুঁজে পাচ্ছে না জেডিএস।
১৯৯৪ সালে ২২৪টি আসনের মধ্যে ১১৩টি আসনে জয়লাভ করেছিল জেডিএস। কিন্তু এ বছর সেই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি প্রায় অসম্ভব। উল্টে দেবগৌড়াকে এখন কর্নাটক রাজনীতিতে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নামতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে দেবগৌড়ার শিরে সংক্রান্তি।