বিধানসভা ভোটের আগে কৃষকদের মন জয়ে নেমেছেন কে চন্দ্রশেখর রাও

নিখরচায় ৫ লক্ষ টাকার জীবনবিমা-সহ কৃষকবান্ধব বহু প্রকল্প চালু

 |  3-minute read |   12-06-2018
  • Total Shares

কৃষকদের মন জয় করতে কোনও সত্যি কথা বলতে কি, পন্থাই বাদ রাখেনি তেলাঙ্গনা সরকার। প্রতিটি চাষের মরসুমে একরপ্রতি ৪,০০০ টাকা করে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া ছাড়াও জলের আকাল ব্যবস্থা করার পাশাপাশি চাষযোগ্য এলাকা বৃদ্ধি করার জন্য রায়তু বন্ধু প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের বিনিয়োগে সহায়তা করছে সরকার।

সেচমন্ত্রী টি হরীশ রাও উল্লসিত হয়ে বলেন, “ইয়াসাঙ্গি (রবি) মরসুমে ১৩.৫৭ লক্ষ একর জমিতে জলের ব্যবস্থা করে সেচের ক্ষেত্রে আমরা অসাধ্যসাধন করেছি, এর মধ্য দিয়ে আমরা নতুন করে ইতিহাস রচনা করছি। শেষ জমিটি পর্যন্ত জলের নিশ্চয়তা দেওয়াই আমদের লক্ষ্য।” আরও বেশি করে সেচের সুবিধা দেওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক ভাবে জলসম্পদের ব্যবস্থাপনাও আরও বাড়ানো হয়েছে বলে তেলাঙ্গনার সেচমন্ত্রী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “সাধারণত এক টিএমসি-ফুট (অর্থাৎ ১০০ কোটি ঘন ফুট) জল দিয়ে ৮,০০০ একর জমিতে জলের চাহিদা মেটানো যায়। আমরা চালু-বন্ধ (অন-অ্যান্ড-অফ) প্রযুক্তি প্রয়োগ করে জলের অপচয় রোধ করেছি এবং একই সঙ্গে জলের সর্বাধিক ব্যবহারও সুনিশ্চিত করেছি। এর ফলে ফসলের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে।” রাজ্যের সবচেয়ে নিবিড় ভাবে সেচের উদাহরণ হল—নাগার্জুনসাগর লেফ্ট ব্যাঙ্ক ক্যানাল বা বাঁ-পাশের সেচখাল দিয়ে এক টিএমটি-ফুট জলের মাধ্যমে ১১,৭৯৬ একর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যদিও রেকর্ড হল, নিজামসাগরে প্রতি এটিএমটি-এফটি জলে সবচেয়ে বেশি জমিতে (১৩,০২১ একর) সেচকাজ করা সম্ভব হয়েছে। সাবেক অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে এক টিএমটি-এফটি জলে সর্বাধিক ৭,০০০ একর জমিতে সেচ করা সম্ভব ছিল। তাই এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, জলের উপযুক্ত ও সর্বাধিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেলাঙ্গনা সফল হয়েছে।

হরীশ রাওয়ের দাবি, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দশ বছরে কংগ্রেস সরকার যেকানে ৫.৭০ একর জমিতে সেচের জলের ব্যবস্থা করতে পেরেছিল সেখানে টিআরএস (তেলাঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি) সরকার নতুন করে ১০,০০,০০০ একর জমিতে সেচের জলের ব্যবস্থা করেছে। নতুন এই রাজ্য তৈরি হওয়ার পর থেকে সেচের বিচারে এখন তেলঙ্গনাই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে। বর্তমানে চলতে থাকা মিশন কাকাটিয়ার মাধ্যমে কালেশ্বরম প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে যা রাজ্যের সেচের ছবিটাই পুরোপুরি বদলে দিতে চলেছে। 

body_061218013938.jpg

৭ জুন হায়দরাবাদে “চার বছরে রাজ্যের অগ্রগতি এবং সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক আলোচনাসভায় হরিশ রাও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের লক্ষ্য হল শ্যামল তেলঙ্গনা। সেচ দপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই আজকে এই রাজ্য পুরো দেশকে জলসম্পদ কা ভাবে ব্যবহার করতে হয় তার দিশা দেখাতে পারছে।   

এক একর জমি থেকে আগে যেখানে ৪০-৪৫ বস্তা শস্য পাওয়া যেত, এখন জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও তার ব্যবহার নিবিড় করতে সেচ দপ্তর যে পদক্ষেপ করেছে তার ফলে সেখানে একরপ্রতি ৫০-৫৫ বস্তা শস্য ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা।

গোদাবরী থেকে পাওয়া ৯৫৪ টিএমসি-এফটি জল এবং কৃষ্ণা থেকে প্রাপ্ত জল—এই দুই-ই পরিম্পূর্ণ ভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্য রয়েছে এই রাজ্যের, একই সঙ্গে পুরোনো সমস্ত পদ্ধতিও আধুনিক করার লক্ষ্য তারা রেখেছে। ৩৪টি জলাশয়ের পুনর্নির্মাণের জন্য ড্যাম রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডিআরআইপি) স্কিমে ৬৭৫ কোটি টাকা তারা চেয়েছে, একই সঙ্গে ২৮টি জায়গায় সেচের নিবিড় প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের কাছেও আর্থিক সহায়তা চেয়েছে।

এখনও পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী এই বছর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হবে তেলাঙ্গনায়, তাতে বেশ খানিকটা জল সঞ্চয় করে ফেলা যাবে এবং তা কৃষকদের পক্ষেও বেশ ভালো হবে। তবে টিআরএস শুধু এই কাজটিই করছে এমন নয়। সরকার যে সত্যিই রায়তু (কৃষক) বন্ধু, সে কথা বোঝানোর জন্য স্বাধীনতা দিবসের পরে রায়তু যাত্রা করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)। এই যাত্রায় তিনি বাছাই করা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং বোঝাবেন সরকার সত্যিই কৃষকবন্ধু।

ভারতীয় জীবনবিমা নিগমের সহযোগে রাজ্যের ৫৮,০০,০০০ কৃষকের জন্য নিখরচায় ৫ লক্ষ টাকার জীবনবিমা-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প শুরু করেছেন। এই ঘটনাকে “আমার জীবনে করা সবচেয়ে মহৎ কাজ” বলে বর্ণনা করে কেসিআর বলেন, “কৃষকদের জীবন হল অনেকটা সাপলুডো খেলার মতো। ঝুঁকি নিয়ে অনেক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় আর আমাদের এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যাতে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসিটা কৃষকই হাসেন।”

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

AMARNATH K MENON AMARNATH K MENON @amarnathkmenon

The writer is Hyderabad-based and senior editor, India Today.

Comment