প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাছে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের চ্যালেঞ্জ কতটা কঠিন হবে?
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিতে হবে, জনসাধারণের কাছে যেতে হবে
- Total Shares
বেশ কয়েকটি বিষয়েই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধেরাকে আগুন নিয়ে খেলতে দেখা যাচ্ছে।
স্বামী রবার্ট ওয়াধেরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর সেই অভিযোগের বিরুদ্ধে বেশ আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। রবার্টকে তিনি নিজের গাড়িতে বসিয়ে জামনগর হাউসে ছেড়ে দিয়ে আসছেন। এর মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা বোঝাতে চাইছেন এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগকে পাত্তা দেন না তিনি। কিন্তু একই সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ, শাসকরা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ও সিবিআইএর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার মদতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, "দুনিয়া জানতে হ্যায়, কেয়া হো রহা হ্যায়" (যা ঘটছে তা গোটা পৃথিবীই জানতে পারছে)।
এমন যেন মনে যা হয় যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দুর্নীতিকে সমর্থন করছেন [সৌজন্য: টুইটার]
আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, রবার্টের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ রয়েছে যা আইনের চোখে খুব বড় ধরণের অপরাধ নয়, এ কথা আদালতে তা যদি প্রমাণ করে দেওয়া যায় তা হলে তার থেকে স্বভাবতই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারবেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
রাজনৈতিক ময়দানেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে রয়েছে। মিশন পূর্ব উত্তরপ্রদেশ তো বেশ বড় একটা চ্যালেঞ্জ। জাত-পাত, ধর্ম, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই ধরণের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে এখন আমজনতার কাছে পৌঁছতে হবে।
এর পাশাপাশি তাঁকে আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে তাঁদের 'ঘরের মাঠে' লড়াই করতে হবে। আশা করা যায় কংগ্রেসের নতুন সাধারণ সম্পাদক টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে নিজের সুবিধার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাতিয়ার করবেন।
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। প্রিয়াঙ্কাকে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে তাঁর ছায়ায় কোনও ভাবেই দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী ঢাকা না পড়ে যায়। আর এটা এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় যে এই বিষয়ে কেউই তাঁকে পরামর্শ দিতে পারবে না। ভাই-বোনের সম্পর্কে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি (একমাত্র মা সোনিয়া গান্ধী ছাড়া) পরামর্শ দিতে পারবেন না।
সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের পর প্রথম কিছুদিন তাঁকে নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ছিল। 'ব্র্যান্ড প্রিয়াঙ্কা'র সম্পর্কে এটাই আশা করা গিয়েছিল।
২৪ নম্বর আকবর রোডে অবস্থিত রাহুল গান্ধীর অফিস ঘরের ঠিক পাশের ঘরেই নিজের দফতর খুলেছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁকে বারংবার কংগ্রেস সভাপতির ১২ নম্বর তুঘলক ক্রিসেন্টের বাসভবনে যেতে দেখা গিয়েছে। এই বাড়িতেই কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য মিলিত হয়ে থাকেন।
কংগ্রেস এখনও দিল্লি কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী। মাত্র একটি ভিডিয়োতেই প্রিয়াঙ্কাকে ঝুগ্গিবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। এই ভিডিয়োটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে।
কংগ্রেসের বোঝা উচিত, শুধুমাত্র কংগ্রেস নেতানেত্রীদের মন জয় করার জন্য তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে আনা হয়নি। প্রিয়াঙ্কাকে সাধারণ মানুষের মনও জয় করতে হবে।
তাঁকে তাঁর ক্যারিশ্মা দিয়ে সেই সব ভোটারের মন জয় করতে হবে যাঁরা প্রকৃতঅর্থে কংগ্রেস সমর্থক নন। মধ্যবিত্ত, প্রথমবার ভোট দিতে চলা, মহিলা, দরিদ্র ও উচ্চশ্রেণীর ভোটারদের মন তিনি কতটা জয় করতে পারবেন তার উপর তাঁর সাফল্য নির্ভর করবে।
পূর্বে যখন প্রিয়াঙ্কা তখন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া [সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে]
আর ঠিক এই জায়গাতেই গোটা উত্তরপ্রদেশই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অথচ কংগ্রেসের তরফে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে নিয়ে খুব বেশি শব্দ খরচ করা হচ্ছে না। প্রিয়াঙ্কাকে যেমন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তমনি তাঁকেও পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের গুনা থেকে লোকসভার সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে - তা হলে কি এবার গুনা আসনটি থেকে তিনি আর প্রার্থী হবেন না? যদি প্রার্থী হন তাহলে তিনি কী ভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সময়ে ব্যয় করতে পারবেন?
সিন্ধিয়া যদি শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ থেকে প্রার্থী না হন তাহলে তা হিন্দি বলয়ের রাজনীতির একটি বড় চমক হবে।
গোয়ালিয়রের প্রাক্তন মহারাজা কি উত্তরপ্রদেশে দিল্লির শীলা দীক্ষিত হয়ে উঠতে পারবেন? ১৯৯৮ সালে শীলা দীক্ষিত উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক নেত্রী ছিলেন (টানা চারবার লোকসভা নির্বাচনে হেরেছিলেন তিনি)। সেই সময়ে সোনিয়া গান্ধী তাঁর হাতেই দিল্লি কংগ্রেসের দায়িত্ব তুলে দেন। রাজনৈতিক স্থান পরিবর্তন করে বিপুল সাফল্য লাভ করেন শীলা দীক্ষিত। টানা তিনটি বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে দিল্লিতে সরকার গঠন করে কংগ্রেস।
সেই মতো, সিন্ধিয়া কি ২০২২ বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের মুখ হয়ে উঠত চলেছেন?
জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের হয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যাবে প্রিয়াঙ্কাকে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু কংগ্রেস অন্দরমহলের মনে করা হচ্ছে, দেশের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা-বিশিষ্ট রাজ্য উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের উত্থান এমন কোনও নেতার হাতে হবে যাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা রয়েছে। গান্ধী পরিবারের সদস্যরা রাজ্য রাজনীতি নিয়ে খুব একটা উৎসাহিত নন (এর আগে দিগ্বিজয় সিং ২০১১ সালে রাহুলকে বাজিয়ে দেখেছিলেন)। তাই প্রিয়াঙ্কা যে নিজেকে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশে আবদ্ধ রাখবেন সে কথা খুব একটা কেউই বিশ্বাস করেন না।
আরপিএন সিং, জিতিন প্রসাদ, প্রমোদ তিওয়ারি, পিএল পুনিয়া, সলমন খুরশিদ কিংবা শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালের মতো নেতাদের মধ্যে সংগঠন তৈরি করা বা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নেই।
আর এখানেই সিন্ধিয়ার ভূমিকাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রিয়াঙ্কা এর আগে সচিন পাইলটের মতো জেদী লোককেও রাজস্থানে অশোক গেহলটের ডেপুটি হতে রাজি করিয়েছিলেন।
আর এখন সিন্ধিয়াও মধ্যপ্রদেশ ছেড়ে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নিলেন। মিশন উত্তরপ্রদেশ চ্যালেঞ্জটা সিন্ধিয়ার কাছে বেশ কঠিন নয় কি?
নিঃসন্দেহে কঠিন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে