ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি পাকিস্তান থেকে নির্দেশ নিচ্ছে বলে আত্মঘাতী গোল বিজেপির
সাম্প্রতিক অতীতে জম্মু-কাশ্মীরে এই দুই দলের সঙ্গেই জোট ছিল বিজেপির
- Total Shares
ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) মতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের জোট গড়ায় যেন যথেষ্ট চমক ছিল না, রাজনৈতিক ভাবে উত্তপ্ত জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তান প্রসঙ্গ টেনে সেই রাজনৈতিক উত্তাপ আরও একটু বাড়িয়ে দিল বিজেপি।
২১ নভেম্বর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দলের মধ্যে মহাজোট ঘোষণার পরেই স্থানীয় বিজেপি নেতানেত্রীরা উদ্ভট সব মন্তব্য করতে শুরু করে দিলেন, তাঁরা বলতে লাগলেন, আসলে সীমান্তের ওপার থেকে নির্দেশ আসছে এনসি এবং পিডিপির কাছে।
অনেকে আবার বলতে লাগলেন যে দুবাইয়ে যে ‘বৈঠক’ হয়েছিল এটা তারই ফল। তবে কোন বৈঠকের কথা যে বলা হচ্ছে সে কথা কেউ জানেন না। এই সব মন্তব্য নিয়ে বড় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল এমন নয়, কিন্তু একই কথা বলে বসলেন বিজেপির বরিষ্ঠ নেতা রাম মাধব।
PDP&NC boycotted local body polls last month because they had instructions from across the border.Probably they had fresh instructions from across the border to come together & form govt.What they did prompted Guv to look into the whole issue: Ram Madhav on J&K assembly dissolved pic.twitter.com/f0wPQbzqrD
— ANI (@ANI) November 22, 2018
I dare you @rammadhavbjp ji to prove your allegation. You have RAW, NIA & IB at your command (CBI too is your parrot) so have the guts to place evidence in the public domain. Either prove this or be man enough to apologise. Don’t practice shoot & scoot politics. https://t.co/KEbOo0z6O2
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) November 22, 2018
মন্তব্য করার সঙ্গে সঙ্গেই দীর্ঘদিন দিন ধরে যে কৌশল চলছিল তা পুরো অন্য দিকে চলতে শুরু করল, জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। জনতার বড় অংশ মনে করছে যে রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এর চেয়ে ভালে আর কোও উপায় ছিল না।
এমন মনে হওয়ার সহজ-সরল কারণ হল কয়েকদিন আগেই রাজ্যপালকে ইঙ্গিত দিতে শোনা গিয়েছিল যে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর কোনও তাড়া নেই। বুধবার দিন বিজেপি বুঝে যায় যে তিন দলের জোট হওয়ায় পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে – বিশেষ করে তাদের জোটসঙ্গী সাজাদ লোন সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের কিছুটাও কুড়িয়ে-বাড়িয়ে জোগাড় করে দিতে দিতে পারবে না।
পিডিপি, এনসি এবং কংগ্রেসের জোট হওয়ায় বিজেপি বুঝতেই পারছে যে তারা কিস্তিমাত করে ফেলেছে।
তবে সত্যপাল মালিক বিধানসভা ভেঙে দেওয়ায় এই তিনটি দল অন্তত একটি ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে দল ভাঙানো এবং বিধায়ক কেনাবেচার আর কোনও আশঙ্কা থাকছে না।
বিজেপি সমর্থিত যে তৃতীয় শক্তির কথা ভাবা হচ্ছিল, এই জোট তাকে এক ধাক্কায় ফেলে দিত। অনেকেই মনে করছেন যে বিজেপি যখন এই কথা জানতে পারল তখন তারা বুঝে উঠতেই পারছিল না কী ভাবে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান-যোগের কথা বলা ছিল সবচেয়ে সহজ উপায়। তবে এই চাল হিতে বিপরীত হল। এর ফলে বিজেপি নেতাদের শুধু যে খারাপ দিকটা ফুটে উঠল তা নয়, এর ফলে বেশ কয়েকটি প্রশ্নও উঠতে শুরু করল।
ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স ও মেহবুবা মুফতির (উপরে) পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে জোট ছিল বিজেপির (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)
আজ সবচেয়ে যে বড় প্রশ্নটি উঠছে তা হল কয়েকদিন আগে, মানে এ বছর জুন মাসেও যে পিডিপি ছিল বিজেপির জোটসঙ্গী এখন তারা আচমকা কী ভাবে ‘পাকিস্তান-পন্থী’ হয়ে উঠল?
ন্যাশনাল কনফারেন্সও বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল।
সুতরাং আপাত ভাবে এ থেকে যে কথাটি উঠে আসছে সেটি হল তুমি যদি বিজেপির সঙ্গে না থাক তা হলে হয় তুমি দেশবিরোধী না হয় তুমি পাকিস্তানপন্থী।
অন্য ভাবে বিচার করলে দেখা যাবে যে এই বিষয়টি পুরোপুরি বিজেপির মস্তিস্কপ্রসূত।
জম্মু-কাশ্মীরের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপির নামে স্থানীয় ভাবে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে তারা অকারণ ভারতের অ্যাজেন্ডায় গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য ভাবে বলতে গেলে কাশ্মীর সমস্যার ক্ষেত্রে তাদের ভারতপন্থী বলে মনে করা হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই এই দুই দলের অবস্থা ছিল একেবারে প্রান্তিক, মানে ইংরেজিতে যাকে বলে এই দুই দল ছিল রিসিভিং এন্ডে। দুই দলের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত ও নিহত হয়েছেন। এখন যখন বলা হচ্ছে যে তারা পাকিস্তানের নির্দেশ-মাফিক কাজ করছে তা হলে কয়েক দশক ধরে নিরলস ভাবে তারা যে অস্থির কাশ্মীরকে মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করে এসেছে তাকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হচ্ছে না?
কংগ্রেস ও বিজেপির মতো জাতীয় দলগুলোকে এখানে বহিরাগত হিসাবেই দেখা হয় – দীর্ঘ দিন ধরেই ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকেই জম্মু-কাশ্মীরের মূলধারার রাজনীতিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল হিসাবে দেখে আসা হয়েছে।
তার মানে বিজেপি এই দুই মূলদারার রাজনৈতিক দলকে পাকিস্তানপন্থী বলে মনে করছে?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে