লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: রাজনীতিতে জয়া প্রদার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
টিডিপি, এসপি, আরএলএম, আরএলডি এবং বিজেপি, তাঁর রাজনৈতিক জীবন অনেক চাপান-উতোরের সাক্ষী
- Total Shares
'একজন অভিনেত্রী, যিনি রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন' - জয়া প্রদাকে আর এই ভাবে সম্বোধন করার কোনও মানে হয় না। সেই ১৯৯৪ সালে তিনি রাজনীতির মঞ্চে প্রবেশ করেছিলেন। আর, গত দু'দশক ধরে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে তিনি বেশ ভালোই রাজনীতি করে চলেছেন।
এখন তিনি বিজেপিতে যোগদান করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, একবার রাজনীতিতে জয়া প্রদার ভূমিকাটা দেখে নেওয়া যাক।
প্রশ্ন হচ্ছে, আদৌ কি রাজনীতিতে তাঁর কোনও ভূমিকা রয়েছে? কারণ, যখনই তিনি দল পরিবর্তন করেছেন কিংবা কোনও বিতর্কে জড়িয়েছেন শুধুমাত্র তখনই রাজনীতির মঞ্চে জয়া প্রদার নাম শোনা গিয়েছে।
অন্ধ্র প্রদেশের ঘরের মেয়ে জয়া প্রদাকে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রতিষ্ঠাতা এনটি রামা রাও তাঁর দলে যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর, সেখান থেকেই মাত্র ৩২ বছর বয়সে জয়ার রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ। এনটিআরের জামাই এন চন্দ্রবাবু নাইডু টিডিপির দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলে ভাঙ্গন ধরে। সেই সময়ে জয়া কিন্তু এনটিআরের শিবিরেই যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত হন।
২০০৪ সালে তিনি উত্তরপ্রদেশের রামপুর আসনের প্রার্থী হন। সেই বার অবশ্য তিনি এসপির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন এবং জিতেও ছিলেন।
দু'বার রামপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন জয়া প্রদা [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
দেখতে হবে, এর মধ্যবর্তী সময়তে ঠিক কী ঘটেছিল।
এই মাঝের সময়তে তিনি চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গ ছেড়ে, টিডিপি ত্যাগ করে সমাজবাদী পার্টিতে (এসপি) যোগদান করেছিলেন। নাইডুর দলে তাঁকে রীতিমতো একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল। নাইডু তাঁর অস্তিত্বও পর্যন্ত স্বীকার পর্যন্ত করতেন না। জয়া একবার নিজের বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, "আমি মঞ্চে উপস্থিত ছিলাম। তা সত্ত্বেও নাইডু একবারও আমার নাম পর্যন্ত উল্লেখ করলেন না। বিষয়টি আমাকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিল।"
২০০৯ লোকসভা নির্বাচনের সময়ে জয়া প্রদা এসপির বিশিষ্ঠ নেতা আজম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, আজম খান নাকি তাঁর জাল ছবি প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। এই ঘটনায় তিনি বেশ ভয় পেয়েছিলেন। তবে, শেষ পর্যন্ত, নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন।
এর বছর খানেকের মধ্যে দল-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য অমর সিংয়ের সঙ্গে তাঁকেও এসপির থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল। এর পর, দু'জনে মিলে রাষ্ট্রীয় লোকমঞ্চের প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই দলটি একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি। এর পর দু'জনেই আরএলডি-তে যোগদান করেন। আরএলডির টিকিটে জয়া প্রদা বিজনৌর আসনের প্রার্থী হন। কিন্তু, সেই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করতে পারেননি।
ইনি আজম খান, জয়া প্রদার রাজনৈতিক ও বাস্তবব জীবনের শত্রু [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
জয়া প্রদার সঙ্গে অমর সিংয়ের সম্পর্ক কিন্তু জয়ার রাজনৈতিক জীবনের একটি বিতর্কিত অধ্যায়। একটি সাখ্যাৎকারে জয়া প্রদা বলেছিলেন, "আমি যদি অমর সিংকে রাখিও পড়াই লোকে কিন্তু আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে ছাড়বে না।" তিনি জানিয়েছিলেন যে তাঁর জাল ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার পর তিনি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন। আজম খানের বিরুদ্ধে তিনি আরও একটি অভিযোগ করেছিলেন - আজম খান নাকি তাকে অ্যাসিড দিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন।
তাই, বিজেপিতে যোগদান করে শেষ পর্যন্ত জয়া প্রদা যদি রামপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হন তাহলে তাঁর রাজনৌতিক জীবনের ষোলো কলা পূর্ন হবে। খুব সম্ভবত, রামপুরে জয়ার বিরুদ্ধে আজম খানকেই লড়তে দেখা যাবে।
তাঁরা রাজনৈতিক শত্রু।
বাস্তব জীবনেও তাঁরা একে ওপরের শত্রু।
জয়া প্রদা বলেছিলেন, "পদ্মভাতের খিলজিকে দেখে তাঁর আজম খানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।" প্রত্যুত্তরে আজম খান জানিয়েছিলেন, "এই 'নাচিয়ে-গাইয়েকে' খুশি রাখতে হলে আমি কী ভাবে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করব?"
বিতর্কিত মন্তব্য করতে আজম খানও কম যান না। তিনি আরএসএস সদস্যদের হোমো-সেক্সচুয়াল বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি একবার বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর বাংলো থেকে ম্যাডাম ইরানির বাংলোর মধ্যে একটি গোপন সুড়ঙ্গের ব্যবস্থা রয়েছে।
তাই, এবার রামপুরের ভোট-যুদ্ধে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
নির্বাচনী যুদ্ধটাও কিন্তু বেশ কঠিন হবে।
এর আগে দু'বার রামপুর কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন জয়া প্রদা। বর্তমানে, এই আসনটি বিজেপির দখলে রয়েছে।
উল্টোদিকে, আজম খান এই প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন।
যুদ্ধ এখন সম্মুখ সমরে!
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে