জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নতুন নীতি তৈরি করতে হবে মোদী সরকারকে
জঙ্গি কার্যকলাপের নতুন ধরণ নিয়ে চাই নতুন পরিকল্পনা
- Total Shares
জম্মু-কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী ভাবে পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে আর কোনও সংশয়ের অবকাশ রইল না। রমজানের সময় ঘোষিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারিত করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনিতেই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ার পর কাশ্মীরে হিংসা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হিংসার বলি হয়েছেন সেই রাজ্যের বর্ষীয়ান সাংবাদিক শুজাত বুখারি। যুদ্ধবিরতির সময় নিরাপত্তা বাহিনীগুলো হাত গুটিয়ে বসে ছিল বলেই জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জঙ্গি নিয়োগ
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা নেহাতই একটি ছোট পদক্ষেপ। এর চেয়ে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ, কাশ্মীরে যে ভাবে জঙ্গি নিয়োগের ধরণ বদলে যাচ্ছে তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে ফেলা। প্রচুর পরিমাণে স্থানীয় যুবক জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিচ্ছেন। এর ফলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যে পরিমাণে জঙ্গি কার্যকলাপ দমন করতে পারছে, তার চাইতে ঢের বেশি নিয়োগ করতে সক্ষম হচ্ছে জঙ্গি সংগঠনগুলো।
নতুন প্রজন্মের জঙ্গিরা বয়সে তরুণ এবং আবেগ-তাড়িত হয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিচ্ছে। চোখের সামনে গুলি বিনিময় বা কোনও জঙ্গির শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকবার সময় তারা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছে। গুলি বিনিয়ম বা কোনও জঙ্গির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যখনই পাথর ছুড়ে প্রতিবাদ জানান হয়েছে তখনই প্রশাসন বেশ করা পদক্ষেপ করেছে। যে সব তরুণ এ ভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব কিন্তু খুব বেশিদিন থাকে না। তাদের কোনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। এমনকি, তাদের হাতে যে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয় তার অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর কাছ থেকে ছিনতাই করা।
এ ছাড়া, এই জঙ্গিদের আরও একটি শ্রেণী রয়েছে - পাকিস্তানিরা। এরা আড়ালে থেকে কখনও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উপর আবার কখনও বুখারির মতো ব্যক্তিদের উপর সুপরিকল্পিত হামলা চালায়।
কোনও সন্দেহ নেই যে সরকার 'অপারেশন অল আউট' জারি করে জঙ্গি নির্মূল করবার চেষ্টা করবে। কিন্তু উপত্যকার এই অদক্ষ তরুণদের হত্যা করে সমস্যার সুরাহা হবে না। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলো অনেক বেশি পোড় খাওয়া এবং যে কোনও ধরণের সন্ত্রাস ছড়াতে সিদ্ধহস্ত।
সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত সংস্থাগুলোকে বুঝতে হবে যে এ ধরণের জঙ্গি কার্যকলাপ রোধ করা মোটেও সহজ নয়। ২০১০ সালের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে বিশ্বের ৩০টি জঙ্গি দমন অভিযানের মধ্যে মাত্র আটটি অভিযান সফল হয়েছে।রিপোর্টে বলে হয়েছে নিপীড়ন বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুধুমাত্র সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা এই ধরণের জঙ্গিদমন অভিযানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ এই মুহূর্তে আর বিলাসিতা নয়, একান্ত প্রয়োজনীয়।
এখানে অন্য একটি সমস্যাও রয়েছে। মোদীযুগে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এক হয়ে গেছে। মোদীভক্তরা হয়তো বিষয়টি সমর্থন করবেন কিন্তু এর ফলে সরকার কিন্তু বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। ২০০০ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী কিন্তু জঙ্গিদের খুব ভালো মধ্যস্থতা করেছিলেন। ঠিক এই ভাবে মোদীও নাগা বিদ্রোহীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছেন। কিন্তু সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে তো আর মধ্যস্থতা চলে না।
পাথর ছোড়া
সরকারকে এখনই ঠিক করে নিতে হবে যে কী ভাবে গণবিদ্রোহগুলোকে (অর্থাৎ পাথর ছোড়ার ঘটনাগুলোকে) হলে আরও ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধুমাত্র যেখানে জীবনহানির আশঙ্কা থাকবে সেখানেই সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো উচিৎ। সশস্ত্র বাহিনীকে পাকাপাকি ভাবে নয়, প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে। এখানে বিদ্রোহকারীদের সরিয়ে দেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ, তাদের শারীরিক ভাবে ধ্বংস করা নয়।
বিশ্ব জুড়ে বিদ্রোহের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুলিশ পাথর ও মলটোভ ককটেলের সামনে বিদ্রোহ শান্ত করবার দায়িত্ব পালন করে থাকে। এই ধরণের সমস্যা সমাধানের পুলিশকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে ও তাদের হাতে আধুনিক রক্ষা কবচ তুলে দিতে হবে। পুলিশ যদি ঠিকঠাক সরঞ্জাম না পায়ে তা হলে নিজেদের আত্মরক্ষার তাগিদে তাদের পক্ষে গুলি করাই তো স্বাভাবিক।
ব্রিটিশ শিক্ষা
ইজরায়েলের সামরিক ইতিহাসবিদ মার্টিন ভান ক্রেভেল্ড তাঁর 'দ্য চেঞ্জিং ফেস অফ ওয়ার' গবেষণাপত্রে বেশ কয়েকটি জঙ্গি দমন অভিযান ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, উত্তর অ্যায়ারল্যান্ডে ব্রিটিশরাই এ বিষয় সেরা পন্থা অবলম্বন করেছিল। এই স্ট্র্যাটেজিতে আইনের মধ্যে থেকে কোনও রকম হত্যা বা অত্যাচার না করে গণ-অভ্যুথান বন্ধ করা হয়েছিল। এই নীতি অনুসরণ করেই ব্রিটিশরা শান্তি প্রতিষ্ঠান করতে সফল হয়েছিল।
ভন ক্রেভেল্ড কিন্তু ইজরায়েলি বাহিনী সমালোচনা করেছেন যে বাহিনীর বেশ কয়েকজন সমর্থনকে ভারতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ৮০র দশকের শেষে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী কয়েকশো লোককে হত্যা করেছিল, কয়েক হাজার লোককে হত্যা করেছিল, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং অভ্যুথানের একবারে সূচনা থেকেই বিদ্রোহকারীদের হাত-পা ভাঙা শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
ইজরায়েলিরা বিদেশিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু কাশ্মীরে তো আমরা দেশের লোকেদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও পরিণত হতে হবে। এ ক্ষত্রে আমাদের পাকিস্তানের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে যেন পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত না দেয়। রাতারাতি কোনও কৌশলই আরোপ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের নিশ্চিত পরিকল্পনা করে এগতে হবে।
(সৌজন্য: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে