শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন জম্মু-কাশ্মীরে, সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করল গণতন্ত্র
উন্নয়নের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর রাজ্যের বাসিন্দারা গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা রেখেছেন
- Total Shares
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে পুর ও পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে এই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়া নিঃসন্দেহে ভালো খবর। রাজ্য জুড়ে বেশ কয়েকটি প্রাণহানির ঘটনা সহ যে ধরণের আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তাতে নির্বাচনের মতো একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হওয়ার আশা একেবারেই ছিল না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া যথেষ্ট ইতিবাচক। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে ওই স্পর্শকাতর রাজ্যে এখনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রাখে।
বারংবার ধর্মঘট এবং শান্তিভঙ্গকারীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও পুর বোর্ডের ১,১১০ টি ওয়ার্ডে ও পঞ্চায়েতের ৩৫,০০০ ওয়ার্ডের নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করাটা কিন্তু বেশ কঠিন ছিল।
নির্বাচন ভেস্তে দেওয়ার জন্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচন বানচাল করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন রাস্তায় পাথর ছুড়েছে। এ ছাড়া হিজবুল মুজাহিদিন ও দলের নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিন বেশ কয়েকটি জ্বালাময়ী সাম্প্রদায়িক বক্তৃতাও করেছে।
কিন্তু, এর কোনও প্রভাবই ভোটদাতাদের উপর পড়েনি এবং ন'দফায় মোট ১৩০৩টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে পঞ্চায়েত ভোট সম্পন্ন হয়েছে।
কাশ্মীর বিষয়ক বিশেজ্ঞরা মনে করছেন যে পাকিস্তান ও আইএসআইয়ের তৈরি করা ইস্যুগুলোকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাশ্মীরি জনতা এই নির্বাচনে যোগ দিয়েছেন। জনতা আশাবাদী যে এবার তাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একেবারে তৃণমূল স্তরেও অর্থ পৌঁছবে।
পঞ্চায়েত রাজই যে রাজ্যের উন্নয়নের মেরুদণ্ড হয়ে উঠতে পারে তা মনে করেই কাশ্মীরি জনতা রাজ্যের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও একটি সুযোগ দিয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের পরে প্রায় ১৩ বছর বা বাদে কাশ্মীরে আঞ্চলিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল আর এই নির্বাচনে ভোটদানের হার প্রায় ৭৪ শতাংশ। কূপওয়াড়া ও বারামুলার মতো উপত্যকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভোটদাতা ভোট দিয়েছেন। জম্মু ও লাদাখে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যথাক্রমে ৮৩ শতাংশ ও ৬৭ শতাংশ ভোটার ভোটদান করেছেন এবং পুর নির্বাচনে ৬৮ ও ৬১ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
গণতন্ত্রের উপর আস্থা রেখেছে কাশ্মীরি জনতা
ভোটদানের হার থেকে আরও একটি বিষয়ও পরিষ্কার - বিচ্ছিন্নতাবাদীর ইস্যুগুলোকে উপেক্ষা করেছে কাশ্মীরি জনতা।
১৯৮৯ সালে প্রবর্তিত জম্মু ও কাশ্মীর পঞ্চায়েত আইন খুব একটা কার্যকরী হয়ে ওঠেনি। আইনে থাকা সত্ত্বেও ২৫টির মধ্যে মাত্র তিনটি বিভাগকে অর্থ প্রদান করা হত। সরকারের তরফ থেকেও পঞ্চায়েতের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তীব্র অনীহা ছিল।
আইন সংশোধনের পরে পঞ্চায়েতের বিভাগগুলো এবার আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হল। তার মানে স্থানীয় লোকেরা আরও ক্ষমতশালী হয়েছেন।
পঞ্চায়েতের জন্য ২০০০ কোটি টাকার উপর অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পুরবোর্ডগুলোর জন্য ১২,০০০ কোটি টাকা মতো বরাদ্দ করা হয়েছে। ১৯টি বিভাগকে অর্থদান করা ও বিভাগগুলোকে পরিচালন করার ক্ষমতাও পঞ্চায়েতগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড সভা ও গ্রামসভার দায়িত্ব বেশ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর পরে খুব শীঘ্রই প্রায় ৪০,০০০ তৃণমূল স্তরের প্রতিনিধিদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির চালু করা হবে। পঞ্চায়েতপ্রধানের জন্য মাসিক ২,৫০০ টাকা সম্মানিকী ও পঞ্চায়েত সদস্যদের জন্য মাসিক ১,০০০ টাকা সম্মানিকী প্রদানের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তগুলোর লাভ অবশ্যই নিকট ভবিষ্যতেই দেখা যাওয়ার কথা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে