ছত্তিসগড় নির্বাচন: প্রথম দফায় ব্যাপক ব্যবধানে জয় পেল গণতন্ত্র
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলোর সামনে ভোটারদের লম্বা লাইন কঠিন বার্তা পাঠালো নকশালদের
- Total Shares
ছবি কথা বলে। আর, কিছু ছবি আছে যা কয়েকহাজার শব্দ বলে ফেলে।
এই রকমের একটি ছবির দেখা মিলল ছত্তিশগড়ে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে যখন ভোটারদের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। ছবিটির প্রতিটি শব্দই যেন সুন্দর ভৰিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলছে।
মোট ৯০টি বিধানসভা আসন রয়েছে ছত্তিশগড়ে। প্রথম দফায়, এর মধ্যে ১২টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল ১২ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ পর্ব যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হল তাতে কিন্তু ইতিবাচক বার্তাই পাওয়া গেল। একমাত্র বিজাপুর ছাড়া রাজ্যের কোথাও থেকে কোনও অবাঞ্চিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিজাপুরে একটি সংঘর্ষে তিনজন মাওবাদী নিহত হয়েছে আর পাঁচজন কোবরা জওয়ান আহত হয়েছে।
প্রথম দফার নির্বাচন পর্ব সত্যিই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ন করা গিয়েছে। যে অঞ্চলগুলোতে নির্বাচন হল সেগুলোর মধ্যে দন্তেওয়াড়া, বস্তার, কাঁকের ও রাজনন্দগাওঁ মাওবাদী অধ্যুষিত।
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন কিন্তু মাওবাদীদের কড়া বার্তা দিল [ছবি: পিটিআই]
না নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করে তুলতে প্রায় ৭০০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল। এর ফলে মাওবাদীদের হুমকি সত্ত্বেও প্রচুর মানুষকেই ভোটদান করতে দেখা গিয়েছে। স্থানীয়রা যাতে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ না করতে পারে তার জন্যে সবরকম চেষ্টা করা হয়েছিল - বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ভোট-বিরোধী পোস্টার ও ব্যানার লাগানো হয়েছিল।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত, ব্যালটের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিতে হল বুলেটকে।
রাজনন্দগাওঁয়ের মানপুর এলাকায় ভোট-বিরোধী প্রচার বেশ জোর কদমে হয়েছিল। স্থানীয়দের মধ্যে চাপা আতঙ্কওম ছিল।
কিন্তু মানপুরের কেশরী ও বাবলু এখন আর হুমকিতে ভয় পান না।
ভোট দিতে এসে ৪২ বছরের কেশরী ইন্ডিয়া টুডে-কে বলে গেলেন যে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ভোটদান তাঁর কাছে মাওবাদীদের হুমকি থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাবলু জানালেন, "ভোটদান কেন্দ্রগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা দেখে আমার সাহস করে ভোট দিতে এসেছি।"
মাওবাদী অধ্যুষিত দন্তেওয়াড়ার মাডেন্ড গ্রামের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলোর বাইরে ভোটারদের লম্বা লাইন সকলেরই নজর কেড়েছে। মাত্র দিন কয়েক আগেই এই ভোটারদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল এই বলে, আঙ্গুলে যদি ভোটের কালি চোখে পড়ে তাহলে সেই আঙ্গুল কেটে ফেলা হবে।
বুলেটকে হারিয়ে জয়ী হল ব্যালট [ছবি: পিটিআই]
দন্তেওয়াড়া থেকে আইইডি বিস্ফোরণের একটি খবর পাওয়া গিয়েছে। এর পরে, শুকমার একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের অদূরে সিআরপিএফ একটি আইইডি খুঁজে পায়। কিন্তু এর পরেই নির্বাচন আধিকারিককে দমানো যায়নি। গাছের তলায় অস্থায়ী ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করে ভোটদান পর্ব শেষ করা হয়েছে। নকশালদের পরিকল্পনা মাটি করে দিয়ে কোনটা গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা সেই অস্থায়ী কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের সাংবিধানিক অধিকার প্ৰয়োগ করে ফেললেন।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন ও আধাসামরিক বাহিনীগুলোকে কৃতিত্ব দিতে হবে। তবে ছত্তিসগড়ের ভোটারদের সবচাইতে বেশি কৃতিত্ব প্রাপ্য।
এই অঞ্চলে স্থানীয়রা বরাবরই নকশালদের টার্গেট হয়েছে। রাজ্যের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাওবাদীরা। কিন্তু তাদের প্রভাব সত্ত্বেও রাজ্যবাসীরা কিন্তু গুলির ভয় উপেক্ষা করে ভোটদান করেছেন। তাদের সাহসকে কুর্নিশ করতেই হয়।
ভোটের দিন মানুষের মধ্যে যে পরিমান উৎসাহ আর উদ্দীপনা লক্ষ করা গিয়েছে তা কিন্তু মাওবাদীদের কঠিন বার্তা পাঠাবে।
ছত্তিসগড় কিন্তু একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের পরিচয় বহন করল।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে