যোগ হল ধর্মের ঊর্ধে, বাংলাদেশে যোগের প্রসারে সব পেশার মানুষই

সন্ত্রাসমুক্তির উপায় মনের নিয়ন্ত্রণ, তার জন্যই দরকার যোগাভ্যাস

 |  3-minute read |   26-06-2018
  • Total Shares

২১ জুন ছিল আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। এ বছর ঢাকায় এই আন্তর্জাতিক দিবসটি উপলক্ষে ছিল চোখ ধাঁধানো আয়োজন। ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে ঢাকায় দিবসটি উদযাপন হয়ে আসলেও এ বারের আয়োজন ছিল অন্যরকম।

অনুষ্ঠানের আগে আয়োজকরা বলেছিলেন পাঁচ হাজারের বেশি বেশি মানুষ এ বারের যোগ দিবসে যোগ দেবেন। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে যোগ দিলেন অন্তত দশ হাজার মানুষ।

যোগদানকারীদের বক্তব্য, প্রতিদিন মানসিক চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসুস্থতা, তা শুধু মানসিক নয়, শারীরিকও। শরীর ও মনের সেই অসুস্থতা থেকে মুক্তির উপায় এই যোগাভ্যাস। তাঁরা মনে করেন, যোগব্যায়াম করা কোনও ধর্মীয় বিষয় নয়, এটি সম্পূর্ণ ভাবে শারীরিক ব্যাপার।

প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত বিশেষ ধরনের শারীরিক ও মানসিক এই ব্যায়াম ঢাকার মানুষকে যে আকর্ষিত করতে পারবে, তা ছিল আয়োজকদের ধারনার বাইরে। দলে দলে হাজার হাজার মানুষের যোগদান সত্যিই আয়োজনকে সাফল্য দিয়েছে। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বিদ্বজ্জনের কথাতেও ফুটে উঠেছে একটি সম্ভাবনার কথা। প্রতিটি মানুষ নিজের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে হয়তো যোগের প্রতি আকৃষ্ট হবেন, তাতেই বাংলাদেশেও প্রসারিত হবে যোগ।

body_062618015340.jpg

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমারও ইচ্ছা ছিল আপনার সঙ্গে বসে, আসন ও যোগচর্চা করব। আমার খুব লোভ হচ্ছে। অনেক মানুষ, দারুণ মনোরম পরিবেশ। ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আমার হাঁটু-সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্প্লিন্টার ঢুকে যায়। আমি এখন হাঁটতে পারলেও কোনওক্রমেই আসন করে বসতে পারি না।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যোগব্যায়ামকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত হয়ে এই যোগচর্চা এখন বাংলাদেশেও চলে এসেছে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে। আজকে তরুণ সমাজে মাদক যখন হিংস্র ছোবল দিচ্ছে, সুনামির মতো সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন তা থেকে তরুণদের দূরে রাখতে যোগ বা যোগব্যায়ামের ভূমিকা যথেষ্ট কার্যকরী হবে বলে আশা করছি। মাদক রুখতে যোগব্যায়াম একটি কার্যকর মাধ্যম। যোগব্যায়াম করলে শরীর ও মন ভালো থাকে।’

বিশেষ অতিথি হিসেবে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ডঃ বীরেন সিকদার এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

fb_img_1529557972363_062618015605.jpg

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘চতুর্থবারের জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ যোগ দিয়েছেন। তাঁরা ভোররাতেই নিজ নিজ স্থান থেকে রওনা দিয়ে কষ্ট করে অনুষ্ঠানে এসেছেন। আমি এ জন্য খুবই আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। শারীরিক প্রতিবন্ধী নাগরিকরাও যোগ দিয়েছেন। এখানে শিশু, তরুণ-তরুণীসহ সব শ্রেণীর- সব পেশার মানুষ এসেছেন।’

বিভিন্ন যোগ সংস্থা্ ও ক্রীড়া সংস্থা তো বটেই, স্কুল শিক্ষার্থী থেকে বৃদ্ধ, এমনকি প্রতিবন্ধীরাও যোগ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ স্কাউটস আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনে যোগ দেন। সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং মিডিয়া জগতের অনেক তারকা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যোগ শিবিরে যোগ দিয়ে তাঁরা বার্তা দেন, প্রাচীন ভারতের এই রীতির সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই।

fb_img_1529557936324_062618015513.jpg

ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়ক শিক্ষক মাম্পি দে সাধারণ যোগ নিয়মাবলি পরিচালনা করেন। আইজিসিসি ও ঢাকার বিভিন্ন যোগ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগাসন প্রদর্শন করেন।যোগাসনকে আরও জনপ্রিয় করতে ও আরও বেশি করে সাধারণ মানুষকে আকর্ষিত করতে লাকি ড্রয়ের ব্যবস্থাও ছিল যেখানে গাড়ি এবং ভারভ্রমণমের সুযোগের মতো পুরস্কার ছিল। এ থেকে আরও স্পষ্ট যে বাংলাদেশ সর্বতো ভাবেই চাইছে যোগচর্চাকে আরও জনপ্রিয় করতে। রাজশাহী ও চট্টগ্রামের সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন যোগ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন করার জন্য পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই সব অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান সিটি, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও প্যালেস্তাইন দূতাবাস এবং জাতিসংঘ মিশনের কূটনীতিকরা যোগ দেন। জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি, জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, দক্ষিণ এশীয় গেমসের স্বর্ণপদকজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আখতার, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, মেহজাবীন চৌধুরী, আমান রেজা, সোহানা সাবা, কণ্ঠশিল্পী দেবনীলা সূর, মেহরীন মাহমুদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে যোগ নেন। তাঁরাও বার্তা দেন, যোগ হল ধর্মের ঊর্ধ্বে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAHIDUL HASAN KHOKON SAHIDUL HASAN KHOKON @hasankhokonsahi

Bangladesh Correspondent, TV Today.

Comment