উলফার মদদদাতা, দাউদের ব্যবসার অংশীদার তারেককে কী ভাবে বিশ্বাস করবে ভারত?

এত দিন পর ভারত সম্পর্কিত নীতি বদলে উদ্যোগী বিএনপি

 |   Long-form |   12-06-2018
  • Total Shares

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দেশটির বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষ তিন নেতার ভারত সফর। বিএনপির তিন নেতার ভারত সফর নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে দলে ও দলের বাইরে। তাঁদের এই সফর প্রতিবেশী দেশটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ‘ইতিবাচক মনোভাব’ তৈরি হলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সরকারের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়ায় বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন বিএনপির নেতারা। বিশেষ করে তিন নেতার এই সফর তারেক রহমানের সম্মতিতে হওয়ায়, এ নিয়ে নীরব ঢাকার নেতারা। এই ইস্যুতে দলের অভ্যন্তরে বিরোধপূর্ণ রাজনীতির যাত্রা শুরু হল বলে মনে করছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। এমন খরবই এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে।

 হঠাৎ কেন ভারতমুখী বিএনপি?

বরাবরই ভারত বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয় ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ভারতকে যে তারা শক্ত প্রতিপক্ষেই ভাবেন তা মাঝে মাঝেই ঘুরে ফিরে আসে নেতাদের কথায়। এর মধ্যেই গত সপ্তাহে ভারত সফরে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তারেক রহমানের উপদেষ্টা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

ওই সফরে তাঁরা ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেস, সে দেশের তিনটি এনজিও, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, “সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী নির্বাচন ইস্যুতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনীতিকদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, যাঁদের যে রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, তাঁরা নিজ উদ্যোগে বিদেশি বন্ধু-রাজনীতিকদের সঙ্গে কথা বলুন। এটাও বলা হয় যে, আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আপনারা বিএনপির পাশে দাঁড়ান।”

বিএনপির বিদেশ শাখার সূত্র জানায়, “ভারত সফর করতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবনা ছিল। তাঁর (তারেক রহমানের) সম্মতি নিয়েই আমীর খসরু, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও হুমায়ুন কবির ভারতে যান। তারেক রহমানকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি রাজনৈতিক ভাবে আদায় করতে হলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া দরকার এবং নির্বাচনে ভারতকে প্রয়োজন।”

দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেছেন, “পিছনে ফিরে তাকানোর পরিবর্তে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ৮০ ও ৯০ এর দশকের রাজনীতি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।” তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন আরও বলেন, “তারেক রহমান চান, আমরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হই। এখন উভয় দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়।” এছাড়া, বিএনপি সরকারের বিগত আমলগুলোতে ভারত ও বাংলাদেশের খারাপ সম্পর্কের নীতিকে ‘ভুল ও বোকামি’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

1._061218091736.jpg

বিএনপির আন্তর্জাতিক শাখার তিন সদস্য জানান, ভারত সম্পর্কে বিএনপির পর্যবেক্ষণ স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। ২০১৬ সালে একটি প্রতিবেদনে খালেদা জিয়া সম্বন্ধে বলা হয়েছিল, ‘আওয়ামী লীগের চেয়ে ভারত বিএনপিকে কখনও বেশি প্রাধান্য দেবে না।’ পরবর্তী বছরগুলোয় এই  প্রতিবেদন মোতাবেক আচরণ ছিল বিএনপির। গত ফেব্রুয়ারিতে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর নতুন করে ভারত সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান পাল্টাতে শুরু করে। খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভারত বিষয়ে নতুন অবস্থান গ্রহণ করতে তারেক রহমানকে উৎসাহ জোগান। যদিও এই দলে যুক্ত হন আবদুল আউয়াল মিন্টুও। সূত্রের ভাষ্য, আবদুল আউয়াল মিন্টর সঙ্গে ভারতের একটি গোষ্ঠীর সুসম্পর্কের ভিত্তিতেই ভারত সফরে তাকে যুক্ত করা হয়।

জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে দিল্লির সাফ বার্তা

চার দিনের ভারত সফরের পর স্পষ্ট বার্তা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি দলকে। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি মিলিত হয়েছিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং শাসক বিজেপি সমর্থক ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ফাউন্ডেশনের’ অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে এই সাক্ষাৎকারগুলো বিএনপি প্রতিনিধি দলের কেউ স্বীকার করেননি। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতর, রাহুল গান্ধীর সচিবালয় এবং বিজেপি দলের থেকে বৈঠকগুলোকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারতের শাসক বিজেপি দল বাংলাদেশের বিএনপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বার্তালাপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সভাপতি অমিত শাহই জানিয়ে দিয়েছিলেন দলীয় বার্তা বিএনপিকে পৌঁছে দিতে। বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে বিএনপিকে বর্তমানে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামির সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে এবং সাধারণ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। তবেই তাদের দলের গণতান্ত্রিক চরিত্র পরিস্ফুটিত হবে। এই স্পষ্ট বার্তা নিয়েই বিএনপির তিন নেতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শনিবার ঢাকায় ফেরেন।

ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দিনই এ সব তথ্য ভুলবেন না। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের একমাত্র সান্ত্বনা ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস রয়েছে তারা চান অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। যেমনটা ভারতে হয়ে থাকে। তবে কোনও ভাবেই ভারতের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। তাঁরা বুঝিয়েছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থেই বিএনপির উচিৎ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং জামায়াতের সঙ্গে মোর্চা না করেই। জিততেই হবে এই ধারণা ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করাই গণতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচায়ক। বয়কট কোনো কারণেই গণতান্ত্রিক নয়।

অনেকের প্রশ্ন নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে বিএনপি নেতাদের এমন সৌজন্য দেখানোর প্রয়োজন কী? উত্তর হল— ভারত সবসময়ই প্রত্যেক দেশের গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। কিন্তু বহুবার চেষ্টা করলেও কখনই জামায়াত নেতাদের সঙ্গে গোপনেও ভারত সরকারের কেউ বৈঠক করেন না। করবেনও না। ফলে বল এখন বিএনপির কোর্টে। নিজেদের গণতান্ত্রিক পরিচয় বজায় রাখতে হলে নির্বাচনে জামায়াত ব্যতীত লড়াই করা ভিন্ন অন্য কোনও পথ নেই।

ভারত প্রেমী হবার সুযোগ কি আছে বিএনপির?

বিএনপির তিন নেতার ভারত সফর নিয়ে খোদ দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিএনপি নেতাদের মধ্যে তোলপাড় তৈরি হয়। নেতারা একে-অপরের থেকে উৎসুক হয়ে জানতে চাইছেন, ভারতের বিষয়ে সহমর্মী হওয়ার বিনিময়ে নিজেদের বিগত দিনের পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেওয়া কেন?

দলের এক পক্ষের নেতারা বলছেন, ‘আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ভাবে ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণেই ভারতঘেঁষা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট পায় বিএনপি। আর এই নীতিটিকে ভুল প্রমাণিত করে কার ভোট পাওয়া যাবে—প্রশ্ন তুলেছেন এই নেতা। সূত্রটি বলছে, সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শাসনামলের পররাষ্ট্রনীতিকে ভুল বলে রাজনৈতিক ভাবেই মার খেয়েছে বিএনপি।

new_061218092209.jpg

এ বিষয়ে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির বলেছেন, ‘শহীদ জিয়া ও বেগম জিয়ার পররাষ্ট্রনীতি ভারত বা যে কোনও দেশের সঙ্গেই যে ভুল বা নির্বুদ্ধিতা ছিল না, বরং ভ্রান্ত তারা, যারা সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করেন। তারাই ভুল পথে রয়েছেন।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক উইং সূত্র বলছে, ভারতে গিয়ে তিন নেতার নতুন অবস্থান ব্যক্ত করার পর গত দুই দিনে ঢাকায় নিযুক্ত কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও প্রশ্ন করেছেন, দলের নতুন অবস্থান নিয়ে।

সূত্রটি বলছে, দলে সিদ্ধান্ত ছিল, সব বন্ধু রাষ্ট্রকে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নীতিগত অবস্থান গ্রহণে অনুরোধ করার। এই সিদ্ধান্ত ভারতের পাশাপাশি চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ সব রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই।

আন্তর্জাতিক উইংয়ের একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপির তিন নেতার ভারত সফর হাইকমান্ডের সম্মতি নিয়ে হলেও দলের বিগত অবস্থান ভুল ছিল— সেটি বলার মধ্য দিয়ে রাজনীতিই শেষ হয়ে যায়। আমীর খসরুর নেতৃত্বে আরেকটি ‘তাইওয়ান-সংকট’ তৈরি হয় কী না, এ প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে দলের অভ্যন্তরে। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ঢাকায় তাইওয়ানের ট্রেড অফিস খোলাকে কেন্দ্র করে চিনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল (বিএনপির বিদেশনীতিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে চিন)। ওই সময় আমীর খসরু মাহমুদ বিএনপির বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন।

বিএনপির একজন ভাইস-চেয়ারম্যানের কথায়, ‘সম্প্রতি সিইসি বলে দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে। এতে করে আমাদের ফিরতে হবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচন কাকে জেতানোর জন্য ছিল?”

আন্তর্জাতিক শাখার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মত, ‘আওয়ামী লীগকে রেখে ভারত কোনও দিনও বিএনপিকে ভোটে সমর্থন দেবে না। তারা কেয়ারটকারের পক্ষে নয়। বিএনপিকে বলবে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাও। আমাদের যেতে হবে। আর গেলে কী হবে, হয়তো ষাটটি আসন পাব। তো, ভারতের সহায়তা ছাড়া নির্বাচনে গেলে কি এর বেশি আসন পাবে না বিএনপি?’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, ‘ভারত সফরে বিএনপির তিন নেতার বক্তব্য, সংবাদপত্রে আসা খবরগুলো নিয়ে কমিটিতে আলোচনা হবে নিশ্চয়ই। এরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লিখিত ভাবে জানানো হবে। তিনিই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বিএনপির রাজনীতির পর্যবেক্ষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘বিএনপির নেতারা ভারত সফরে যেতেই পারেন। তবে নতজানু না হয়ে মাথা উঁচু করে তাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, আমাদের সৎভাই হিসেবে বিবেচনা না করতে। তাদেরকে বলতে হবে, ভুটান, নেপাল থেকে করিডোর সুবিধা দিতে হবে। রোহিঙ্গা বিষয়ে পরিষ্কার অবস্থান ব্যক্ত করতে।’

বিএনপি নেতাদের এসব কথায় শঙ্কা থেকেই যায় ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কটা আসলে কতটা মধুর হবে?

তারেকের উলফা-দাউদ যোগ

বাংলাদেশের গোয়েন্দা নথি অনুযায়ী, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে বনানীর তৎকালীন হাওয়া ভবনের কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ডিল ও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসমের (উলফা) সামরিক শাখার প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সম্পর্ক হয়। তারেক রহমান ও পরেশ বড়ুয়া-দু’জনই চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।

গোয়েন্দা সংস্থার নথির তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান হয়ে আসার আগে হাওয়া ভবনে বৈঠক হয়েছে। হাওয়া ভবনে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসমের (উলফা) সামরিক শাখা প্রধান পরেশ বড়ুয়া। এই বৈঠকের কথা জানতেন বলে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানে সহযোগিতা করেছেন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী নিজামী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। মামলায় অন্যতম আসামিও তারা।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার ঘাটে চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান আটকের পর তখন প্রকৃত ঘটনাটি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও পরবর্তীতে তদন্তে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, তখন চিন থেকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য এই অস্ত্রের চোরাচালান আনা হয়। বাংলাদেশে এই অস্ত্র খালাস করার পর তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল।

body1_061218092259.jpg

গোয়েন্দা তদন্তে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার একদিকে জঙ্গি গোষ্ঠী আরেক দিকে ভারতের বিচ্ছিনতাবাদী সংগঠন উলফার ব্যাপক তৎপরতা বেড়ে গিয়ে বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। ভারতের উলফার যত কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছে তখন বাংলাদেশের মাটিতে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সবাইকে নিয়ে তারা বসবাস, পড়াশোনা-সহ সবকিছুই করেছেন। অপরদিকে জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিজবুল-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বেড়ে যায়। মূলত এই সময়টাতেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সহায়তায় উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া তার দেহরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশের দুই জঙ্গী সদস্যকে নিয়োগ করতে সক্ষম হন।

গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর পরেশ বড়ুয়াসহ উলফা নেতারা বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ধরা পড়া ছাড়াও বহু অস্ত্র গোলাবারুদ গোপনে বাংলাদেশের মাটিতে আনা হয়েছে, যা এখনও মাঝে মধ্যেই উদ্ধার হচ্ছে। তখনকার বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদদে উলফার সঙ্গে জঙ্গি-যোগ হয়। ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে মিশর দূতাবাসের কাছে থাকার সময় পরেশ বড়ুয়া তখনই হুজির দুই জঙ্গি আলমগীর হোসেন ও গোলাম নবীকে দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুযোগ পান, এখনও তারা বহাল তবিয়তে আছে বিদেশের মাটিতে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উলফার ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া-সহ উলফা নেতৃবৃন্দকে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বর্তমানে চিন, মিয়ানমারের গভীর অরণ্যে ঘেরা অঞ্চলে অবস্থান বদলকারী পরেশ বড়ুয়া বাংলাদেশ এবং ভারত-দুই দেশেরই মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি।

গণমাধ্যমের খবর মতে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে হঠাতে দাউদ ইব্রাহিমের সহায়তা চেয়েছেন তারেক জিয়া। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এই তথ্য দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রককে। দাউদ ইব্রাহিম মাফিয়া ডন এবং বিশ্বের অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী। ভারতে তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বাই হামলা-সহ একাধিক হত্যা, সন্ত্রাস এবং বিস্ফোরণ ঘটানোর মামলা রয়েছে। বর্তমানে দাউদ দুবাইয়ে আছেন। দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তারেক জিয়ার একাধিক যৌথ ব্যবসা রয়েছে।

একটি সূত্রের দাবি, তারেক জিয়ার দুই প্রতিনিধি গত সপ্তাহে দুবাইয়ে দাউদ ইব্রাহিমের এজেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। দুই দফায় তাদের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে।’

body3_061218092344.jpg

২০০৪ সালে দুবাইয়ে প্রথম তারেক-দাউদ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকের খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

বিএনপিকে কেমনে বিশ্বাস করবে ভারত?

একটি বার্তায় বলা হয়েছে, ‘বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর তারেক জিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন ৮ ফেব্রুয়ারি। তারেক জিয়া আশা করেছিলেন, তাঁর মাকে গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ নেমে পড়বে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি হয়নি।’ ওই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘বিএনপির নেতারা আন্দোলনের চেয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বেশি আগ্রহী।

বিএনপির অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় প্রচারও শুরু করেছেন। তাঁদের বার্তায় এটাও বলা হয়েছে, ‘এখন সহিংস রাজনীতি করে শক্তি ক্ষয় করতে রাজি নয় বিএনপির কোনও নেতাই।’ এর ফলে দলের কর্তৃত্ব হারিয়েছেন তারেক। শান্তিপূর্ণ সমঝোতা হলে তারেকের দেশে ফেরা এবং বিভিন্ন মামলা থেকে রেহাই পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। 

এক বার্তায় বলা হয়েছে, তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা এখনও চলছে। এই মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে। এই বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে, তারেক জিয়ার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তাই সরকার উৎখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এই ফেরারি।

কিন্তু উলফার মদদদাতা, দাউদের ব্যবসার সঙ্গী তারেককে কী ভাবে বিশ্বাস করবে ভারত? এ প্রশ্নই এখন সকলের মনে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAHIDUL HASAN KHOKON SAHIDUL HASAN KHOKON @hasankhokonsahi

Bangladesh Correspondent, TV Today.

Comment