ইনফোসিস উত্তরপ্রদেশে যাওয়ায় হতাশা বাড়ল রাজ্যে
নয়ডাতে ৭৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ, ৫০০০ চাকরি। রাজ্যে পড়ে জমি
- Total Shares
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা এসইজেড নিয়ে আজকাল প্রায় কিছুই শোনা যায় না। বিষয়টি লোকের মন থেকে কার্যত মুছে যেতে বসেছে। তবে উত্তরপ্রদেশে ৭৫০ কোটি টাকা তারা বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা করায় এ রাজ্যের মানুষ নতুন করে হতাশ।
নয়ডার সেক্টর ৮৫তে ২৭.৫ একর জমিতে তাদের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে ৫,০০০ মতো কর্মসংস্থান হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ইনফোসিস ঘোষণা করেছে। এ রাজ্যের রাজারহাটে সংস্থাটির ৫০ একর জমি আছে, কিন্তু তাদের পছন্দমতো সুযোগ-সুবিধা এই রাজ্যে তাদের বিনিয়োগ থমকে রয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে ৭৫০ কাটি টাকা বিনিয়োগ করছে ইনফোসিস
২০১০ সালে ইনফোসিস ঘোষণা করেছিল, এ রাজ্যে ৫০০ কোটি তারা বিনিয়োগ করবে, এর ফলে ৫০০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। সেই লক্ষে তারা ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে জমিও কেনে। আট বছর পরে তারা যখন নয়ডায় ৭৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে, তখন ঘুরেফিরে প্রশ্ন উঠছে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতার জেরে ইনফোসিসকে সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ায় এ বঞ্চিত হলেন এ রাজ্যের কর্মপ্রার্থীরা।
এ রাজ্যে গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতি বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে বেশ ঘটা করেই। বহু লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রস্তাবিত সেই বিনিয়োগের কতটা এসেছে? রাজ্যের ভাঁড়ার কার্যত শূন্য।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন সফর বাতিল হওয়ার নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ উঠে এসেছে। তবে প্রশ্ন হল, তিনি ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা বার বার ইংল্যান্ডে বিনিয়োগ আনতে গেলেও কেন সফল হলেন না? টাটার ন্যানো প্রকল্প এই রাজ্য থেকে গুজরাটের সানন্দে চলে যাওয়ার পরে এ রাজ্যের শিল্প-বান্ধব মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই আন্দোলনের জেরে বামফ্রন্টকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শিল্পবান্ধব মনোভাব তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর জমিনীতি এ রাজ্য থেকে শিল্পপতিদের দূরেই সরিয়ে রেখেছে।
মমতা নীতি কিছুটা বদলেছেন, কিন্তু অনেকটা তাঁর দেখানো পথেই ভাঙড়ে আন্দোলন হয়েছে। সেখানেও একাংশে পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছেন আন্দোলনকারীদের সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। ইনফোসিসের অবশ্য জমি আছে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা দল হিসাবে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের এসইজেডের বিরোধিতা করা। লোকসভা ভোটের আগে এটাও ইস্যু হতে পারে রাজ্যের শিক্ষিত কর্মপ্রার্থীদের কাছে।
ক্ষমতায় এসে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব মমতা দেন দীর্ঘদিন বণিকসভার দায়িত্ব সামলানো অমিত মিত্রকে। পরে তাঁকে শিল্প দপ্তরের দায়িত্বও দেওয়া হয়। রাজ্যে শিল্পপতিরা আসেন, উৎসাহ প্রকাশ করেন। কিন্তু বিনিয়োগ করেন না!
হতাশা বাড়ছে রাজ্যের
এ রাজ্যে সরকারি নীতির পাশাপাশি সিন্ডিকেটও বড় সমস্যা। শাসকদলের জুলুমের অভিযোগ এখানে কলেজ থেকে শিল্প, সর্বত্র। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত পথে নামতে হয়।
সিপিএম ক্ষমতায় আসার আগে থেকে জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন এই রাজ্যের শিল্পবন্ধু ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। ক্ষমতাবদলও হয়েছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগে টাটার মতো গোষ্ঠী এ রাজ্য থেকে কারখানা গুটিয়েছে। তাতে রাজ্যের বদনাম বেড়েছে।
নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেও ডানলপ খুলতে পারেনি, বন্ধ হয়েছে হিন্দমোটর (যদিও কার কারণ ভিন্ন)। উল্লেখযোগ্য কোনও বিনিয়োগ যখন আসছে না, তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চপভাজার পরামর্শ দেওয়ায় তা কৌতুকের বিষয় হয়েছে। রাজ্যের ভাঁড়ার শূন্যই রয়ে গেছে।