স্বাধীনতার রাতে উদ্বোধনী সঙ্গীত আর কলকাতার হলের ছায়াছবি
সেই রাতে দিল্লিতে উদ্বোধনী সঙ্গীত কারা গেয়েছিলেন?
- Total Shares
১৪ অগস্ট ১৯৪৭, বৃহস্পতিবার। রাত তখন ঠিক এগারোটা। দিল্লিতে শুরু হল বৈঠক। স্বাধীনতার প্রস্তাব পাঠ করলেন জওহরলাল নেহরু। তা সমর্থন করলেন মুসলিম লিগ নেতা চৌধরী খালেক-উজ-জামান। প্রস্তাবে বলা হল, ঠিক মধ্যরাত্র পর স্বাধীন ভারতের মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। তখন সভাপতির আসনে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ।
রাত ১১টা বেজে ৫ মিনিট। সুচেতা কৃপালনি ও নন্দিতা কৃপালনী শুরু করলেন উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘বন্দেমাতরম’। এর পরে সভাপতির বক্তৃতা প্রথমে হিন্দিতে, তারপরে ইংরেজিতে।
উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইছেন সুচেতা ও নন্দিতা কৃপালনী (লেখকের সংগ্রহ থেকে)
এরপরে দু’মিনিট নীরবতা পালন করা হল যাঁরা দেশকে স্বাধীন করতে শহিদ হয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে। তারপরেই নেহরুর সেই বিখ্যাত বক্তৃতা “ট্রাস্ট উইথ দ্য ডেস্টিনি”।
রাত ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল হাততালি, উপস্থিত সকলের মধ্যে উষ্ণ করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়। এরই মধ্যে নেহরু উঠে পাশের একটি ছোট ঘরে গেলেন, যেখানে একজন পণ্ডিত সংক্ষিপ্ত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদন করলেন।
সারা দেশ তখন আবেগে ভাসছে। রাস্তায় রাস্তায় জনস্রোত, জাতীয় পতাকা হাতে মুহুর্মুহু বন্দেমাতরম ধ্বনি। সাংবাদিকরাও খুব ব্যস্ত ছিলেন পরের দিনের খবরের কাগজের রিপোর্ট তৈরি করার জন্য। যত দ্রুত সম্ভব তা সম্পাদকের দপ্তরে পাঠাতেও হবে। কারণ সারা দেশে পরের দিন যে সংবাদপত্রের বিপুল চাহিদা হবে!
১৫ অগস্ট ১৯৪৭-এর ছবি (ইন্ডিয়া টুডে)
নেহরুর প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য অনেকেই হয়েছিলেন। তবে ১৫ অগস্ট যাঁরা মন্ত্রী হয়েছিলেন তাঁদের তালিকায় সবার আগে নাম করতে হয় উপপ্রধানমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেলে। নেহরু ছাড়া তা তালিকায় বাকিরা হলেন: বল্লভভাই প্যাটেল (স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচার), রাজেন্দ্রপ্রসাদ (কৃষি ও খাদ্য), বলদেব সিং (প্রতিরক্ষা), আর কে সম্মুখম চেট্টি (অর্থ), শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (শিল্প), নরহর বিষ্ণু গ্যাডগিল (খনি ও শক্তি), কুবেরজি হরমুশজি ভাবা (বাণিজ্য), জন মাথাই (রেল), বি আর আম্বেদকর (আইন), রফি আহমেদ কিদোয়াই (যোগাযোগ), আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষা), কুমারী অমৃত কাউর (স্বাস্থ্য), জগজীবন রাম (শ্রম), ক্ষিতীশচন্দ্র নিয়োগী (ত্রাণ ও পুনর্বাসন) প্রমুখ।
স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রিসভা
গান্ধীজি সে দিন দিল্লিতে ছিলেন না, ছিলেন কলকাতার বেলেঘাটায়। কলকাতা তখন দাঙ্গাকবলিত। তিনি নিজের মতো করে ২৪ ঘণ্টা উপবাস করেছেন, সঙ্গে দেশের মঙ্গল কামনা করেছিলেন। তাঁপর সঙ্গে ছিলেন সুরাবর্দি ও ওসমান (কলকাতার প্রাক্তন মেয়র)। সে দিন সন্ধ্যায় কলকাতায় ভিড়ে ঠাসা এক জনসভায় গান্ধীজি বলেছিলেন, ১৫ অগস্ট শুধু বিদেশি শক্তির আগ্রাসন থেকে মুক্তির দিন নয়, এই দিন থেকেই ভারত ও পাকিস্তানেকর সম্প্রীতি রক্ষার গুরুদায়িত্ব পালনের শুরু।
সারা দেশে যখন জাতীয় পতাকা নিয়ে উন্মাদনা তখন হিন্দু মহাসভা ভারত-পাকিস্তান ভাগের প্রতিবাদস্বরূপ তাদের সদর দপ্তরে কালো পতাকা তুলেছিল। সে ই রাতেই সদরদপ্তর থেকে ভাঙী কলোনিতে গান্ধীর বাড়ি পর্যন্ত পদযাত্রাও করেছিল।
সেদিন লালকেল্লার বাইরে ভিড় (ইন্ডিয়া টুডে)
সেই সময় কলকাতার মিনার ও বিজলি ছবিঘরে অলকানন্দা ছবির প্রদর্শন হচ্ছিল। চিত্রা হলে প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘অধিকার’ সিনেমার পাশাপাশি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাষণ শোনানো হয়েছিল, বাজানো হয়েছিল “কদম কদম বড়ায়ে যা” গানটি। এই গানটিই ছিল সেই দিনের বিশেষ আকর্ষণ। রূপবাণীতে চলছিল অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রাম ছবিটি। সঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে দেখানো হয়েছিল জয়তু নেতাজি। রংমহলে অভিনীত হয়েছিল “বাংলার প্রতাপ” স্টার থিয়েটারে অভিনীত হয়েছিল মহারাজা নন্দকুমার। মিনার্ভা থিয়েটারে চলছিল চন্দ্রশেখর নাটক, যাতে অভিনয় করেছিলেন ছবি বিশ্বাস, জহল গাঙ্গুলি, সরযূ বালা প্রমুখ। শ্রীরঙ্গমে চলছিল গিরিশ ঘোষের নাটক প্রফুল্ল।
১৪ নম্বর হেয়ার স্ট্রিটে মেসার্স বিএন দত্ত তিন রকমের জাতীয় পতাকা তৈরির বিজ্ঞাপন দেয়। প্রতিটির মূল্য ১টাকা থেকে ৪টাকা। পি ৬ মিশন রো-এ অবস্থিত এভারলাস্ট ফাউন্টেন পেন কোম্পানি একটি পেন কিনলে তার সঙ্গে একটি জাতীয় পতাকা বিনামূল্যে উপহার দিয়েছিলেন।