প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় ইমরান খানের কাছে ঠিক কতটা সহজ হবে?

প্রার্থী তালিকায় কয়েকজন আন্তর্জাতিক জঙ্গি, ত্রিশঙ্কু হলে জঙ্গিদের ভূমিকা গুরত্বপূর্ণ হয়ে যাবে

 |  3-minute read |   22-07-2018
  • Total Shares

পাকিস্তানে যদি কিছু মাত্রাতেও গণতন্ত্র অবশিষ্ট থেকে থাকে তা হলে ২০১৮ নির্বাচনের আগে তা ভয়ঙ্কর ভাবে ধ্বংস করতে চলেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বেশ খোলাখুলি ভাবে সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখান হচ্ছে যাতে সংবাদমাধ্যম নওয়াজ শরিফের পিছনে না ছোটে। এর ফেল দেশের ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানের কাছে নির্বাচনের উইকেটটা বেশ মসৃণ হয়ে উঠছে।

২৫ জুলাই নির্বাচন হওয়ার কথা পাকিস্তানে। কিন্তু তার কয়েক সপ্তাহ আগেও সন্ত্রাস দমনের কোনও সদিচ্ছাই সেনাবাহিনীর মধ্যে চোখে পড়ছে না। নির্বাচনের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র-ঘোষিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি তথা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হরকাত-উল-মুজাহিদিনের প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রেহমান খলিল প্রকাশ্যে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফি (পিটিআই)-কে সমর্থন করেছেন

body-copy_072218112814.jpgপাকিস্তানে নির্বাচনী প্রচারে ইমরান খান [ছবি: ফেসবুক/পিটিআই]

তালিবান ও পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিদের উপর দুর্বলতার জন্য পাকিস্তানে ইমরান খান 'তালিবান খান' নামে পরিচিত। সামনের নির্বাচনে এই ইমরান খানই সে দেশের সেনাবাহিনীর কালো ঘোড়া হয়ে উঠেছেন।

প্রথমে নওয়াজ শরিফকে শাস্তি দিয়ে ও পরে শরিফের দল পিএমএল-এনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে পাকিস্তান সেনবাবাহিনী পঞ্জাব প্রদেশে ইমরান খানের জমি শক্ত করে দিয়েছে। পিটিআই-কে খলিলের সমর্থন এই চক্রান্তেরই অঙ্গ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে যে স্পেশালি ডেসিগনেটেড গ্লোবাল টেররিস্ট (এসডিজিটি) তালিকা প্রকাশ করে হয়েছে তাতে খলিলের নাম উল্লেখ ছিল। তাঁর দু'দুটি সংগঠনকেই যুক্তরাষ্ট্রের তরফে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, আফগানিস্তানের আল-কায়েদার সঙ্গেও খলিলের সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক জিহাদের যে ঘোষণাপত্র সই করা হয়েছে তাতে এই খলিলেরও স্বাক্ষর রয়েছে। এই ঘোষণাপত্র ওসামা বিন লাদেনও স্বাক্ষর করেছিলেন।

body1_072218112914.jpgফজলুর রেহমান খলিল [ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স]

নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাস ছড়িয়েছিল খলিল। খবরের প্রকাশ, কার্গিলে অপারেশন বদরের সময় এই খলিলের সমর্থকরাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মালপত্র বহনে সাহায্য করেছিল।

গত মঙ্গলবার ইমরান ঘনিষ্ঠ আসাদ উমার ঘোষণা করেছেন যে খলিল সরকারি ভাবে ইমরানের রাজনৈতিক দল পিটিআইতে যোগ দিয়েছেন। পরে দলের তরফ থেকে সংযোজন করা হয়েছে যে খলিল ও তার সমর্থকরা ইসলামাবাদ আসনে পিটিআইকে সাহায্য করবে।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের প্রাক্তন ডিজিপি কুলদীপ খোড়া জানিয়েছেন, "নব্বইয়ের দশকে খলিল সমর্থকরা জম্মু কাশ্মীরে সক্রিয় ছিল এবং তাঁর দুটি জঙ্গি সংগঠনই সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর উপর আক্রমণ চালিয়েছেন। মৌলানা মাসুদ আজহারও এই দলে ছিল। আজহারকে গ্রেপ্তার করা হলেও, ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে এয়ার ইন্ডিয়ার হাইজ্যাক হওয়া বিমানের যাত্রীদের মুক্তিপণ মেটাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে পরবর্তীকালে পাকিস্তানে জৈশ-ই-মহম্মদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠান করে।"

body2_072218113011.jpgহাফিজ সৈয়দ [ছবি: এপি]

পাকিস্তান বিধানসভা নির্বাচনে খলিল ছাড়াও আরও কয়েক জন জঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে। খোড়ার কথায়, "যে ভাবে সন্ত্রাসবাদীদের মূলস্রোতে যুক্ত করা হচ্ছে হচ্ছে তা সত্যিই ভয়ঙ্কর। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত নেতারা এখন জেলে রয়েছেন। আর যাদের জেলে থাকার কথা তাদের মূলস্রোতে ভিড়িয়ে দিচ্ছে দেশের সেনাবাহিনী।"

হাফিজ মুহাম্মদ সৈয়দ এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছেন। তাঁর পুত্র তালহা সৈয়দ সারগোধা থেকে প্রার্থী হয়েছেন আর জামাই খালিদ ওয়ালিদ লাহোর থেকে লড়াই করছেন। হাফিজ সৈয়দের দল আল্লাহ -ও-আকবর তেহরিকের সঙ্গে মোট ২৬৫ জন প্রার্থী এবারে জোট বেঁধেছে।

সৈয়দও কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ ঘনিষ্ঠ। তাঁর ও তাঁর সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) গ্রে তালিকায় পাকিস্তানের নাম রয়েছে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানে সৈয়দকে তুলে ধরা হচ্ছে।

body3_072218113107.jpgপাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ [ছবি: রয়টার্স]

যদি ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয় তাহলে এই জঙ্গিদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। পাকিস্তানের টেরর ওয়াচ লিস্টের সিডিউল -৪ তালিকায় ঔরংজেব ফারুকির নাম রয়েছে। তিনি এবার করাচি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। শিয়া সংখ্যালঘুদের হত্যার জন্য তাঁর দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জনমৎ পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

এই তালিকার কোনও শেষ নেই।

কট্টরপন্থী তেহরিক-এ-লাব্বাইকের নেতা খাদিম হুসেন রিজভির ১৫২জন প্রার্থী এই নির্বাচনে লড়াই করছেন। পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে সেনাবাহিনী সুকৌশলে মোহম্মদ আহমেদ লুধিয়ানভির নাম জঙ্গি তালিকা থেকে সরিয়ে দিয়েছে যাতে তাকে মূলস্রোতে নিয়ে আসা যায়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্বাচনের ভবিতব্য প্রায় ঠিকই করে ফেলছিল। কিন্তু দেশে ফিরে জেলে গিয়ে সেনাবাহিনীর ছককে কিছুটা হলেও বানচাল করে দিয়েছেন নওয়াজ শরিফ।

নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, সেনাবাহিনীই শেষ কথা বলবে। পাকিস্তানের কিছু সুশীল সমাজ এখনও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মরিয়া চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু তা তো অন্ধকারে হাতড়ানোর মতো।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

GAURAV C SAWANT GAURAV C SAWANT @gauravcsawant

Executive Editor, India Today TV. Author Dateline Kargil (Macmillan).

Comment