পাকিস্তানের ইমরান খানই এখন চিনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু
সে দেশের ভোটপ্রক্রিয়ার ব্যাপক প্রশংসা করেছে চিন
- Total Shares
গণনার সময়ে পাকিস্তানে এগিয়ে থাকা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানিয়ে চিন বলেছে, নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল ‘সাবলীল’ এবং তারা “নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।”
২৬ জুলাই পর্যন্ত গণনা অনুযায়ী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এগিয়ে ছিল, এক চিনের কৌশল-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ইন্ডিয়া টুডেকে জানিয়েছেন যে ইমরান খানকে তাদের ‘সেরা বন্ধু’ হিসাবে দেখবে বেজিং।
একটি সাক্ষাৎকারে বেজিংয়ের সেন্টার ফর চায়না অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের গাও ঝিকাই বলেন, “যিনিই পাকিস্তানের নেতা বা নেত্রী হোন না কেন, তাঁর সঙ্গেই চিনকে খুব সতর্ক ভাবে কাজ করতে হবে।” প্রাক্তন চিনা নেতা দেং জিয়াওপিংয়ের দোভাষী হিসাবে কাজ করা গাও বলেন, “ইমরান খানের প্রসঙ্গে বলতে পারি—এখনও পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন—তাঁকে সেরা বন্ধুর মর্যাদাই দেওয়া হবে। তিনি চিনে আসবেন এবং ধরে নেওয়া যায় যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা চিন-পাকিস্তান বন্ধুত্বের ধারা বজায় রাখবেন।”
পাকিস্তানের ভোটের ফলকে সমর্থন করেছে চিন, প্রবল চাপে থাকা পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনকে (ইসিপি) সাধুবাদ জানিয়েছে তারা। ফলাফল দেরিতে প্রকাশ হওয়া নিয়ে এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলে কমিশনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেন, “পাকিস্তানে এমন সুন্দর ভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলতে দেখে আমরা খুশি হয়েছি। আমরা একান্ত ভাবে আশা করি যে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে পারবে পাকিস্তান।”
শাশ্বত বন্ধুত্ব? বেজিংয়ের দিকে ইতিমধ্যেই হাত বাড়াতে শুরু করেছেন ইমরান (ছবি: রয়টার্স)
আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গলে উল্লেখ করতে হয়, পাকিস্তানে চিন দূতাবাসের এক আধিকারিক পাকিস্তানের নির্বাচনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। ইসলামাবাদের চিনা দূরাবাসের উপ অধিকর্তা ঝাও ঝিয়ান টউটারে বলেন, “২০১৮ সালে পাকিস্তানের এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের সাক্ষী থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি।” তিনি লেখেন, পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন আজ এইরকম সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য তাদের অভিবাদন প্রাপ্য। ফল যাই হোক আর যিনিই ভোটে জিতুন না কেন, আসলে পাকিস্তানই জয়ী হয়েছে।”
চিনের বিদেশমন্ত্রক বলেছে যে তারা ইতিমধ্যেই পরবর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। মুখপাত্র গেং বলেছেন, “চিন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বকে সমর্থন করেন দু-দেশের মানুষ ও দুই রাষ্ট্র। ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, তার কোনও প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির উপরে পড়বে না। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন কৌশলগত সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চিন প্রস্তুত।”
নওয়াজ শরিফকে যথেষ্ট মদত দিয়েছে চিন, চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিইপিসি) তৈরির জন্য ৬২ বিলিয়ন ডলার চিন দিয়েছিল। এই প্রকল্পের অধীনে পঞ্চাবে অনেকগুলি বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে। এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছিলেন ইমরান খান।
চিন যখন তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড নামে ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে তখন পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য সিইপিসি এবং নওয়াজ শরিফ সরকারের সুবিধা হয়েছে। শরিফ ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আগেই রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়কে পাকিস্তানে পাঠিয়ে চিন একটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা করেছিল, তাতে তারা বলেছিল
যে তাঁর সরকারই এই প্রকল্পের বিকাশে সবচেয়ে ভালো কাজ করছে, পানামা পেপার্স নিয়ে বিতর্কের জেরে শরিফ যখন তাঁর নিজের দেশে জনি হারাচ্ছেন তখন তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, “যদি কোনও ব্যতিক্রম না ঘটে তা হলে পিএমএল-এনের (শরিফের দল) ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল, সরকার একই থাকলে তারা সিপিএসি প্রকল্পকে একই ভাবে এগিয়েও নিয়ে যাবে।”
একই সঙ্গে চিনের প্রত্যাশা, নতুন সরকারও এই সিপিইসি প্রকল্পকে সমর্থন করবে, যদিও কয়েকটি প্রকল্প পরিবর্তন করা হতে পারে। গাও বলেন, “আশা করছি নতুন সরকারও সিপিইসি প্রকল্পকে সমর্থন করবে। এই প্রকল্পগুলির প্রত্যেকটিই মূলধন-নির্ভর এবং শেষ হতে অনেক বছর সময় লাগবে। এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে, এই প্রকল্প পাকিস্তানকে নানা ভাবে সুবিধা দেবে, নানা ধরনের যোগাযোগ-মূলক প্রকল্প প্রকল্পের উন্নতি হবে এবং পাকিস্তানের বিকাশ স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের ভূমিকা রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তানে প্রচুর কর্মসংস্থানও হবে।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্ত্র মোদী ও প্রেসিডেন্ট জাই গত এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত সম্পর্ক মেরামত করার জন্য তিনটি বৈঠক করেছে। গাও বেলন, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের দিকেও তাকিয়ে রয়েছে বেজিং। তিনি বলেন, “ওরা মতপার্থক্য পিছনে ফেলে রেখে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে পারে। যদি তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ও তারা নিজেদের মতপার্থক্য দূর করতে পারে, তা হলে চিন যারপরনাই খুশি হবে।”
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে