যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়িত করলে লোপেজ-ই হবেন মেক্সিকোর সেরা রাষ্ট্রপ্রধান
প্রতিশ্রুতি পূরণে এখনই তাঁকে সচেষ্ট হতে হবে
- Total Shares
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরে মার্কিন রাজনীতিতে কট্টর দক্ষিণপন্থা কিংবা ভ্লাদিমির পুতিনের মস্তিস্কপ্রসূত রাশিয়ার রাজনীতিতে আগ্রাসন অথবা নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতা দখলে ভারতীয় রাজনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ যখন নয়া গণতন্ত্রের নজির বলে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাবা বসাচ্ছে, পাশাপাশি নয়া ফ্যাসিজিমকে প্রতিষ্ঠিত করছে, তখন মেক্সিকোয় শাসনের পরিবর্তন ঘটল। এমন এক সময়ে মেক্সিকোর মানুষ রক্ষণশীল দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ না করে এমন একজনকে রাষ্ট্রনায়ক বানালেন, যিনি রাজনৈতিক ভাবে বাম মনোভাবাপন্ন। মেক্সিকোর সাম্প্রতিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দুই রাজনৈতিক শক্তিকেই জনসমর্থনের তলানিতে নামিয়ে দিয়ে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জয়ী হয়েছেন আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর।
দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে লোপেজ
মেক্সিকোয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হবার পর থেকে আর কোনও রাষ্ট্রপতির যেখানে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট মেলেনি সেখানে লোপেজ ওব্রাডোর ক্ষমতাসীন হয়েছেন ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে। মেক্সিকোর রাজনৈতিক ইতিহাসে এটাই ভোট প্রাপ্তির সর্বোচ্চ রেকর্ড। কিন্তু ওই রেকর্ডের থেকেও বড় ঘটনা হল মেক্সিকোর মানুষ কেবল যে দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীল রাজনীতিকদের ক্ষমতার অলিন্দ থেকে শত যোজন দূরে সরিয়েছেন তা নয়, তাঁরা কাছে টেনে নিয়েছেন ওব্রাডোরের মতো একজন বামমনস্ক নেতাকে। তেমনি এটাও আর একটি ঘটনা, মেক্সিকোতে রক্ষণশীল দু’টি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের বাইরে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বাম মনোভাবাপন্ন কোনও দল বা নেতার এ বারই প্রথম ক্ষমতা দখল।
লোপেজের এই জয় তাঁর একার নয়। আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট করেই তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন। সেই জোটের শরিকরাও প্রধানত বামপন্থী বা বাম মনোভাবাপন্ন। মেক্সিকোর নির্বাচনে শাসক হিসেবে বামপন্থী লোপেজকে বেছে নেওয়ার এই ঘটনা মেক্সিকোর রাজনৈতিক ইতিহাসে যেমন নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল একই সঙ্গে গোটা লাতিন আমেরিকা এবং মধ্য আমেরিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও যোগ করল এক তাৎপর্যময় মাত্রা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের বন্ধু শক্তির বিরুদ্ধে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলির মানুষ যে লড়াই চালাচ্ছেন মেক্সিকোর এই নির্বাচন তাদের লড়াকু মানসিকতায় বেশ খানিকটা বাড়তি উদ্দীপনার পারদ জুগিয়ে দিল।
নির্বাচনের প্রচারের শেষ লগ্নে লোপেজ
প্রসঙ্গত ১৯২৯-৩০ সাল থেকে মেক্সিকোয় চলছে দ্বিদলীয় শাসন ব্যবস্থা। অর্থাৎ ৮৯ বছর ধরে সে দেশে বহাল ছিল ওই ধরনের শাসনতন্ত্র। তার মধ্যে একটানা ২০০০ সাল পর্যন্ত শাসন ক্ষমতা দখলে রেখেছিল পিআরআই। ৭৭ বছর পর বিরোধী পিএএন প্রথম ক্ষমতায় আসে ২০০০ সালে। ১২ বছর পর ২০১২ সালে ফের ক্ষমতা পুনর্দখল করে পিআরআই। ১২ বছর আগে ২০০৬ সালের মেক্সিকো নির্বাচনে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর। তিনি পরাজিত হয়েছিলেন মাত্র এক শতাংশ ভোটের ব্যবধানে। সে বার তিনি প্রার্থী ছিলেন পিআরডি দলের। ২০১২ সালেও তিনি পিআরডি দলের হয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু সেবার তিনি পরাস্ত হন আরও বেশি ভোটের ব্যবধানে। এরপর পিআরডি দলের সঙ্গে নীতিগত ও অবস্থানগত মতপার্থক্যের জেরে ২০১৪ সালে দল ছেড়ে তিনি নতুন দল গড়েন। আর নতুন দলের প্রার্থী হয়েই সাম্প্রতিক নির্বাচনে তিনি কাঙ্ক্ষিত জয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
লক্ষ্যনীয় যে দেশের জনগণ একজন বামপন্থী রাজনীতিককে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নির্বাচন করল সেই মেক্সিকোর অর্থনীতি প্রধানত মার্কিন নির্ভর। মেক্সিকো থেকে রপ্তানির ৮০ শতাংশই যায় আমেরিকায়। তেমনি মার্কিন বিনিয়োগই মেক্সিকোর শিল্প বিকাশের অন্যতম রসদ। মেক্সিকানদের বড় সংখ্যা নানা ধরনের পেশার কারণে বসবাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আমেরিকায় বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেন মেক্সিকানরাই থেকে। আমেরিকা থেকে সেই সব মেক্সিকানদের পাঠানো অর্থ মেক্সিকোর একটি বড় আয়।
এ ছাড়া অবাধ বাণিজ্যের হাত ধরে আমেরিকা থেকে গম ছাড়াও অন্য বহু কৃষিপণ্য মেক্সিকোর বাজার দখল করেছে আগেই। এতে মেক্সিকোর কৃষিব্যবস্থা যে কার্যত যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। কৃষি ধ্বংস হওয়ায় মেক্সিকোর গ্রামগুলির অধিকাংশ মানুষ বেকার হয়েছেন। বেকার হয়ে যাওয়া মানুষের একটা বড় অংশ হু হু করে মার্কিন বহুজাতিকের তৈরি কারখানায় কাজ নিতে বাধ্য হয়েছেন নামমাত্র মজুরির বিনিময়েই। তাঁরা দিনের পর দিন চরম শোষণকে মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে নিপীড়িত মানুষের একটা অংশ সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেয় কাজের সন্ধানে।
প্রেসিডেন্ট লোপেজ
মেক্সিকোর স্বনির্ভর অর্থনীতির বুনিয়াদ ভেঙে পড়ার পর ধীরে ধীরে অরাজকতা গ্রাস করে সমাজকে। দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। অসামাজিক কার্যকলাপ, অপরাধ প্রবণতা তীব্রতর হয়। আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে মাদক চোরাকারবার প্রকট আকার নেয়। মেক্সিকো হয়ে ওঠে বিশ্বের মাদক চোরাকারবারদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। লোপেজ ওব্রাডোর নির্বাচনের প্রচার থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো এবং মাদক চোরাকারবার হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। মার্কিন কর্পোরেট পুঁজির সীমাহীন শোষণে মেক্সিকো যে বিশ্বের অন্যতম সম্পদ-বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে, লোপেজ ওব্রাডোর সেই বৈষম্য হ্রাসের কথাও বলেছেন নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই।
লক্ষ্য করার মতো আরও একটি বিষয় হল, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার পরই তিনি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। ফলত লোপেজ ওব্রাডোরের দায়দায়িত্ব যে যথেষ্ট কঠিন হয়ে পড়ল সে কথা বলাই বাহু্ল্য।
of jobs and companies lost. If Mexico is unwilling to pay for the badly needed wall, then it would be better to cancel the upcoming meeting.
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) January 26, 2017
সীমান্তে প্রাচীর, অনুপ্রবেশ প্রভৃতি প্রশ্নে মেক্সিকোর স্বার্থরক্ষার কঠিন কাজগুলি তাঁকে সুষ্ঠু ভাবে করতে হবে। অর্থনীতিতে মার্কিন নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাটাও তাঁর কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে তিনি তাঁর বাম্পন্থী দৃষ্টিভঙ্গিতে এই পাহাড়প্রমাণ সমস্যার সমাধান করবেন সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে তাঁকে তাঁর দেওয়া কথা রাখতে হবে। আপাতত তিনি ঘোষণা করেছেন রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে তিনি থাকবেন না। থাকবেন মধ্যবিত্তের সাধারণ বাসভবনেই। রাষ্ট্রপতির নিজস্ব বিমানটি বিক্রি করে দেবেন, নিজের বেতন কমাবেন। রাষ্ট্রপতি ভবনকে রূপান্তরিত করবেন শিল্পকলা কেন্দ্রে।
লোপেজ ওব্রাডোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভিত্তিতেই ১ জুলাই মেক্সিকোর জনগণ তাঁদের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচনে রক্ষণশীল দু’টি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে জয়লাভের পর দেওয়া ঘোষণায় লোপেজ বলেছেন, তাঁর একটি যুক্তি সঙ্গত লক্ষ্য আছে। তিনি মেক্সিকোর ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট হতে চান। আশা করাই যায় যে দেশের অভ্যন্তরে লোপেজ যা করবেন তা নিশ্চিত ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে, কিন্তু সেটা ঘটনা নয়, দেখার বিষয় আমেরিকার প্রতি তাঁর আচরণ কেমন। কারণ তার উপরই তাঁর প্রশাসনিক নীতি নির্ভর করছে, যেখান থেকে তাঁর প্রশাসনকে সংজ্ঞায়িত করা যাবে।
রাষ্ট্রপতির জন্য নির্দিষ্ট সরকারি অট্টালিকায় থাকবেন না লোপেজ
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মেক্সিকো ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ট্রাম্প বারবারই আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে একটি সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কথা বলে আসছেন, যার একশো ভাগ খরচ মেক্সিকোকেই দিতে হবে। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প মেক্সিকোর অভিবাসীদের ধর্ষক ও অপরাধী বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের উপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছেন। ট্রাম্পের এই ধরনের আচরণের পরও মেক্সিকোর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতো আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় উদ্যোগী হন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে কোনও ধরনের সংঘাত যাতে না হয়, সেই চেষ্টা করেন।
মেক্সিকানরা পেনা নিয়েতোর এই ধরনের দাসত্বসুলভ আচরণের তীব্র নিন্দা করে। কিন্তু লোপেজ জাতীয়তাবাদী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি আমেরিকার সঙ্গে তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় কম আপস করবেন। এতে তিনি বহুলাংশেই মেক্সিকোবাসীর মন জয় করেন। কেবল তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি যে বারবার মেক্সিকোর সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখার আহ্বান জানান, তাতেও মেক্সিকোর জনগণের অনেক কাছাকাছি চলে আসেন। এছাড়াও তিনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিন্দনীয় অভিযানের তীব্র সমালোচনা করে এবং অভিবাসীদের কাছ থেকে তাঁদের শিশুদের বিচ্ছিন্ন করার নীতিকে উদ্ধত, বর্ণবাদী ও অমানবিক বলে আখ্যায়িত করে মেক্সিকোর জনগণের কাছে তাঁর মনোভাব এবং নীতিকে তুলে ধরতে সমর্থ হন।
তাঁর দেওয়া এই সব প্রতিশ্রুতি অধিকাংশ মেক্সিকানেরই পছন্দ হয়েছে। কেবল তাই নয় তাঁরা তাঁকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখেন, যিনি কিনা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবেন এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মর্যাদা আবার ফিরিয়ে আনতে পারবেন তাই তাঁর প্রতি দেশের মানুষ আস্থা রেখেছেন।
গত শতকের নব্বই দশক পর্যন্ত মেক্সিকো ও আমেরিকার সম্পর্ক এক রকম স্বাভাবিকই ছিল বলা যায়। ১৯৯০-এর দশকে মেক্সিকোর ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দুই দেশের বাণিজ্য আরও উন্মুক্ত করতে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে শুরু করে। ব্যবসায়ীদের চাপে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোনাস সালিনাস ১৯৯৪ সালে আমেরিকা ও কানাডার সঙ্গে উত্তর আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা) চুক্তি করেন। এই চুক্তির ফলে মেক্সিকো বেশ লাভজনক অবস্থানে চলে যায়। পরবর্তী বছরগুলোয় নাফটা কেবল মেক্সিকোর অর্থনীতিকেই বদলে দেয়নি, বলা যায় আমেরিকার বৈদেশিক নীতিতেও এক ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। এর ফলে আমেরিকার প্রতি দেশটির আনুগত্যের মনোভাব গড়ে ওঠে।
পেনা নিয়েতো ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট পেনা নিয়েতো মেক্সিকোর ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তিনিও আমেরিকার প্রতি আনুগত্যের এই মনোভাব বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। তিনি মার্কিন প্রশাসনকে খুশি করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা জারি রেখেছিলেন। ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে যখন ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একজন প্রার্থী, তখন তিনি তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু মেক্সিকোর জনগণ তাঁর এই আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁদের মতে, যে প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী প্রচারে মেক্সিকোবিরোধী প্রচার চালায়, তাঁর প্রতি অপ্রয়োজনীয় এই শ্রদ্ধা প্রদর্শন একেবারেই ঠিক নয়।
এখানেই ট্রাম্পপ্রীতি ফুরিয়ে যায় না। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তাঁর প্রশাসনকে সন্তুষ্ট করার জন্য মেক্সিকোর প্রচেষ্টা নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছায়। পেনা নিয়েতো সরকার ওয়াশিংটনের নির্দেশে আরও আগ্রাসী অভিবাসন নীতি গ্রহণ করতে শুরু করে। আমেরিকা যখন মেক্সিকোকে তার সীমান্তে অভিবাসীদের আটক করা এবং বিতাড়িত করার জন্য বলেছিল, তখন পেনা নিয়েতো বিনা বাক্যব্যয়ে তা মেনে নিয়েছিলেন। যদিও পেনা নিয়েতোর ওই সব কর্মকাণ্ড মেক্সিকানদের মধ্যে দারুণ ভাবে সমালোচিত হয় এবং সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁর ব্যর্থতা তাঁকে মেক্সিকোর ইতিহাসে সবচেয়ে নীতিহীন প্রেসিডেন্টে হিসাবে পরিণত করে।
আসলে পেনা নিয়েতোর জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকা এবং মেক্সিকোর বর্তমান পরিস্থিতিই লোপেজকে প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে। মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে পরিবর্তন আনবেন—এই আশাতেই মেক্সিকান ভোটাররা লোপেজকে যে বিপুল ভাবে ভোট দিয়েছেন সে কথা আজ বলাই বাহুল্য। কিন্তু এখন লোপেজকে তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণে সচেষ্ট হতে হবে তা না হলে মেক্সিকোতে যে নতুন যুগের সুচনা হল তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব হারাবে।