আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, আমরা কি নিজেদের পরিবর্তন করতে পেরেছি?
বলা হচ্ছে যে চাপে পড়ে বাজপেয়ী এই কাজ করেছে, বর্তমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এই পরিস্থিতে কী করতেন
- Total Shares
একজন জঙ্গিকে সম্মান জানিয়ে সম্বোধন করার জন্য রাহুল গান্ধীকে (নামের সঙ্গে 'জি' শব্দটি উল্লেখ করেছিলেন তিনি) আক্রমণ করেছে বিজেপি। সে দিন থেকেই আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণের ঘটনাটি আমার স্মৃতিতে বারবার ফিরে আসছে। শেষ ৪৮ ঘণ্টায় ওই অপহরণের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহগুলো বেশ মনে করতে পারছি - কী ভাবে বিজেপি জঙ্গিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল আর কী ভাবে অজিত দোভালের প্রহরায় মাসুদ আজহারকে ভারতীয় জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
সেই সময়ে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল তার অধিকাংশই বেশ সাদামাটা কিংবা ডাহা মিথ্যে ছিল।
সেই সময়ে আমি হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সম্পাদক ছিলাম এবং বিশদে এই সংক্রান্ত খবরগুলো প্রকাশ করেছিলাম। ঘটনাটির বিবরণ আমি যতটা মনে করতে পারছি:
কাঠমান্ডু থেকে বিমানটিকে অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণকারীদের জন্য বিমানের ভিতরে কি ভাবে অস্ত্র মজুত করা হয়েছিল তা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন যে নেপালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এর জন্যে দায়ী। আবার, কেউ কেউ জানিয়েছিলেন যে বিমানবন্দরের কর্মীরা এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ বিষয়ে সবচাইতে গুরত্বপূর্ন ছিল ভারতীয় গোয়েদা সংস্থা র'য়ের বক্তব্য। আমাদের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল, নেপালের পাকিস্তান দূতাবাসের একজন আধিকারিক নিজের 'ডিপ্লোম্যাটিক স্ট্যাটাস' ব্যবহার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে গিয়ে অপহরণকারীদের অস্ত্র পৌছিয়ে দিয়েছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার মতে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই গোটা অভিযানটির দায়িত্বে ছিল।
স্বসস্ত্র তালিবানরা কান্দাহার বিমানবন্দরে, পিছনে অপহৃত বিমানটি [ছবি: রয়টার্স]
তার মানে, আমরা কি ব্যর্থ হয়েছিলাম?
একদমই তাই, আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম।
বিমানটি যখন তেল ভর্তি করতে অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করল তখনই আমরা বিমানের চাকা ফুটো করে দিতে পারতাম কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে অপহরণকারীদের পরাস্ত করতে পারতাম।
কিন্তু, আমরা, সেরকম কিছুই করলাম না।
পরবর্তী দিনগুলোতে এই নিয়ে প্রচুর বিশ্লেষণ হয়েছে। বিশ্লেষণ করে বোঝা গিয়েছিল, এই ধরণের অপহরণের ঘটনার মোকাবিলা করার মতো কোনও প্রস্তুতিই আমাদের ছিল না, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত ছোট বিমানবন্দরগুলোতে।
ডিসেম্বর ৩০, ১৯৯৯: অপহৃত বিমানটি ঘিরে রয়েছে তালিবানরা [ছবি: রয়টার্স]
এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কী ভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে অমৃতসরের স্থানীয় আধিকারিকদের কোনও ধারণাই ছিল না। প্রত্যাঘাতের উপায় ঠিক করতে দিল্লিরও অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিল। বেশি আক্রমনাত্মক পদক্ষেপ নিলে অপহরণকারীরা যাত্রীদের হত্যা করতে পারে, আমাদের মধ্যে সেই সেই আতঙ্কও ছিল।যখন অমৃতসরের বাহিনীগুলোর কাছে জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থার ট্রাক ব্যবহার করে বিমানটিকে আটকে দেওয়ার (খুব সম্ভবত চাকা ফুটো করে) নির্দের্শ এসেছিল, ততক্ষনে বিমানটি পুনরায় উড়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
অপহরণকারীরা কি প্রথম থেকেই বিমানটিকে কান্দাহারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল? আমার বিশ্বাস, কান্দাহার প্রথম থেকেই তাদের পরিকল্পনাতে ছিল।
সেই সময়ে, খুনে অসভ্য তালিবানরা আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করত যারা নিজেদেরকে গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন (যদিও হাতে গোনা কয়েকটি দেশের মতো পাকিস্তানও তালিবান শাসনকে মান্যতা দিয়েছিল) করে রেখেছিল। এই তালিবান শাসনের জন্মের সময়ে আইএসআই কতকটা দাইমার ভূমিকা পালন করেছিল। সুতারং, যুক্তিসঙ্গতভাবেই, প্রথম থেকেই অপহরণকারীদের গন্তব্য ছিল কান্দাহার।
মুখোশধারী অপহরণকারীদের সঙ্গে তালিবানরা [ছবি: রয়টার্স]
তালিবানরা কতটা অমানবিক হতে পারে তা নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলোর কাছে বারংবার দরবার করেছিল ভারত। কিন্তু ভারতের কথায় কেউ কর্নপাত করেনি। অপহৃত বিমানটি কান্দাহারে অবতরণ করার পর, আমাদের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমি দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। তাতে অবশ্য লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কারণ, সে সময়েই সকলেই বড়দিন ও নববর্ষের ছুটি কাটাচ্ছিলেন।
ভারতে, আলাপ-আলোচনার জন্যে, কান্দাহারেও একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল। সেই দলের কয়েকজন সদস্য পরবর্তীকালে আমাকে জানিয়েছিলেন, কান্দাহারে তাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করা হয়েছিল। তালিবানরা বেশ অন্তরঙ্গভাবে আইএসআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেলামেশা করছিল। তারা কোন পক্ষ নেবে তা তাদের আচরণ থেকে বেশ পরিষ্কার ছিল।
জঙ্গিরা বেশ কিছু অসংযত দাবি করেছিল। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধিদল (এই দলে র'য়ের আধিকারিকরা ও আইবি থেকে অজিত দোভালও ছিলেন) শেষ পর্যন্ত তাদের শুধুমাত্র তিন জনের মুক্তি শর্তে রাজি করাতে পেরেছিল।
অপহৃত বিমানটির থেকে মুক্ত পাওয়া যাত্রীরা [ছবি: রয়টার্স]
এর মধ্যে একজন বন্দির মুক্তি শর্ত নিয়ে কোনও রকম দর কষাকষিতে রাজি হয়নি জঙ্গিরা। তিনি মাসুদ আজহার। তার ভাই অপহরণকারীদের মধ্যে ছিলেন। অনেকেই মনে করেন, এই গোটা অভিযানটিই আজহারকে মুক্ত করতে করা হয়েছিল।
আমাদের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিমানে মজুত অস্ত্রগুলো দেখে দিল্লিতে বার্তা পাঠিয়েছিল যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আর কোনও রকম সম্ভাবনা নেই। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছিল যাত্রী সমেত বিমান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য অপহরণকারীরা মোটামুটি প্রস্তুত।
সেই পরিস্থিতিতে একজন প্রধানমন্ত্রীর কী আর করণীয় থাকতে পারে? অটল বিহারি বাজপেয়ী প্রথমে মুক্তি শর্তে রাজি হননি। তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা ব্রজেশ মিশ্রও একই মত পোষণ করেছিলেন।
কিন্তু, বিদেশের মাটিতে প্রায় শ'খানেক নিরীহ জনগণকে উড়িয়ে দেওয়া হবে, এর পর ভারত সরকার কি চুপ করে বসে থাকতে পারে?
শেষ পর্যন্ত, বাজপেয়ীর কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।
তিনি তিনজনকে মুক্ত করতে রাজি হয়ে যান।
বিদেশ মন্ত্রী যশবন্ত সিং মুক্ত জঙ্গিদের সঙ্গে একই বিমানে কান্দাহারে গিয়েছিলেন [ছবি: রয়টার্স]
সকলেই অবশ্য বাজপেয়ীর এই ঘোষণার সঙ্গে এক মত হননি। ফারুক আব্দুল্লাহ এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। একজন জঙ্গি কাশ্মীর জেলে বন্দি ছিলেন। ফারুক তাঁকে মুক্তি দিতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত, ফারুককে রাজি করতে র'য়ের তৎকালীন প্রধান আধিকারিক এএস দৌলতকে কাশ্মীর পাঠানো হয়। এর কিছু বছর পরে ফারুক আমাকে জানিয়েছিলেন যে তাঁর সেদিনকার দাবি একেবারেই যুক্তিসঙ্গত ছিল।
বাজপেয়ী কি সত্যিই চাপে ছিলেন? একদম, তিনি প্রচন্ড চাপে ছিলেন। অপহৃতদের আত্মীয়-স্বজনরদের চাহিদা সে সময়ে সরকারকে প্রচন্ড চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।
কিন্তু বাজপেয়ী কি সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের চাপেরও শিকার হয়েছিলেন? বর্তমানে বিজেপি তো সেই দাবিই করছে। যতদূর মনে পড়ছে এই তরফ থেকে সেরকম কোনও চাপ সৃষ্টি করা হয়নি (যদিও কিছু বিরোধী নেতা অপহৃতদের আত্মীয়র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের সঙ্গে কথা বলছিলেন)। সংবাদমাধ্যম কিন্তু সরকারকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নিজেই একটি অসম্ভব পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন।
যারা বাজপেয়ী ঘনিষ্ঠরা বলে থাকে, সংবাদমাধ্যম কিংবা বিরোধীদের চাপে পড়ে তিনি কখনই জঙ্গিদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না। তিনি দেশের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সুতারং, তিনি যখন এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন নিশ্চয়ই সবদিক বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
গোটা অভিযানটাই তাকে মুক্ত করার জন্য করা হয়েছিল, তিনি আজহার মাসুদ [ছবি: রয়টার্স]
যাই হোক, এই ঘটনায় জঙ্গিদের মুক্তির দিন পর্যন্ত, সংবাদমাধ্যম কিন্তু সরকারকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু, আমার মতে, মুক্তি পাওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে একই বিমানে যশবন্ত সিংকে কান্দাহার পাঠানোর সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। কান্দাহার বিমানবন্দরে অবতরণের পর যশবন্তকে বেশ অপমানিত হতে হয়েছিল। প্রায় ঘণ্টাখানেক তাঁকে বিমানে অপেক্ষা করতে হয়েছিল কারণ সেই সময়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে কেউ আসেনি। খবরের প্রকাশ, সেই সময়ে সকলেই নাকি প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিলেন।
কিন্তু, বিমানে একজন ভারতীয় মন্ত্রী রয়েছে জেনেও তালিবানরা একেবারেই বিনম্র ছিল না। এর থেকে পরিষ্কার যে এই গোটা ঘটনার চিত্রনাট্যটা আইএসআই-এর দ্বারা রচিত হয়েছিল।
এরই মধ্যে, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের একজন এক জঙ্গির সঙ্গে আলাপ করতে যান। ওই জঙ্গি ভারতীয়দের লক্ষ করে ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিল।
সেদিন কেন যশবন্ত সিং মাসুদ আজহার ও আরও দু'জন জঙ্গির সঙ্গে একই বিমানে কান্দাহার গিয়েছিলেন, তার ব্যাখ্যা আজ অবধি কেউই দিতে পারেনি। বাজপেয়ী অবশ্য পরে বুঝেছিলেন যে এই সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। কিন্তু, খুব ঘনিষ্ঠ মহলে, তিনি এই কথা বলেছিলেন। জনসমক্ষে এই নিয়ে কাউকেই দুঃখপ্রকাশ করতে দেখা যায়নি।
প্রচারের আলোতে আসার জন্য যশবন্ত নাকি কান্দাহার গিয়েছিলেন - সংবাদমাধ্যম এই ব্যাখ্যা দিয়েছিল। আমার মতে, এই অভিযোগ ঠিক নয়। বরঞ্চ, এর চাইতে আরও একটি ব্যাখ্যা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হচ্ছে - এই বিমানে মুক্তিপণ হিসেবে তালিবানদের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার ছিল (যদিও সরকার মুক্তিপণের কথা অস্বীকার করে)।তাই গোটা প্রক্রিয়ার উপর নজরদারি করতে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আরও একটি যুক্তি পাওয়া যায়, শেষ মুহূর্তে কোনও গন্ডগোলের সৃষ্টি হলে আলাপ আলোচনার জন্য একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্ৰয়োজন পড়তে পারতো।
সত্যিটা যাই হোক না কেন, একটা বিষয়ে কিন্তু পরিষ্কার - এই সিদ্ধান্ত যশবন্ত সিং ও সরকারের ভাবমূর্তিতে আঘাত করেছিল। গোটা বিশ্বজুড়ে একজন তালিবান নেতার হাত ধরে যশবন্তের ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছিল।
আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই অপহরণের কথা বারংবার তোলা হয়ে থাকে। কেন তোলা হয়, তা রাজনৈতিক নেতারাই বলতে পারবেন। কিন্তু আমাদের কিছু জিনিস ভুলে গেলে চলবে না।
গোটা বিশ্ব তালিবানদের আর তালিবানের বিরুদ্ধে আনা ভারতের অভিযোগগুলোকে উপেক্ষা করেছিল। শেষ পর্যন্ত, ৯/১১ হামলার পর হটাৎ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম ভেঙেছিল। কিন্তু, এখন আবার, যুক্তরাষ্ট্র তালিবানের সঙ্গে 'রফা' করতে চাইছে। এর পরিনাম কিন্তু ভয়ঙ্কর হবে।
এই অপহরণ যদি আইএসআই অভিযান নাও হয়ে থাকে, পাকিস্তান কিন্তু সেই তিন মুক্তি পাওয়া জঙ্গিকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। এই তিন জঙ্গির একজন পরবর্তীকালে ড্যানিয়েল পার্লকে অপহরণ করে হত্যা করেছিল। আর একজন কাশ্মীরে ফিরে এসে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। আর, তৃতীয়জন, মাসুদ আজহার তো একেবারে আইএসআইয়ের চোখের সামনে সক্রিয় জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিমানটি যখন অমৃতসরের বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিল তখনই আমরা ব্যাপক ভুল করেছিলাম। এখন যদি কোনও অপহৃত বিমান ভারতের কোনও ছোট বিমানবন্দরে অবতরণ করে, তাহলে বিমানবন্দর কতৃপক্ষের কি সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবে? নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কি বিমানে উঠে অপহরণকারীদের পরাস্ত করার মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত?
আমার সন্দেহ আছে।
আর, এবার, সবচাইতে বড় প্রশ্ন - যাত্রীদের পরিবর্তে জঙ্গিদের মুক্তির শর্ত মেনে নেওয়া কি ঠিক ছিল? বিজেপি এখন মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে। তারা দাবি করছে যে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাজপেয়ী বাধ্য হয়েছিলেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিজেপি কিন্তু বাজপেয়ীকে অপমানিত করছে কারণ তারা বোঝাতে চাইছে যে বাজপেয়ীর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
সত্যিই কি বাজপেয়ীর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল? নরেন্দ্র মোদী কি এই পরিস্থিতিতে অন্য কোনও পদক্ষেপ নিতেন?
আমি নিশ্চিত নই, কারণ ঘটনার দু'দশক বাদেও এই নিয়ে আমাদের কোনও সুনির্দিষ্ঠ নীতি নেই। এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, ভারত কি জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবে? যুক্তরাষ্ট্র করে না। ইজরায়েল করে না। কিছু ইউরোপীয় দেশ অবশ্য আলাপ আলোচনা করে থাকে।
ভারতের জন্য সঠিক উপায় কোনটি হবে?
আমরা জানি না। কারণ, এই নিয়ে আমরা কোনও দিনও পর্যালোচনা করিনি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নেয়নি। আমরা শুধু অতীত নিয়ে যুদ্ধ করে গিয়েছি।
এটাই ভারতীয় রাজনীতির ট্র্যাজেডি।
আর, আমাদের এই দুর্বল সুরক্ষা নীতির মাশুল কিন্তু আমাদেরকেই গুনতে হচ্ছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে