বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের পরেও বাস্তব পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হবে না কেন?
মদতদাতারা সীমান্তের ওপারে থাকলে প্রত্যাঘাতে লাভ হয় না, বহু উদাহরণ ইতিহাসে আছে
- Total Shares
ভারতীয় বায়ুসেনা সীমান্ত পার করে জৈশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটিগুলো চূর্ণ করে আসার পরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে মুক্ত করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও সার্বিক পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। এর পরেও ক্রমাগত সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান আর এই হামলায় তিনজন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন ও আরও ডজনখানেক নাগরিক আহত হয়েছেন।
এ সবের মাঝেই, পাকিস্তান সংসদে ইমরান খানকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য সংকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। যে সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রবল বিদ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। অভিনন্দন বর্তমানের মুক্তির সঙ্গে 'গুডউইল'-এর কোনও সম্পর্ক নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা সচরাচর যে অভিধান ব্যবহার করে থাকেন সেই অভিধানেও এই শব্দটির কোনও অস্তিত্বও নেই। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানও শুধুমাত্র তাঁর 'মনিব'দের নির্দেশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
সত্যটা হল, তদন্তকারীদের কাছ থেকে জেনারেল বাজওয়া যে 'শ্রেণীবদ্ধ খবর' পেয়েছেন তার পরেই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। যতই ইগো সমস্যা থাকুক না কেন, যে যুদ্ধ জয়ের কোনও আশাই নেই, কোনও সেনাপ্রধানই সেই যুদ্ধ শুরু করতে চাইবেন না। পারমাণবিক অস্ত্রের শুরুটা যদি পাকিস্তান থেকে হয় তাহলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্নের উদয় হবে। হয়তো, দেশটির অস্তিত্ব শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় দেখা যাবে।
পাকিস্তানের এই অস্তিত্ব সঙ্কট অবশ্য জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এই সঙ্কট সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়। সেই সঙ্কট আজও রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ১৯৭১ সালের মতো না থাকলেও, আগামী বারো বছরে এই সঙ্কট কোথায় গিয়ে ঠেকবে সে বিষয়ে কিন্তু কেউই নিশ্চিত নন। আফগানিস্তানের বিষয়ে সোভিয়েত হস্তক্ষেপ করেছিল বলে একটা সময়ে বেঁচে গিয়েছিল পাকিস্তান। এর পর, যখন ৯/১১-র প্রত্যাঘাতে উদ্যত হল যুক্তরাষ্ট্র, তখনও রক্ষা পেয়েছিল পাকিস্তান।
পাকিস্তানের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন ঘটবে না [ছবি: এপি]
এই দেশটির শুধু একটিমাত্র ভাবাদর্শ রয়েছে - মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করে দেওয়া। এই ভাবাদর্শকে পাকিস্তান বৈধ বলেই মনে করে।
এটা ঠিক যে আমরা বরাবর শান্তির দাবি করে যাব, এটাও ঠিক যে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান করেই চলব। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে এত কিছুর পরেও সন্ত্রাসবাদীদের আটকানো যাবে না।
সম্প্রতি, আরও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আইএসআই মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলো ক্রমশ শাখা প্রসারিত করে চলেছে, এই সংগঠনগুলো আর শুধুমাত্র আইএসআইয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। সময় বিশেষে এই সংগঠনগুলো 'মনিবের' নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিজেদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে।
ভারতকে এই সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে শিখতে হবে। সীমান্তের উল্টোদিকে যদি মদত দেওয়ার মতো লোক থাকে তাহলে প্রত্যাঘাতে কোনও লাভ হয় না - এই ধরণের বহু নজির তো পৃথিবীর ইতিহাসেই রয়েছে। এই মদতদাতারা ক্রমান্বয়ে অর্থ ও অস্ত্রসস্ত্র সরবারহ করে চলে। আর আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ও ক্ষেত্র বিশেষে রাজনৈতিক কারণের জন্য হতাশ হয়ে পড়া তরুণদেরও কোনও ঘাটতি থাকে না।
বহুল প্রচলিত উরি আক্রমণের আগেও সীমিত ক্ষেত্রে সার্জিকাল স্ট্রাইক হয়েছে। উরি আক্রমণের পরে একটি পরিবর্তনই ঘটেছে - ভারতের অবস্থানের। রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ভারত এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
আইএসআই মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলো আর শুধুমাত্র আইএসআইয়ের উপর নির্ভরশীল নয় [ছবি: রয়টার্স]
এর পাশাপাশি আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার নিয়মটাও বদলে ফেলেছি। আর এই পরিবর্তন জঙ্গি সংগঠনগুলো ও তাদের মদতদাতাদের যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তবে পাকিস্তান অবশ্য অভিযানে পাঠানো জিহাদিদের নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। পাকিস্তান জানে যে তারা ফিদায়েঁ এবং তারা আর কোনও দিনও ফিরবে না।
তাই বলে একটা বিষয় নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই; সার্জিকাল স্ট্রাইক কিংবা এয়ার স্ট্রাইক পাকিস্তানকে বদল করতে পারবে না। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র যতদিন না নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করছে ততদিন তৃণমূল স্তরের কোনও পরিবর্তন হবে না।
কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের ঝটিকা সফরগুলো একটা জিনিস নিশ্চিত করতে পেরেছে - আন্তর্জাতিক মহল এখন ভারতের অবস্থানের প্রতি সমমনস্কতা পোষণ করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের এখন আর খুব বেশি হৃদ্যতা নেই; বর্তমানে সৌদি আরব ভারত এবং পাকিস্তান দু'দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সাজুয্য রেখে চলেছে; তবে চিন এখনই ভারতের নীতি মেনে পাকিস্তানের সঙ্গ ছাড়তে পারছে না। হয়তো, চিন এখন আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত কারণ তারা একমাত্র ভেটো প্রদানকারী দেশ যারা জঙ্গি কার্যকলাপকে প্রকারান্তরে সমর্থন করে চলেছে।
চিন এখনই ভারতের নীতি মেনে পাকিস্তানের সঙ্গ ছাড়তে পারছে না [ছবি: রয়টার্স]
ইজরায়েলের অভিজ্ঞতা থেকে পরিষ্কার যে শুধুমাত্র সার্জিকাল স্ট্রাইক করে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ঠিক মতো 'শিক্ষা' দেওয়া গেলে মদতদাতাদের অবস্থান বদল করা সম্ভব।
পাকিস্তান এখনও ভারতের উপর নির্ভরশীল, ভারতের যা মোট জাতীয় উৎপাদন তার মধ্যে পাকিস্তানকেও ধরা আছে! তাই এর ভাগ পাওয়ার জন্য পাকিস্তানের জন্য চড়া মূল্য ধার্য করার পাশাপাশি ভারতের উচিত নজরদারিও বৃদ্ধি করা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে