বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক: নিহত জঙ্গিদের সংখ্যাটা হিসেবে করল কে?
নিরাপত্তার জন্য এই প্রত্যাঘাত প্রয়োজন ছিল, নির্বাচনে আসন বারাবার জন্য নয়
- Total Shares
ভারতবর্ষের অন্তর আত্মা হল অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও শান্তিপ্রিয়। তবে এটাও ঠিক ভারতবর্ষের মতো এতো বড় দেশে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকে, যার ভৌগলিক অবস্থান উত্তরে পাহাড় আর দক্ষিণে সমুদ্র। যে দেশের উত্তরের ভাষার সঙ্গে দক্ষিণের ভাষা মেলে না, আবার পূর্বের ভাষার সঙ্গে পশ্চিমের ভাষার কোনও মিল নেই। ভারতবর্ষের সংস্কৃতি ভারতের ইতিহাসে অনেক রক্তাক্ত যুদ্ধের কথা থাকলেও, ভারতবর্ষের মাটি কিন্তু প্রচন্ড সহনশীল। যুদ্ধ শুধু একপক্ষকে ধংস করে না, অন্য পক্ষকেও ধংস করে।
বায়ুসেনার প্রত্যাঘাত প্রয়োজন ছিল। আবেগ আর যুক্তি কখনও খুব পাশাপাশি থাকে, আবার কখনও বিপরীত অবস্থান ধারণ করে - একথা বহুল প্রচারিত। ভোর তিনটে তিরিশ নাগাদ বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান মিরাজ ২০০০ যখন নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বোমাবর্ষণ করে, তখন মনে হয় যেন একজন ভারতবাসী হিসেবে আমি সত্যিই গর্বিত। তবে এই প্রত্যাঘাত ভারতের নিরাপত্তার জন্য হওয়া উচিত, নির্বাচনে আসন বারাবার জন্য নয়।
বিভিন্ন মিডিয়া বিভিন্ন রকম খবর পরিবেশন করে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। একটা টিভি চ্যানেল জানায় ৩৫০জন জঙ্গি মৃত, আবার কোনও টিভি চ্যানেল দেখাচ্ছে ২৫০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছে ১০০ থেকে ২০০ জন জঙ্গি নিহত। বিবিসি আবার দাবি করছে মাত্র একজন আহত হয়েছে এবং কোনও নিহতের খবর নেই। কাকে বিশ্বাস করব আর কাকে বিশ্বাস করব না বোঝা খুব কঠিন। যদি ধরে নেওয়া যায় একজনও নিহত হয়নি তাতেও বায়ুসেনার গরিমা কোনও অংশে কমবে না।
প্রত্যাঘাত প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা নির্বাচনের আসন সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নয় [ছবি: এএফপি]
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাঘাত করা উচিত। কিন্তু এটাও ভাবা দরকার যে এই প্রত্যাঘাত যেন কোনও নিরীহ প্রাণ না চলে যায়। পাকিস্তানি জঙ্গিদের তৈরি করে - এ কথা আর নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই।
যারা সাংবাদিক সম্মেলন করে তথ্য দিয়েছেন যে ৩৫০জন জঙ্গি মারা গেছে তার কি সংখ্যাটা শুধুমাত্র আবেগ তাড়িত হয়ে বলেছেন? কে হিসাব দিল সংখ্যাটা ৩৫০? টিভি চ্যানেল বা খবরের কাগজগুলো এই সংখ্যাটা পেল কি করে ? এই তথ্যসূত্র অবশ্য খোলসা করে কেউই বলতে চাইছে না। আর, এখান থেকেই সন্দেহের তীর আরও সূচালো হয়।
বায়ুসেনা যে প্রত্যাখাত করেছিল সে কথা সমস্ত দেশি ও বিদেশি নিউজ চ্যানেলই স্বীকার করেছে। গরমিল শুধু সংখ্যাতে। রাজনৈতিক স্টান্ট দেওয়া খুবই সোজা কিন্তু সত্য স্বীকার করা অনেক কঠিন। সেনাবাহিনী ৩০০ জনের মৃত্যু সংক্রান্ত কোনও খবর পরিবেশন করেনি কিন্তু সংবাদমাধ্যম এটাও বলে দিচ্ছে যে কতজন জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে ছিল।
নিহত জঙ্গিদের সংখ্যাটা হিসেবে করল কে? [ছবি: রয়টার্স]
এ কথা স্বীকার করতে বাধা নেই যে পাকিস্তান জঙ্গিদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয়দাতা। যখন ৪২জন সিআরপিএফ জওয়ানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল তখন স্বাভাবিক নিয়মে পাকিস্তানের মত জঙ্গি মদদদাতারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে ভারত প্রত্যাঘাতে করবে। তা সত্ত্বেও, জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় না সরিয়ে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে রেখে দেবে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আবেগ তাড়িত হয়ে আমরা অনেক মিথ্যেকে সত্যি বলে দাবি করতে পারি। তাতে হয়তো সাময়িক শান্তি পাওয়া যায়।
কিন্তু বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে যখন যুক্তি আবেগকে আঁচর দেয় তখন আমরা সম্বিত ফিরে পাই। ইতিহাস কিন্তু এরকম বহু সাক্ষী রয়েছে।