পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বায়ুসেনার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক দেখিয়ে দিল মোদী সরকারের সাহস ও ক্ষমতা
সকলে যুদ্ধ-যুদ্ধ রব তোলার পরেও মোদী যুদ্ধ করেননি, তবে সিদ্ধান্ত নিতেও পিছুপা হননি।
- Total Shares
পাকিস্তান এটাই চাইছিল – এবং ভারতীয় বায়ুসেনা তাকে উপযুক্ত ভাবেই দিয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ইসলামাবাদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ কার-বোম নিয়ে হামলা করার দু-সপ্তাহের মধ্যেই ভারত সরকার সুদে-আসলে সব কিছু মিটিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করে ফেলল। প্রতিক্রিয়া এতটাই জোরালো ছিল যে ইসলামাবাদ তা আন্দাজও করে উঠতে পারেনি।
বহু বছর ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে হালকা-ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে আসছে পাকিস্তান – সব ধরনের আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি এবং দুই দেশের মধ্যে সাক্ষর হওয়া প্রতিটি শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করেই।
ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় ২০০-৩০০ জন পাকিস্তানি জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। (সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে)
সীমান্তের ওপার থেকে নিয়মিত ভাবে পাকিস্তান যে সন্ত্রাসে মদত দিয়ে এসেছে তাতে অসংখ্য সৈনিক ও বহু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তারা খেয়াল খুশি মতো হত্যা করেছে ভারতীয়দের।
ভারতে যত সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে সেই সব হামলার তদন্তেই ভারতীয় গোয়েন্দারা সেই সব সন্ত্রাসবাদীদের শিকড়ের সন্ধান পেয়েছেন পাকিস্তানে। এমনকি চরমতমন উস্কানি দেওয়ার পরেও ভারত চিরকালই ‘কড়ি নিন্দা’ (কঠোর ভাষায় সমালোচনা) করার চেয়ে বড় কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি।
এমনকি ২৬/১১-য় মুম্বাইয়ে জঙ্গি যে ঘটনায ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তখনও ভারত সরকার কিছুই করেনি, উল্টে পাকিস্তানের ফাঁদে পা দিয়ে সেই ঘটনায় ইসলামাবাদের কী যোগ ছিল তার প্রমাণ দিতে শুরু করে দিয়েছিল – যদিও ভারত ভালোভাবেই জানত যে পাকিস্তান কিছুই করবে না – এমনকি তাদের হাতে সব ধরনের প্রমাণ তুলে দেওয়ার পরেও।
যতই হোক, সন্ত্রাসবাদই হল পাকিস্তানের জাতীয় নীতি।
সমস্ত প্রমাণ ভারত তার সামনে পেশ করলেও, মুম্বই হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধান হাফিজ সঈদের বিরুদ্ধে কোনও কিছুই না করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান।
সব প্রমাণ পাওয়ার পরেও ২৬১১-র মূল চক্রী হাফিজ সঈদের বিরুদ্ধে কোনও রকম পদক্ষেপ করতে অস্বীকার করে পাকিস্তান। (সূত্র: টুইটার)
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে ভারতের নরম মনোভাব ক্রমেই পাকিস্তানকে আরও সাহসী করে তুলতে থাকে, তাতেই একেবারে বাঁধনহারা হয়ে ভারতের মাটিতে একের পর এক হামলা করতে থাকে পাকিস্তান।
পাকিস্তানে ভারতীয় বায়ুসেনার বারোটি মিরাজ ২০০০ এয়ারক্র্যাফ্ট ১০০০ কেজি বোমা ফেলেছে – এর অর্থ হল কঠোর প্রতিবাদ করার দিন শেষ হয়ে গেছে – এখন কঠোর পদক্ষেপ করার সময়।
পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪০ জন জওয়ান শহিদ হওয়ার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন যে পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভারতীয় সেনার তিন বিভাগকেই তাঁর সরকার পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করছে।
পাকিস্তানকে কড়া ভাবে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাসম্পন্ন এই নেতৃত্ব শুধুমাত্র ভারতের ১৩০ কোটি জনতাকেই অনুপ্রাণিত করবে না, মোদী নিজেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
দেশের মানুষ একজন শক্তিশালীকে নেতাকে চাইছিল বলেই তারা মোদীকে নির্বাচিত করেছিল – যে নেতৃত্ব পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের ভাষাতেই কথা বলেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নুয়ে পড়ে কথা বলেন না, এবং তিনি এমন একজন যিনি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে দায়বদ্ধ করে ক্ষান্ত হননি, একই সঙ্গে প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছে তাদের দায়বদ্ধ করছেন, সেই ভারতবাসী যারা সেনার কদর করে।
ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান আক্রমণের পরে রাজস্থানের চুরু থেকে মোদী ঘোষণা করেন, “দেশ এখন নিরাপদ হাতেই রয়েছে।”
এতদিন যাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধের দেশের নরম মনোভাব দেখে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন, এখন তাঁরা নিঃসন্দেহে নড়েচড়ে উঠবেন।
सौगंध मुझे इस मिट्टी की, मैं देश नहीं झुकने दूंगा... pic.twitter.com/XJkxa1HLQR
— Narendra Modi (@narendramodi) 26 February 2019
বিমানহামলা প্রমাণ করে দিয়েছে যে সরকার শুধু ফাঁকা আওয়াজ দেয়নি। যে বিমান হামলায় ২০০-৩০০ জন জঙ্গি মারা গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেটা ছিল ভারতের দিক থেকে সুসমঞ্জস উত্তর। যখন সকলেই যুদ্ধের জন্য সওয়াল করতে শুরু করেছেন ঠিক সেই সময় মোদী-প্রশাসন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ঠিক কাজটি করেছে – যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবে, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে নয়।
দেশের সাধারণ নির্বাচন ঘোষণার কয়েকদিন মাত্র আগে এই পদক্ষেপ নির্বাচনে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে পারে।
পুলওয়ামায় জঙ্গিহামলায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান মহেশ কুমারের বাবা রাজকুমার যাদব সরকারকে বলেছিলেন তাঁর সন্তানের মৃত্যুর কঠোর বদলা নিতে। তাঁর এই আর্তি লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দেখেছেন।
বায়ুসেনার এই হামলা হল সেনানির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে