কেরলের ওয়ানাড় থেকেও লড়বেন রাহুল গান্ধী, তা হলে আমেঠিতে তাঁর হার আশঙ্কা করছে দল?
লোকে চাইছে বলে নয়, আমেঠিতে হারের আশঙ্কা আছে বলেই ওয়ানাড় থেকে লড়ছেন
- Total Shares
কংগ্রেসের দুর্গ আমেঠি যে সিঁদুরে মেঘ দেখছে তার একেবারে প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি হল দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ২০০৪ সাল থেকে তিনি যে আমেঠিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়ে আসছেন তার পাশাপাশি তিনি কেরলের ওয়েনাড় থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
In addition to Amethi, UP, Congress President @RahulGandhi will also be contesting from Wayanad, Kerala, for the Lok Sabha
2019 elections.
— Congress (@INCIndia) 31 March 2019
তাঁর দল প্রচার করছে যে দক্ষিণ ভারতের তিন রাজ্য কেরল, তামিলনাড়ু ও কর্নাটক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রাহুল গান্ধীর কাছে অনুরোধ আসছিল, তবে সকলেই জানেন যে এক সঙ্গে দু’টি আসন ধরে রাখা যায় না। তাই নির্বাচনের ফল প্রকাশ হলে যদি দেখা যায় যে রাহুল গান্ধী দু’টি আসনেই জয়ী হয়েছেন, তা হলে তাঁকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হবে। ঘটনা হল, জাতীয় স্তরের যে কোনও নেতাই চাইবেন যে তিনি উত্তরপ্রদেশে যেন তাঁর পায়ের নীচে ভালো মতো মাটি থাকে, কারণ এই রাজ্যের ৮০টি আসন রয়েছে বলে দিল্লির মসনদের পথ তাঁর কাছে সুগম হবে।
সুতরাং জনপ্রিয় নেতা হিসাবে দক্ষিণ ভারতের অনুরোধ পেয়ে তারই জবাবে তিনি ওয়ানাড় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন নয়, আসলে তাঁর দল মনে করছে যে আমেঠিতে তাঁর পরাজয় ঘটলেও ঘটতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য দুর্গে এখন গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকারীর কাছে বেশ কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি।
২০১৪ সালে আমেঠিতে রাহুল গান্ধীকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি। (উৎস: পিটিআই)
বিজেপির মনে রাখা উচিত যে ১৯৯৮ সালে সতীশ শর্মাকে সঞ্জয় সিং পরাজিত করার পর থেকে আর কোনও দিনও আমেঠি আসনটিতে জয়ী হতে পারেনি, ১৯৯৯ সালে তাঁকে ওই আসনে পরাজিত করেন সনিয়া গান্ধী। পরে তিনি ওই আসনটি রাহুল গান্ধীকে ছেড়ে দিয়ে তার বদলে তিনি নিজে সরে যান রায়বরেলি আসনে।
পুরো বিজেপি নেতৃত্ব এখন আমেঠি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে যাতে মনস্তাত্বিক ভাবে রাহুল গান্ধীর উপরে চাপ সৃষ্টি করা যায়।
মার্চ মাসের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এই নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন যা যোগ করলে হবে ৫৩৮ কোটি টাকা, স্বভাবতই এটি স্মৃতি ইরানিকে প্রার্থী হিসাবে বেশ খানিকটা সুবিধা করে দেবে।
এর আগে আমেঠিতে জনসভা করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, সেখানে তাঁরা বুঝিয়েছেন যে কেন তাঁরা রাহুল গান্ধীর পরিবর্তে স্মৃতি ইরানিকে বেছে নেবেন।
২০১৪ সালে ইরানি রাহুল গান্ধীর কাছে স্মৃতি ইরানি পরাজিত হয়েছিলেন বটে, তবে তিনি তাঁকে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। রাহুল গান্ধী ১.০৭ লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০০৯ সালে ওই আসন থেকেই রাহুল গান্ধী ৩.৭০ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন।
বস্ততপক্ষে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজপার্টি (বিএসপি) তাদের জোটে কংগ্রেসকে সামিল করা হয়নি। যদিও এই দুই দল সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা আমেঠি ও রায়বরেলি কেন্দ্র দু’টিতে কোনও প্রার্থী দেবে না, এই দুই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন যথাক্রমে রাহুল গান্ধী ও সনিয়া গান্ধী। তবে বিএসপি-প্রধান মায়াবতী তাঁর আক্রমণের নিশানা থেকে কংগ্রেসকে ছাড় দেননি।
স্মৃতি ইরানির প্রবল প্রচারের ফলে এখন অমেঠি কেন্দ্রটি নিরাপদ বলে মনে করছেন না কংগ্রেস সভাপতি। (ছবি: এপি)
আচমকাই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে তাদের দলের সক্রিয় সদস্য বলে ঘোষণা করে দিয়ে কংগ্রেসও এই লড়াই আরও জোরদার করে দিয়েছে, কিন্তু দেশজুড়ে যে আচমকা জাতীয়তাবাদের হাওয়া উঠবে, সেই ব্যাপারে তখন কংগ্রেসের কোনও ধারনাই ছিল না। ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোটে আক্রমণের পরে হিন্দি বলয়ে এই হাওয়া উঠেছে।
উল্টোদিকে, স্মৃতি ইরানিও গত পাঁচ বছর ধরে আমেঠি কেন্দ্রে প্রবল ভাবে প্রচার করেছে।
এর ফলেই রাহুল গান্ধী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ওয়ানাড় থেকে তিনি লড়বেন এবং তাঁর এই সিদ্ধান্ত স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হয়ে লোকসভা থেকে দূরে থাকার মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়ানো ছাড়া অন্য কিছু নয়।
কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেস কর্মীদের মানসিক ভাবে অনেকটাই ম্রিয়মান করে দেবে কারণ তাঁরা মনে করতে শুরু করবেন যে এখানে দল পায়ের তলার মাটি হারাতে চলেছে।
ওয়ানাড় কেন
কেরলে ২০টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে লড়ছে কংগ্রেস। বাকি আসনগুলি তারা ছেড়েছে কেরলে তাদের জোটসঙ্গী ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউডিএফ) সদস্যদের।
ওয়েনাড় কেন্দ্রটি ২০০৯ সালে তৈরি হয়েছে। তার পরে দু-বারই এই আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। এখানে রাহুল গান্ধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সিপিআইয়ের পিপি সুনীরের বিরুদ্ধে।
যদি দক্ষিণ ভারতে দলের কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তা হলে এখান থেকে হয় সনিয়া গান্ধী নচেৎ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে তারা প্রার্থী করতে পারত। কংগ্রেস সভাপতির নিজের দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অর্থই হল যে দল আমেঠি আসনের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে